গৌরীপুরে ১৪৪ধারা জারির আবেদন
প্রকাশ | ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২০:৫৯
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের কেল্লাতাজপুর মৌজায় স্বামী দেওয়ান কাঞ্চন খানের ক্রয়কৃত ভূমি থেকে বিধবা স্ত্রী রোকেয়া বেগম জলিকে উচ্ছেদের পায়তারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ আশঙ্কায় রোকেয়া বেগম জলি বাদী হয়ে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৪ধারা জারির প্রার্থনার আবেদন দায়ের করেন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লুৎফুন্নাহার এর আদালত বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে নালিশী ভূমিতে বর্তমান দখলকারের দখল অক্ষুন্ন রেখে উক্ত ভূমি নিয়ে যাতে কোন শান্তি ভঙ্গ না ঘটে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জকে আদেশ প্রদান করেছেন। এ আদেশের প্রেক্ষিতে বিরোধপূর্ণ ভূমিতে ১৪৪ধারা জারি করা হয়। মামলায় কিল্লাতাজপুরের মৃত আব্দুল মালেক খানের ছেলে ফারুক আহম্মেদ খান ও খলিলুর রহমান খানকে আসামী করা হয়।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার কেল্লাতাজ মৌজার ১৬৫নং খতিয়ানের ৪৫২ দাগে ২৫শতাংশ ভুমি ১৯৯০সনের ৩০জানুয়ারি তারিখে ১৫৯১ এবং ১৫৯২নং দলিলমূলে একই গ্রামের মৃত আব্দুল মালেক খানের ছেলে আবুল কাওছার খানের নিকট থেকে দেওয়ান কাঞ্চন খান ক্রয় করেন। তবে ওই সময় দখলীয় জমিতে ২২শতাংশ ভূমি বুঝিয়ে দেয়া হয়। এর পর থেকে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে উল্লেখিত জমি ভোগদখল করে আসছেন। সম্প্রতি নেত্রকোনা বিশিউড়া-ঈশ্বরগঞ্জ সড়ক হওয়ায় দেওয়ান কাঞ্চন খানের ভোগদখলকৃত জমি থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা সেগুফতা মেহনাজ, কানুনগো মো. হেলাল উদ্দিন, সার্ভেয়ার মহিউদ্দিন আহম্মেদসহ কর্মকর্তাগণের স্বাক্ষরিত নোটিশে ৬.৭৫শতাংশ জমি অধিগ্রহণের বিষয়টিও নিশ্চিত করেন।
প্রতিবেশী সৈয়দ সমশের আলীর ছেলে সৈয়দ রফিকুল ইসলাম বলেন, এই জমিটা দীর্ঘদিন যাবত মাওহা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দেওয়ান কাঞ্চন খান চাষাবাদ করে আসছে। দেওয়ান কাঞ্চন খান এ জমি ক্রয় করার পর থেকে চাষাবাদ করছে। আমার বয়স ৬৫বছর আমি দেখছি প্রায় ৩০-৩৫বছর তারা ওই জমি ভোগদখল করে আসছে। গ্রামের অর্ধশত এলাকাবাসীও এ প্রতিনিধিকে সাক্ষ্য দেন যে, শুধু দেওয়ান কাঞ্চন নয়, এ জমি রেন-বন্ধক নিয়েও গ্রামের লোকজন চাষাবাদ করেছে। কিল্লাতাজপুর গ্রামে সৈয়দ ফজুল মিয়া (৭০) জানান, উনারা সব জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। ৪০/৫০ বছর আগে জমি বিক্রি করে দিয়ে, এখন সবার সঙ্গে নানা অজুহাত দেখাচ্ছে। প্রতিবেশী আরেক নারী বলেন, আমি কষ্ট করে জমি ক্রয় করেছি। জমিতে ঘরবাড়ি করে বসবাস করে আসছি। ফারুক আহম্মেদ খান ও খলিলুর রহমান খানের মাতা এ জমি বিক্রি করেছেন, সেই জমি দলিল করে দেয় নাই। এখন ৪০বছর পর এসে বাধা দিচ্ছে, জোরপূর্বক জমি দখলের চেষ্টা চলছে। প্রতিবেশী সৈয়দ মনির উদ্দিনের ছেলে সৈয়দ ওয়াহাব মিয়া জানান, সাবেক চেয়ারম্যান দেওয়ান কাঞ্চন খান মারা যাওয়ার পর থেকে এ জমি তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম জলি চাষাবাদ করাচ্ছেন। হঠাৎ করে শুনি, তারা জমি বিক্রি করে নাই। কিল্লাতাজপুর গ্রামের ফারুক আহম্মেদ খান ও খলিলুর রহমান খান জানান, জমি আমরা বিক্রি করি নাই। তারা যেখানে কিনেছে সেখানে তারা দখল নিবে। এ জমি জোরপূর্বক দেওয়ান কাঞ্চন খান দখল করে চাষাবাদ করছে। এ প্রসঙ্গে দেওয়ান মাসুদুর রহমান খান সুজন বলেন, উনারা সব জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। যে জমি বিক্রি করে বুঝিয়ে দিয়েছেন ৩৫বছর আগে, আমরা সেই জমিতেই আছি। উনারা এখন তালবাহানা করছেন। একই জমি একাধিক ব্যক্তির নিকট বিক্রি করে এলাকায় ঝগড়া বিবাদের সৃষ্টি করছেন।
এ প্রসঙ্গে মাওহা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আল ফারুক এর দেয়া প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ করেছেন, রোকেয়া বেগমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরজমিনে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বারকে সঙ্গে নিয়ে বিরোধপূর্ণ জমির উভয়পক্ষ ও এলাকাবাসীর গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে দালিলিক কাগজপত্র ও সাক্ষ্য-প্রমাণে প্রতীয়মান হয় যে, ১৯৯০সন থেকে দেওয়ান কাঞ্চন খান ১৬৫ খতিয়ানের ২৫শতাংশ ভুমি ক্রয় সূত্রে মালিকানাপ্রাপ্ত হইয়া শান্তিপূর্ণভাবে ভোগদখল করে আসছেন। উক্ত ভুমি আবু কাওছার খান স্বয়ং পৈত্রিক মালিকানায় প্রাপ্ত হয়ে সাফকাওলা দলিলমূলে বিক্রি করিয়া দখল বুঝিয়ে দেন। সেই থেকে দেওয়ান কাঞ্চন খান জীবনদ্দশায় ও তিনি ০৬/০১/২০২১খ্রি. তারিখে মৃত্যু বরণ করিলে, তাহার ওয়ারিশান হিসাবে স্ত্রী রোকেয়া বেগম শান্তিপূর্ণ ভোগদখল করে আসছেন। নেত্রকোণা টু ঈশ্বরগঞ্জ নতুন রাস্তা নির্মাণে ৪৫২দাগের ভুমি অধিগ্রহণে মালিকানা হিসাবে দেওয়ান কাঞ্চন খানের নামে একোয়ারভুক্তও হয়েছে।
যাযাদি/ এম