পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের রসায়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্র এসএম মিশকাত আহমেদ মিশু হত্যার ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও এই হত্যাকান্ডের কুলকিনারা না হওয়ায় ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন নিহত মিশুর পরিবার। ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর রাতে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে দূর্বৃত্তরা উপর্যুপরী ছুরিকাঘাত করে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এদিন সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে দূর্বৃত্তরা এই এই ঘটনা ঘটায়। মিশু পাবনা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম মোস্তফার ছেলে।
পরিবারের অভিযোগ, মিশুকে হত্যা করা হয়েছে পূর্বপরিকল্পিতভাবে। প্রথমে মিশু হত্যা মামলাটি পাবনা সদর থানা পুলিশ তদন্ত করে মূল আসামিদের বাদ দিয়ে দায় সারা চার্জশীট দাখিল করে। কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে আদালতে জমা দেয়া চার্জশীটের উপর নারাজি পিটিশন দায়ের করা হয়। পরে আদালত অধিকতর তদন্ত ও প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণে মামলাটি পিবিআই’র উপর ন্যাস্ত করে। পরিবারের অভিযোগ মিশু হত্যার ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে সঙ্কায় রয়েছেন।
নিহত মিশু’র বাবা কলেজ শিক্ষক সৈয়দ গোলাম মোস্তফা জানান, আমার সন্তানকে হত্যার পর অজ্ঞাতদের আসামী করে পাবনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করি। পুলিশ তদন্ত করে ৬ জনকে এই হত্যার সাথে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পায়। এই মামলার এক আসামী ইয়াছিন আলী রাহাতকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় সে। তার দেয়া স্বীকারোক্তিতে এই হত্যাকান্ডের সাথে তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকারের ছাত্র সংগঠনের এক প্রভাবশালী নেতা তাজুল ইসলাম এবং তার সহযোগী তসলিম হোসেন সেতুসহ তার অপর ৬ সহযোগী।
তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ অজ্ঞাত কারণে তদন্তে গ্রেপ্তার হওয়া রাহাতের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি মোতাবেক তদন্ত প্রতিবেদন না দিয়ে আদালতে দাখিলকৃত চার্জশীট থেকে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের ওই প্রভাবশালী নেতা তাজুল ইসলাম এবং তার সহযোগী তসলিম হোসেন সেতুর নাম বাদ দিয়ে দেয়। তিনি বলেন, দাখিলকৃত ওই চার্জশীটে আমি নারাজি পিটিশন দায়ের করি। আদালত চার্জশীট দাখিলের এক মাস পর মামলাটি অধিকতর তদন্তের স্বার্থে পাবনাস্থ পিবিআইয়ের উপর ন্যাস্ত করা হয়। পিবিআই দীর্ঘ তিনবছর তদন্তের নামে সময় ক্ষেপণ করে মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করে। বর্তমানে মামলাটি মন্থরগতিতে চলছে।
নিহত মিশকাতের মা লুৎফা শিরিন লুনা আবেগআপ্লুত হয়ে বলেন, আমার মিশুকে হারিয়েছি ৬ বছর হলো। আমার কলিজার ধর জানি ফিরবে না। তবে আমার মিশুকে যারা মেরেছে। সেই সব খুনীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক এটাই আমার চাওয়া। বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধানসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদন রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দীর্ঘ ৬ বছরেও মামলার কুলকিনার হয়নি। এবারে নিশ্চয়ই প্রভাবশালী খুনীসহ প্রকৃত আসামীদের আইনের আওতায় এনে কঠিন বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পাবনাস্থ পিবিআই কার্যালয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল জানান, মামলার অগ্রগতি যথেষ্ট সন্তোষজনক। সমস্ত টেকনিক্যাল বিষয়গুলো এবং পূর্ববতি তদন্ত প্রতিবেদন, জবানবন্দি সকল বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়েই এই মামলার তদন্ত শেষে আদালতে জমা দেয়া হয়েছে।