রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত থাকায় জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বেশ কিছু শিক্ষক বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণায় প্রায় তিন মাস ধরে যথারীতি চলমান থাকলেও বিদ্যালয়ে যোগ না দিয়ে তারা এখন আত্মগোপনে। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষা গ্রহণ বঞ্চিত ও শ্রেণি সমাপনী পরীক্ষার সিলেবাস সমাপ্তের অনিশ্চয়তায় পড়েছে শিক্ষার্থীরা।
প্রাথমিক থেকে কলেজ পর্যন্ত এমন চিত্র বিরাজ করছে মধুপুরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এমন আত্মগোপনে থাকা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের সংখ্যা অন্তত বিশ জন। ইতোমধ্যে এদের অনেকে অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে চিকিৎসা সুযোগের জন্য বর্তমান সভাপতি (সরকার নির্ধারিত) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ছুটির আবেদন করেছেন। অনুসন্ধানে বিভিন্ন সূত্র থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সরকারি একটিসহ উপজেলায় ৮টি কলেজ পর্যায়ের (উচ্চমাধ্যমিক) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। ৮টির মধ্যে দুটির অধ্যক্ষ সরাসরি আ.লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে তারা দু’জন আন্দোলনের বিপরীতে ভূমিকা রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে মধুপুরে তিনটি মামলা হয়েছে। ওইসব মামলার অপরাপর আসামির সঙ্গে ওই দুই অধ্যক্ষ আসামি হয়েছেন। এদের অন্যতম চাপড়ী গণ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা শফিকুল ইসলাম সবুজ একাধিক মামলার আসামি।
আউশনারা কলেজের অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান জুয়েল হয়েছেন এক মামলার আসামি। গ্রেপ্তার এড়াতে এই দুই অধ্যক্ষের সঙ্গে মামলার আসামি হয়ে আত্মগোপনে আছেন আউশনারা কলেজের প্রভাষক সালেহ আহমেদ, মনিরুজ্জামান মনি, মধুপুর মহিলা কলেজের প্রভাষক খন্দকার লাবু।
নাগবাড়ী তালিমুল দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাও. নোমানুর রহমানও আসামি হয়ে ফেরারি আছেন। আসামি হয়েছেন আলোকদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক নেতা আবুল কালাম আজাদ। তিনি উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কামরুজ্জামান খান ওরফে শামীম মাস্টার নামের এক শিক্ষক তিন মামলারই আসামি। তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। তার পরিবার সূত্র জানিয়েছে, তিনি বেশ অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য ছুটি নিয়েছেন।
ফাজিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সেলিনা প্রভাবশালী প্রতিপক্ষের হুমকির কারণে বিদ্যালয়ে যেতে পারেন না বলে অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, চাপের মুখে অসুস্থ না হয়েও তাকে ১৫ দিনের চিকিৎসা ছুটি নিয়ে পাঠদান থেকে বিরত থাকতে হয়েছে।
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুর রহমান জানান, কলেজ ও মাধ্যমিক পর্যায়ের একাধিক শিক্ষকের চিকিৎসা সংক্রান্ত ছুটির আবেদন আছে।
তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর যে শিক্ষক বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত তাদের তথ্য সংগ্রহ চলছে। ৫ নভেম্বরের মধ্যে হালনাগাদ চাওয়া হয়েছে। ১০ তারিখের মধ্যে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত ছকে তাদের তথ্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর জন্য কাজ চলছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুবায়ের হোসেন বলেন, শিক্ষকতা মহান পেশা। শিক্ষকদের পরিচয় একমাত্র শিক্ষক। তাদের রাজনৈতিক পরিচিতি শোভন নয়। সবাইকে শিক্ষকতায় ফিরে আসার আহবান তার।
যাযাদি/ এসএম