বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শরতের অনুভূতি ধুয়ে নিচ্ছে হেমান্তের শিশির

ভোরে বেদনা বুকে নিয়ে ঝরে শিউলি ফুল
হাসমত আলী, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি
  ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৪:২৯
ছবি: যায়যায়দিন

শরৎ গিয়ে প্রকৃতিতে বিরাজ করছে হেমান্ত। তবুও চারপাশে তার রাজত্ব। বলছি সাদা বসন আর জাফরান রঙে মোড়া শুভ্রকুমারী শিউলি ফুল। অতি সাধারণ এক ফুল শিউলি। রাতের আঁধারে নিজের রূপ পুরোটা ছড়িয়ে, বাতাসে বিলিয়ে দেয় নেশা লাগানো সুবাস। শিশির ভেজা সকালে ঝরে থাকা শিউলি ফুলের অপূর্ব দৃশ্য গ্রামের পথে প্রান্তরে ও বসতবাড়িতে দেখা যায়। শিউলি ফুলের সৌন্দর্য আর মিষ্টি ঘ্রাণে বাগান, উন্মুক্ত স্থান ও বসতবাড়ির আঙিনা মেতে ওঠে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিংবা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও মুগ্ধ হয়েছেন শিউলির রূপে। লিখেছেন অনেক গান ও কবিতা।=

শিউলি ফুল রাতে ফুটে বলে একে রাতের রানিও বলা হয়। শিউলি ফুলকে 'দুঃখের ফুল' বলা হয়। দিনের আলোতে এ ফুল তাদের উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলে। শিউলিকে অনেকে শেফালী নামে ডাকে। এটি রাতে ফুটে সকালেই ঝরে যায়। শিউলি ফুলের সৌন্দর্য আর মিষ্টি ঘ্রাণে বাগান, উন্মুক্ত স্থান ও বসতবাড়ির আঙিনা মেতে ওঠে। সকালে শিশিরমাখা শিউলি ফুল দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। গ্রামের ছোট ছোট মেয়েরা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে শিউলি কুড়াতে যায়। সবুজ পাতার মধ্যে এক-একটি শিউলি ফুল ভালোবাসা ছড়িয়ে দেয় সৌন্দর্যের। কোনো কোনো ধর্মের বিশ্বাস শিউলি স্বর্গের ফুল। এই ফুল নিয়ে এমন গল্প আছে- এক রাজকুমারী সূর্যকে ভালোবেসে না পেয়ে আত্মহত্যা করে ফুল গাছে পরিণত হয়। সকাল বেলায় যেন সূর্যের মুখ না দেখতে হয়, তার জন্য সূর্য উঠার আগেই ঝরে পড়ে গাছ থেকে। রাজকন্যার নাম ছিল পারিজাতিকা। এ জন্য শিউলির আরেক নাম পারিজাত। তবুও অনাদর-অবহেলায় বেড়ে ওঠা শিউলি ফুলের গাছ চোখে পড়ে মাঝে মধ্যেই। তাইতো এখনো শিউলি তলা ভোর বেলা পলিস্ন বালিকারা ফুল কুড়াতে ভিড় জমায়।

পুরাণের সে স্বর্গের ফুল হোক কিংবা রাজকন্যা পারিজাতের পরাজিত প্রেম- শিউলির প্রতি আমাদের ভালোবাসা থাকবে সবসময়। হয়তো কোনো নারী শিউলির মালা গুঁজে দেবেন খোঁপায় কিংবা কোনো তরুণ খুব ভোরে শিউলি কুড়াবে প্রিয়তমার জন্য।

দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, শিউলির ছয়টি শুভ্র সাদা পাপড়ি। বৃন্তটি কমলা রঙের টিউবের মতো। এটি নরম ধূসর ছাল বা বাকলবিশিষ্ট হয়। গাছ লম্বায় ১০ মিটারের মতো হয়। গাছের পাতা ৬ থেকে ৭ সেন্টিমিটার লম্বা এবং সমান্তরাল প্রান্তের বিপরীতমুখী সাজানো থাকে। সৌন্দর্য উপভোগ ছাড়াও শিউলির আরও ব্যবহার আছে। ফুলটির বোঁটাগুলো শুকিয়ে গুঁড়ো করে হালকা গরম পানিতে মেশালেই তৈরি হয় চমৎকার একটি রং। এ ছাড়া বিভিন্ন ওষুধ তৈরিতে শিউলির বীজ, পাতা ও ফুল ব্যবহার করা হয়।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে