শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

পাইকগাছায় মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা

পাইকগাছা (খুলনা ) প্রতিনিধি
  ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৭:০০
ছবি: যায়যায়দিন

খুলনার পাইকগাছায় মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। মৃৎশিল্প এমন একটি মাধ্যম যা মাটিকে নিয়ে আসে মানুষের কাছাকাছি। মৃৎশিল্প বলতে মাটি দিয়ে তৈরী যাবতীয় ব্যবহার্য এবং সৌখিন শিল্প সামগ্রীকেই বোঝায়। শিল্প ও সংস্কৃতির বিভিন্ন মাধ্যমের মধ্যে মৃৎশিল্প অতি প্রাচীন। মাটির সাথে মানুষের জীবন ঘনিষ্ঠভাবে ভাবে জড়িয়ে আছে। মাটি যখন শিল্পের ছোঁয়া পায় তখন উঠে আসে ঘরে, সাজিয়ে তোলে আমাদের অন্দরমহল। সেই মাটির তৈরী সামগ্রী যখন ব্যাপক প্রসার লাভ করে তখন তার নাম হয় মৃৎশিল্প। কিন্তু কালের আবর্তনে বিলীনের পথে ঐতিহ্যবাহী এই মৃৎশিল্প। তবে পূর্বপুরুষের এই পেশা এখনও ধরে রেখেছেন কেউ কেউ।

খুলনার পাইকগাছায় মাটির তৈরী হাড়ি-পাতিল, থালা-বাসন, ফুলের টব, মাটির ব্যাংক, আগরদানি, মোমদানি, প্রদীপ দানি, বাচ্চাদের খেলনা সহ আরও অনেক ধরনের তৈজসপত্র দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে মাটির তৈরী এসব ব্যবহার্য সামগ্রীর চাহিদা দিন দিন কমে যাচ্ছে,সে কারণে বংশানুক্রমে পাওয়া এ পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের অসঙ্গতি আর জীবন-মান উন্নয়নের জন্য ক্রমশ অন্য পেশার দিকে ঝুঁকে পরছেন তারা। এমনকি মাটির তৈরী তৈজসপত্রের পর্যাপ্ত চাহিদা না থাকায় নতুন করে এ পেশায় কেউ প্রবেশ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, এ পেশার সঙ্গে জড়িতদের অধিকাংশই হিন্দু সম্প্রদায়ের। আবার কেউ কেউ জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের জন্য এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন।

উপজেলার বোয়ালিয়া পাল পাড়ার পাল বলেন, আমার বাপ-দাদার জাত ব্যবসা ধরে রাখার জন্য আমি ৩০ যাবৎ বছর এ পেশায় কাজ করছি। আমার পরিবারের আর কেউ এই পেশায় আসতে চাচ্ছে না। দিনে দিনে মাটির তৈরী জিনিসপত্রের চাহিদাও কমছে, বর্তমানে স্যানিটারি ল্যাট্রিনের চাক বা রিং বা কুয়ার রিং তৈরী করছি। মৃৎশিল্পী পাল বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ পেশার শিল্পীদের বাঁচিয়ে রাখতে এখনই সরকারি পৃষ্টপোষকতা প্রয়োজন। দেশের বিভিন্ন স্থানে মেলার ও প্রদর্শনীর আয়োজন করে মাটির জিনিসপত্রের প্রয়োজনীয়তা জনসাধারণের কাছে তুলে ধরা দরকার। তা না হলে মৃৎশিল্পীদের স্থান হবে শুধুই ইতিহাসের পাতায়।

পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, মৃৎশিল্পীদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, সমাজসেবা অধিদপ্তর সহ বিভিন্ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া ও ঋনদান কর্মসূচী সহ নানা পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। এই কর্মসূচী আরও বেগবান করার চেষ্টা করবে উপজেলা প্রশাসন। তাতে মৃতশিল্পে অনেকের আগ্রহ বাড়বে বলে আমি আশা করি।

যাযাদি/এসএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে