কালিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ধুঁকছে চিকিৎসক ও জনবল সংকটে
প্রকাশ | ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:৫১
নড়াইলের কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন যাবত চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসকের পদ, নার্সসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর জনবল সংকট থাকায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন দায়িত্বরত চিকিৎসক এবং রোগীরা।
এতে উপজেলার দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। সরকারি খরচে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে বেসরকারি ক্লিনিক মুখী হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা ২ লাখ ৪৩ হাজার মানুষের একটি বড় অংশ চিকিৎসা সেবা প্রত্যাশা করেন ৫০ শয্যা বিশিষ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কালিয়াতে। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই গুরত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে চলছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর জনবল ও চিকিৎসক সংকট।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক পদ ২১টি আছে ১২ জন। চিকিৎসক সংকটের সঙ্গে রয়েছে নার্সসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকট। নার্সের পদ ৩৭টি আছে ২৫ জন, তৃতীয় শ্রেণীর ২৮টি পদে আছে ১৮ জন, চতুর্থ শ্রেণীর মোট ৩৬টি পদে জনবল আছে মাত্র ৬টি ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন দায়িত্বরত চিকিৎসক এবং রোগীরা।
উপযুক্ত ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা সেবা না পেয়ে অনেকেই চলে যাচ্ছেন আশপাশের প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা।
একসময় সিজার ও অপারেশন হলেও এখন তা বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ রোগীদের। এতে করে প্রাইভেট ক্লিনিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি প্রাণঘাতীর ঘটনাও ঘটছে।
অচল হয়ে পড়ে আছে এক্সরে মেশিন।
সালামাবাদ ইউনিয়নের বৌদ্দপটি গ্রামের দাউদ আলী শিকদার বলেন, আমি স্টকের রোগী দেড় মাসের মত হলো ডাক্তারের অভাবে ভালো কোন চিকিৎসা পাচ্ছি না, আজকে দেড় ঘন্টা হলো অপেক্ষা করছি শুধু আমি না আরও অনেকে অপেক্ষা করছে ডাক্তার নাই সেবা পাচ্ছি না, যদি ডাক্তার থাকে সেবা পাই তাহলে সকলের জন্য ভালো হয়।
কাঞ্চনপুর গ্রামের সত্তর বছর বয়সের আব্দুর রউফ মোল্যা বলেন, আমার হাতের ব্যাথার জন্য আইছি ডাক্তার পাচ্ছি না চিকিৎসা কারে দিয়া করাবো।
বড় কালিয়ার মুসলিমা বলেন, আমার প্রেসার ডায়াবেটিস রোগ ডাক্তার দেখাতে আসছি, ডাক্তার পাচ্ছি না, এমনিতেই অসুস্থ দাড়িয়ে থেকে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি, কিন্তু ডাক্তার পালি দেখায়ে বাড়ি চলে যাতি পারতাম।
চাদপুর গ্রামের জিল্লুর রহমান বলেন, আমি পেটের ব্যাথার জন্য ভর্তি হই দুই দিন হলো প্রাথমিক চিকিৎসা পেলেও ঔষধ পাচ্ছি না। বাথরুমের অবস্থা খুবই খারাপ নোংড়া।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ হাসিব বলেন, জনবল সংকটের কারণে আমরা খুবই বিপাকে আছি। এতগুলো পদে লোকবল না থাকায় রোগীর সঠিক সেবা দেওয়া ও ব্যাহত হয়। তারপরও আমরা চিকিৎসা সেবা দিতে সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু কিছু পদে লোক না থাকায় চাইলেও সঠিক সেবা দেওয়া যায় না।
তিনি বলেন, নিয়মিত অর্ধ-শতাধিকের বেশি ভর্তি রোগীসহ বহির্বিভাগে ৪৫০ জনের মতো রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু চিকিৎসক স্বল্পতার কারণে তাদেরকে চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। তার পরও চেষ্টা করা হচ্ছে সাধারণ মানুষ যেন চিকিৎসা নিতে এসে ফিরে না যায়।
ডা. পার্থ প্রতীম বিশ্বাস, আরএমও(ভারপ্রাপ্ত) বলেন, ৫০ বেডের হাসপাতাল হলেও তার বেশি রোগী থাকে, আউট ডোরে প্রতিদিন ৪৫০ জনের মত রোগী আশে তাদের সেবা দিতে ডাক্তার সংকটের জন্য আমাদের ডিউটি আওয়ারে বেশি সময় দিয়ে চাপের মধ্য দিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আবদুর রশিদ বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসক পদ ২১ টি আছে ১২ জন, নার্সের পদ ৩৭টি আছে ২৫ জন, চতুর্থ শ্রেণীর পদ রয়েছে ৩৬টি, চতুর্থ শ্রেণীর মোট জনবল আছে মাত্র ৬ জন। অন্যদিকে তৃতীয় শ্রেণীর ২৮টি পদ আছে ১৮ জন। জনবলের সংকট না থাকলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার পত্র পাঠানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত শূন্য পদের অনুকূলে কোনো জনবল পাওয়া যায়নি। ডাক্তার ও জনবল সংকট নিয়োগের জন্য বারবার চিঠি দিয়ে যাচ্ছি। নিরসন হলে সাধারণ রোগীদের সেবার মান বাড়বে।
সিভিল সার্জন নড়াইল ডাঃ মোঃ আব্দুর রশিদ বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কালিয়ায় চিকিৎসক ও জনবল সংকটের বিষয়টি আমি অবগত আছি। এব্যাপারে দ্রুত সমাধান হবে বলে আশা করছি।
যাযাদি/এসএস