পাবনার ঈশ্বরদী শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরের প্রত্যান্তঞ্চল লক্ষ্মীকুন্ডার চরকুড়–লিয়া, চর গড়গড়ি, চরকাতরা ও গাফুরিয়া (কাবলিপাড়া)।
চারটি গ্রামে প্রায় ১৮-২০ হাজার মানুষের বসবাস। পেশায় প্রায় সবাই কৃষক। শান্তিপ্রিয় এসব মানুষের শান্তি নষ্ট করছে মাত্র ১৫-২০ জন দূষ্কৃতিকারী। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করার পর থেকেই এই চারগ্রামের মানুষের বসতবাড়ি, দোকানপাটে হামলা চালিয়ে ভাংচুর, লুটপাট ও জনসাধারণকে মারপিটসহ ছিনতাই করার ঘটনা মাঝে মধ্যেই ঘটছে। হামলার ভয়ে এখন এই গ্রামগুলোর অধিকাংশ পুরুষই এখন বাড়ি ছাড়া। আর এই সুযোগে বাড়িতে হামলা চালিয়ে মহিলাদের মারপিট, গরু, মহিষ, ছাগল লুট, দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাট করা হচ্ছে। হামলায় শিকার পরিবারের শিশু শিক্ষাথর্ীদের রাস্তায় দেওয়া হচ্ছে হুমকি। অস্ত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে দেখানো হচ্ছে ভয়ভীতি। বিদ্যালয়ে ক্লাস পরীক্ষা চললেও ভয়ে তারা বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। আবার সামনে ফাইনাল পরীক্ষা। সেই পরীক্ষাও দিতে পারবে কিনা সেই শংসয়ও দেখা দিয়েছে। বাড়ি, দোকানপাটগুলো দূবর্ৃত্তদের হিংস্রতার ধারালো অস্ত্রের স্মৃতি বহন করছে। বাড়ির মহিলা ভয়ে ও আতংকে মুখ খুলতে পারছে না।
গত (শনিবার) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রামগুলো ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। ভীতস্থ পরিবারগুলোর এখন প্রাণের একটাই দাবী বর্তমান সরকার যেন যৌথবাহিনী দিয়ে লক্ষ্মীকুন্ডার চরের এসব দূবর্ৃত্তদের দমন করে জনগণের শান্তি ফিরিয়ে দেন।
ভুক্তভোগিরা জানান, মৃত কেরাত আলী প্রামানিকের ছেলে ইয়াসিন প্রামানিক, আরিফ প্রাং,আতি প্রাং,মো. রকি, মো. রকিব, মো. হাশেম, মো. এনামুল, আকাত আলী, রিকাত আলী, মো. হ্যালন,বাবলু সরদার, মো.সুজাত, শিপুল, কুটি প্রাং, আবু মুসা ধুনাই ফকির, মামুন, মেহেদীসহ প্রায় ২৫-৩০ জন সশস্ত্র বাহিনী এসব হামলা চালিয়ে লুটপাট করেছে।
উপজেলার চরগড়গড়ি আনছার মোড়ের চায়ের দোকানদার রিজাই প্রামানিক, মুদিদোকানদার রফিকুল ইসলাম, স্যালুনের দোকানদার পরিতোষ সরকার বলেন, আমাদের দোকানে আওয়ামীলীগের লোকজন বসেন বলে গত শুক্রবার (৮নভেম্বর) দুপুর আনুমানিক দেড়টার দিকে একদল সশস্ত্র বাহিনী তার দোকানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তার দোকানসহ মোড়ের অন্যান্য ৭ টি দোকান ভাংচুর ও লুটপাট করে। মোড়ের লোকজনের বাড়িঘরের টিনের বেড়া কেটে ফেলেছে। আমাদের কিছুই বলার নেই। বললেই আবার হামলা ও মারপিটের শিকার হতে হবে।
বৃদ্ধা বিনা খাতুন, মোসলিমা বেগম বলেন, হামলাকারীরা আমাদের ১২-১৫ টি টিনের বাড়ির বেড়া কেটে ক্ষত বিক্ষত করেছে। আমাদের অপরাধ পরিবারের ছেলেরা আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। হামলাকারীরা প্রায়ই তাদের বাড়িতে এসে হামলা চালিয়ে পুরুষদের মারপিট করছে। এই কারণে এগ্রামের বাড়িগুলোতে পুরুষরা থাকতে পারছে না। এই সুযোগে হামলাকারীরা বাড়ি ও দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাট করছে।
চরকুড়–লিয়া গ্রামের ভুক্তভোগি ছানাউল্লাহর স্ত্রী বিনা খাতুন বলেন, দুপুরে জুম্মার নামাযের সময় বাড়ির পুরুষরা মসজিদে গিয়েছিল। এই সময় প্রায় ৩০-৪০ জনের একটি সশস্ত্রদল তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে তাদের আতংকিত করে। বাড়ির সামনের কয়েকটি দোকানপাটে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করে। এরপর হামলাকারীরা তাদের বাড়িতে ঢুকে ভাংচুর করে। গোয়ালঘর থেকে ৪ টি বড় সাইজের গরু নিয়ে যায়। সবুর আলী প্রামানিক বলেন, হামলাকারীরা আমাকে ও আমার ছেলে রাজিবকে মারপিট করে। বীরমুক্তিযোদ্ধা মুজাম আলীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে।
চরকুড়–লিয়া গ্রামের ভুক্তভোগি মো. ছানাউল্লাহ প্রামানিক বলেন, এব্যাপারে থানায় মামলা দায়েরের জন্য প্রস্তুতি চলছে।
ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম শহিদ বলেন, এ ব্যাপারে ভুক্তভোগিদের পক্ষ থেকে চরকুড়–লিয়া গ্রামের মৃত আক্কাস আলী প্রামানিকের ছেলে মো. ছানাউল্লাহ বাদী হয়ে গত শনিবার রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। অভিযোগটি তদন্ত করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। লুট হওয়া ৪ টি গরু উদ্ধার করে গরুর মালিকদের নিকট সোপর্দ করা হয়েছে বলেও জানান ওসি।
যাযাদি/এসএস