বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার কালিতলা নৌ-ঘাট হতে ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল করে বহুকাল হতে। এ নৌ-ঘাটে বছরের পর বছর ভোগান্তি বাড়লেও বাড়েনা যাত্রী সেবার মান। এ নৌ-ঘাটটির ভাড়া নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এ নিয়ে কাউন্টারে টিকিট মাস্টার ও যাত্রীদের মাঝে মধ্যই লাগে বাক-বিতণ্ডা ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কালিতলা খেয়াঘাট থেকে যমুনার ওপারের ১৬টি গন্তব্যে নৌকায় যাত্রী ও পণ্য পারাপার করা হয়।কালিতলা-মাদারগঞ্জ নৌ-ঘাট অনেক পুরানো। এ ঘাটে সকাল ১১টায়,দুপুর ২টায় ও বিকেল ৪ টায় যাত্রী বোঝাই নৌকা ছাড়ে যমুনা নদীর ওপাড়ে যাওয়ার জন্য।অপরদিকে সারিয়াকান্দির কাজলা ইউনিয়নের জামথল মাদারগঞ্জ ঘাটে থেকে আসে সকাল ৯ টা দুপুর ২ টা ও বিকাল ৪ টায় প্রতিদিন নিয়মিত।
কালীতলা ঘাট এবং ওপারের জামথল ঘাটের কয়েকজন নৌকার মাঝি ও যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কালীতলা ঘাট থেকে প্রতিদিন জামালপুরের মাদারগঞ্জ , দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, গুঠাইল, কাজীপুরের নাটুয়াপাড়া, গাইবান্ধার সাঘাটা ছাড়াও ওপারের কাজলা, জামথল, বোহাইল, মানিকদাইড়, চরঘাগুয়া, ডাকাতমারা, বোহাইল, ধারাবর্ষাসহ ১৬ রুটে যাত্রী ও পণ্যবাহী প্রতিদিন অন্তত ১৫০টি যাত্রীবাহী নৌকা এবং ১০০টি পণ্যবাহী নৌকা চলাচল করে। রোদ বৃষ্টি যাই হোক না কেন। বড় রকমের কারণ ছাড়া যাতায়াতে তেমন কোন হের ফের হয় না এ নিয়মের।
তবে যাতায়াতে প্রতিনিয়ত এ নৌ-পথে শ' শ'যাত্রীর দুর্ভোগের শেষ নেই। যাএীদের জন্য কোনো পাড়েই নেই যাত্রী ছাউনি। কালিতলা ঘাটে যাএীদের নাম মাএ টয়লেট থাকলেও।জামথল মাদারগঞ্জ ঘাটে তাও নেই। বিশেষ করে মহিলা যাএীদের এ ক্ষেত্রে কষ্টের শেষ থাকেনা। এছাড়াও খোলা নৌকায় যাএী পাড়াপাড় চলছে মান্ধাতার আমল থেকেই। রোদ, ঝড়,বৃষ্টি মাথায় নিয়ে চলতে যাএীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা একটু ভিন্ন রকমের। নৌকায় লাইফ জ্যাকেট নেই, জীবনের নিরাপত্তাও নেই।
মটর সাইকেল সহ অন্যান্য যানবাহন তোলার আধুনিক কোন ব্যবস্হা নেই এই ঘাটে। এ কারনে কুলিদের সাহায্য তোলা নামা করতে হয় মটর সাইকেল গুলো সেখানে একটি নিরব সিন্ডিকেট কাজ করে। তাদের বেধে দেওয়া টাকা দেওয়া ছাড়া যাত্রীদের আর কোন উপায় থাকে না। কয়েক কেজি ওজনের হাতে থাকা মালামালের জন্য ভাড়া গুনতে হয় যাত্রীদের । একবার নদী পাড়ের জন্য ৮০ টাকা দিতে হয় মাথাপিছু। কোনো যাত্রী জরুরী ভিওিতে যমুনা নদী পাড় হতে চাইলে মাথাপিছু ৫০ টাকা ভাড়া ইজারদারকে পরিশোধ করার পর অন্য নৌকায় যেতে হয়। ইজাদারদের নিদিষ্ট নৌকা বাদে অন্য নৌকা গুলোয় পারাপার হতে চাইলে যাত্রীদের দেড়শ থেকে তিনশ টাকা পর্যন্ত গুনতে হয় জনপ্রতি।
