মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১

সখীপুরে যৌন হয়রানির অপবাদ সইতে না পেরে শিক্ষকের আত্মহত্যা

সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
  ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:৪৯
ছবি: যায়যায়দিন

টাঙ্গাইলের সখীপুরে নূরুল ইসলাম (৬০) নামের এক শিক্ষক যৌন হয়রানির অপবাদ সইতে না পেরে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার ভোররাতে উপজেলার বড়চওনা ইউনিয়নের দাড়িপাকা গ্রামে ওই শিক্ষক নিজ বাড়ির রান্না ঘরে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করে। মঙ্গলবার সকালে বাড়ির লোকজন রান্না ঘরে ঝুলন্ত লাশ দেখে এবং পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে টাঙ্গাইল মর্গে পাঠিয়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন জানান, দাড়িপাকা গ্রামের মৃত আমজাদ হোসেনের ছেলে ও দাড়িপাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ছিলেন নূরুল ইসলাম (৬০)। তিনি ওই বিদ্যালয়ে ২৬ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন। এর আগে গত ২৭ আগস্ট স্কুল আঙ্গিনায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির অভিযোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে তদন্ত কার্যক্রম চলমান ছিল।

মেয়ে নিপা আক্তার জানান, বাবার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ দল বারবার য়ড়যন্ত্র করে ব্যর্থ হয়েছে। সরকার পতনের সুযোগ নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা যৌন হয়রানির মতো স্পর্শ কাতর মিথ্যা অপবাদ দেয়। আমার বাবা বয়সী মানুষ, বাবার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ এই এলাকায় কোনো মানুষকে বলতে শুনিনি। ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দলের ব্যানারে থাকা স্থানীয় দাড়িপাকা উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকরিচ্যুত প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন, স্থানীয় হামিদুল, খায়রুলসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেন। বাবার কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চাওয়া হয়েছিল জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বাবা সব ঘটনা আমার কাছে বলে গেছেন। স্থানীয় দুটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দিয়ে বাবার বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করিয়েছে জানিয়ে দোষীদের খুঁজে বের করে দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। স্ত্রী নাজমা বেগম বলেন, তার স্বামীকে স্থানীয় একটি প্রতিপক্ষ দল মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ফাঁসানোর জন্য বহুবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। ঘগযন্ত্রকারীরা বিভিন্ন সময়ে হুমকি ধামকি দিতো। স্বামী ফাঁসিতে মারা গেলেও তিনি আইনিভাবে স্বামী আত্মহত্যার পিছনে জড়িত দোষীদের ফাঁসি দাবি করেন।

এলাকাবাসী জানান, নূরুল ইসলাম একজন ভালো মানের শিক্ষক ছিলেন। তিনি সহজ সরল মানুষ সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। শিক্ষক হিসেবে তার সুনাম রয়েছে। এসব অভিযোগর সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি জানিয়ে আত্মহননের প্ররোচনার পিছনে যারা রয়েছে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন তারা। ওই বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা দোষীদের দ্রæত গ্রেফতার ও তাদের শাস্তি দাবি করেছেন।

যৌন হয়রানির অপবাদ সইতে না পেরে মনের ক্ষোভে আত্মত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলে পরিবার ও এলাকাবাসী জানিয়েছেন।

প্রধান শিক্ষক বুলবুল আহমেদ বলেন, স্কুল প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি একজন ভালো শিক্ষক ছিলেন জানিয়ে এ ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবি ছিল তাদেরও। (আজকে) মঙ্গলবার তদন্তের টিম বিদ্যালয়ে আসার কথা ছিল; এর আগেই শিক্ষক আত্মহননের পথ বেছে নিলেন।

উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতা ইব্রাহিম খলিল বলেন, শিক্ষক নূরুল ইসলামের আত্মহননের প্ররোচনার নেপথ্যে যারা পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত রয়েছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। তিনি শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের দায়িত্বে থাকা মোরাদ হোসেন খান বলেন, শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ আসে। অভিযোগপত্রটি জেলা শিক্ষা অফিসে দেওয়া হয়। জেলা শিক্ষা অফিস থেকে সদরের শিক্ষা অফিসারকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। এ তদন্ত কমিটি সম্প্রতি তদন্তের রিপোর্ট দেন। ওই শিক্ষক এ রিপোর্টের আপত্তি জানালে জেলার দেলদুয়ার উপজেলর শিক্ষা অফিসারকে প্রধান করে এক সদস্যের আরো একটি পুন:তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত তদন্ত কমিটি (আজ) মঙ্গলবার ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তদন্তের কাজে যাওয়ার কথা ছিল। ওই শিক্ষক অনুমোদিত মেডিকেল ছুটিতে ছিলেন।

থানার ওসি জাকির হোসেন বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ টাঙ্গাইল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

যাযাদি/এসএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে