চিকিৎসক সংকটে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

প্রকাশ | ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৪:৩৮

মো. ইব্রাহিম, মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
ফাইল ছবি

সাধারণ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ জনবল সংকটের কারণে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানে ৩৭ জন ডাক্তারের মধ্যে রয়েছেন মাত্র ১৭ জন। এর মধ্যে ১-২ জনকে আবার ট্রেনিং, সভা-সেমিনারসহ দৈনিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকতে হয় বলে তারাও রোগী দেখার সময় পান না। ফলে তাৎক্ষণিক সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ছেন ভুক্তভোগিরা। অপ্রত্যাশিত শারীরিক জটিলতায় অনেক সময় রোগীর জীবন বিপন্ন হওয়ার আশংকা দেখা দিচ্ছে। 

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাধারণ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ ৩৭টি। তার মধ্যে ১২টি পদ শূন্য, একজন বিশেষজ্ঞ সহ ৪ জন রয়েছেন প্রেষনে, ৪ জন আবার বিনা অনুমতিতে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত। ফলে হাসপাতালে উপস্থিত আছেন মাত্র ১৭ জন চিকিৎসক। 

অন্যদিকে এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে জনসংখ্যা প্রায় ৯ লাখ ৩৪ হাজার ৮৮০ জন। সে হিসাবে এ উপজেলায় প্রতি ৫৪ হাজার ৯৯৩ জন মানুষের বিপরীতে চিকিৎসকের সংখ্যা মাত্র একজন। জনগণের আনুপাতিক হারে ভাগ করলে ১৮ হাজার ৬৯৮ জন মানুষের বিপরীতে হাসপাতালে বেড মাত্র একটি। এবং মুরাদনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর তুলনায় অন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জনগন অর্ধেক সেক্ষেত্রে ওষুধ সামগ্রী এবং ভ্যাট ও বিছানা যা পাওয়া যায় সেটি দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে  বাড়তি সংকটে পড়তে হয়। আর এস্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য অত্যন্ত কম হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে ওষুধ সহ অন্যান্য সামগ্রী রোগীকে দিতে বেগ পেতে হয়। 

খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ অনুযায়ী শুধু মেডিসিন, কার্ডিওলজি, গাইনী, এনেস্থেসিয়া, শিশু ও অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসক রয়েছেন। দীর্ঘদিন যাবত নেই সার্জারি, ইএনটি (নাক-কান-গলা), অপথালমোলজি (চোখ), ডার্মাটোলজি (চর্ম) রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। না থাকার ফলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে অন্য রোগের বিশেষজ্ঞ কে দিয়ে সেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। 

এদিকে আবার গ্রামের তৃণমূল মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে ২২টি ইউনিয়ন পরিষদের জন্য ২২ জন ডাক্তারের কথা থাকলেও আছেন মাত্র তিনজন। তার মধ্যে নবীপুর পূর্ব ইউনিয়নের একজন বাদে বাকি দুইজনও আবার চিকিৎসক সংকটের কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই রোগী দেখেন।

চিকিৎসা সেবা নিতে আসা শিক্ষক বেলাল উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, ডাক্তার কম থাকায় আমাদেরকে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। দূর-দুরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অনেক ভোগান্তি হচ্ছে। বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের ভোগান্তিটা একটু বেশি হয়। আবার অধিকাংশ সময়ে এখানে রোগীর ভর্তির ক্ষেত্রে বেড পাওয়া যায় না, তাই ফ্লোরে শুয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হয়। ডাক্তার বেশি থাকলে ও বেডের সংখ্যা যদি বাড়ানো হতো তাহলে আমরা আরো উপকৃত হতাম। তাছাড়া শুনেছি দীর্ঘদিন ধরে নাকি এখানে সার্জারি, চর্ম, নাক-কান-গলা ও চোখের জন্য কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই। যেসব পদে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই সে সকল পদে চিকিৎসক দেওয়া জন্য কর্তৃপক্ষ দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এ ব্যাপারে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এনামুল হক বলেন, এখানে রোগীর আনুপাতিক হারে মেডিক্যাল অফিসার ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তারপরও আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী রোগীদের সেবা দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। এই হাসপাতালে সার্জারি বিশেষজ্ঞ না থাকার কারণে অধিকাংশ সময় আমাদের সার্জারির রোগীদের সেবা দিতে খুব বেগ পেতে হয়।

তিনি আরো বলেন, বহিঃবিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৭ থেকে ৮ শতাধিক এবং অন্তঃবিভাগে সব সময় ৬৫ থেকে ৭০ জন রোগী ভর্তি থেকে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। এছাড়াও জরুরি বিভাগে দৈনিক ৭০ থেকে ৮০জন রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। কখনো কখনো এ সংখ্যা শতাধিকে গিয়ে দাঁড়ায়। পর্যাপ্ত চিকিৎসক এবং পর্যাপ্ত শয্যার ব্যবস্থা হলে কোন রোগীকেই আর শহরমুখি হতে হবে না।

যাযাদি/ এসএম