মঙ্গলবার দুপুরে কালিতলা ঘাটে নদী পাড়ের সময় মাদারগঞ্জের আনোয়ার বলেন,আমি ৮/১০ কেজি ওজনের বীজ আলুর দুইটি বস্তা নিয়ে এসেছি।এই দুই বস্তার জন্য আমাকে অতিরিক্ত ৬০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়েছে।এত অনিয়ম, দুর্নীতি দুর্ভোগ এই ঘাটে। এত সমস্যা এ ঘাটে কিন্তু দেখার কেউ নাই।
মাদারগন্জের আরেক ব্যবসায়ী ধীমান দও বলেন,আমি ঘাটের নৌকায় যাব না, ঠিক আছে। অন্য নৌকা যেতে আমাকে ঘাটের ভাড়া পরিশোধ করতে হবে কেন? এই ঘাটের শত শত যাত্রী ঘাটের এসব ইজারাদারদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে।একদিন আমি আসতে আসতে ঘাটের নৌকা ছেড়ে দেয় এরপর আমি একটি নৌকার মাঝিকে বললে সে বলে নিয়ে যাবো ২ হাজার টাকা লাগবে।সে সময় আমার কাছে এত টাকা না থাকার কারনে একটি জরুরী কাজ থাকার পরেও ওপার আমি যেতে পারিনী এর কি কোন সমাধান নেই? প্রায় ২ ঘন্টা পরে সিরিয়ালের নৌকায় মাদারগঞ্জ গিয়েছি।
সারিয়াকান্দি উপজেলার টেংরাকুরা চরের রশিদ মন্ডল বলেন, আমি চাকরী করি বগুড়ায় বৃহস্পতিবার ওপারে বাড়ীতে যায় বিকেলের নৌকায়, আবার শনিবার বিকালে চলে আসি। সময়ের একটু এদিক ওদিক হলেই আমাকে বাড়িতে যেতে যে টাকা দিতে হয় নৌকায় ঐ টাকা দিয়ে ঢাকায় যাওয়া যাবে। এসবের কি আসলে কোনও সমাধান নেই সরকার আসে যায় এসব হয়রানিতো কমেনা।
এ ব্যাপারে ঘাটের ইজারাদার শাজাহান মোল্লা বলেন,ঘাটের ইজারা আমার নামে নেওয়া আছে কিন্তু আমি এসব দেখাশোনা করিনা। আমার আরও পার্টনার যারা আছে তারাই এসব দেখে আমি আমার অন্য ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকি সব সময়। ওদেরকে বললেই আপনার প্রশ্নের সঠিক উওর দিতে পারবে।
আরেক ইজারাদার তাজ বলেন,ঘাটের ইজারা মুল্য '২১ সালে ছিলো প্রায় ৭৩ লাখ টাকা, '২২ সালে ৯৭ লাখ, ২৩ সালে সে ঘাটের ডাক হয়েছে ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ২৪ সালেও ১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা দিয়ে ঘাট নিয়েছি আমরা ভাড়া বেশি নিচ্ছি না। নিয়ম মেনেই ভাড়া নিচ্ছি। যাত্রী
ছাউনি কথা জেলা পরিষদে জানানো হয়েছে। জেলা পরিষদ ঘাট ইজারা দেওয়ার পরেতো আর কোনও খোজ খবর নেয়না। এই যে দেখেন এখন নদীর পানি কমতে শুরু করেছে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে নদীর ডুবো চরে নৌকা আটকে যাবে সেগুলো খনন করা কথা জেলা পরিষদের থাকলেও তাদের কে বারবার মৌখিক ও লিখিত ভাবে জানালেও তারা কোনও পদক্ষেপ গ্রহন করেনা। বাধ্য হয়ে আমাদেরকে অতিরিক্ত ৮ থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত খরচ করে নদী নৌকা চলাচলের পথ স্বাভাবিক রাখতে হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মো.শাহ নেওয়াজ বলেন,বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে এই ঘাটটি নিয়ে । তবে গণমাধ্যমে বিস্তারিত এখনি বলতে চাননি তিনি।
যাযাদি/ এম