সিরাজগঞ্জে ৬৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনা নদীর ডানতীর রক্ষা বাঁধ নির্মান প্রকল্পে ধীরগতি

প্রকাশ | ০২ নভেম্বর ২০২৪, ২০:২৫

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুর থেকে শাহজাদপুর উপজেলার হাটপাচিল পর্যন্ত ৬৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মানাধীন সাড়ে ৬ কিলোমিটার যমুনা নদীর ডানতীর রক্ষা বাঁধ নির্মান প্রকল্পে ধরিগতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ২০২১ সালের জুনে একনেকে এ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর ছোট-বড় ৩৭টি প্যাকেজে এ প্রকল্পের টেন্ডার করে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড। ২০২২ সালের মার্চে তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। মেয়াদ শেষ হওয়ায় ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়েছে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পে এ ৪১১ কোটি টাকা প্রাপ্ত বরাদ্ধের মধ্যে ২৮১ কোটি টাকা ঠিকাদারদের বিল প্রদান করা হয়েছে। এ প্রকল্পে নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে সাড়ে ৬ কিলোমিটার এলাকায় নদীর তীর সংরক্ষণ, বøক নির্মান, বøক সেটিং, এনায়েতপুর ও বেতিল স্পার বাঁধ মেরামতের কথা রয়েছে।

এ অবস্থায় বুধবার (৩০ অক্টোবর) সরজমিন গিয়ে প্রকল্পের কাজ নিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের দাবী সঠিক সময়ে ঠিকাদাররা কাজ না করায় এ অঞ্চলে হাজার বিঘা আবাদি জমি, শত শত বসবতবাড়ি ও অন্তত: ৩০টি স্কুল, কলেজ, মাদ্রসা নদীগর্ভে বিলীণ হয়েছে। এ বাঁধ নির্মানে স্থানীয়রা বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসুচি পালন করলেও কর্তৃপক্ষ কোন কর্ণপাত করেনি। ৩০ অক্টোবরও নদীতীরের সৈয়দপুর পূর্বপাড়া কবরস্থানের কাছে স্থানীয় বাসিন্দা ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করেন।   

জালালপুর ইউনিয়নের সৈয়দপুর পূর্বপাড়ার বিধবা রাবেয়া খাতুন বলেন, নদীভাঙ্গনের কারনে বাড়িঘর বিলীণ হয়ে যাওয়া এখন অন্যের বাড়িতে আশ্রয়ে থাকি। স্বামী মারা গেছে। ৪টি ছেলে-মেয়ে নিয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনমতে দিন চলে যাচ্ছে। ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করলে চোখেমুখে অন্ধকার দেখি।  স্থানীয় জালালপুর ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ওসমান গণি জানান, গত ৩/৪ বছরে যমুনা নদীর প্রায় ৪ মাইল এলাকা ভেঙ্গে বিলীন হয়ে নদী গ্রামের দিকে চলে এসেছে। ইতোমধ্যে হাটপাচিল, ভেকা, সৈয়দপুর, পাকরতলা, বাঐখোলা, রঘুনাথপুর, ঘাটাবাড়ি, জালালপুর ও রুপসী গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। প্রকল্পের কাজে তীরগতির কারনে এমন অবস্থা হয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার অপু তাঁর পছন্দের লোকজনকে কাজ দিয়েছিল। প্রকল্পের অনেক গ্রæপের কাজ এখনও শুরুই হয়নি। অথচ ঠিকাদাররা কোন কাজ না করেই মোটা অংকের টাকা বিল উত্তোলন করে নিয়েছে।

স্থানীয় শিক্ষক আব্দুল হান্নান বলেন, গত কয়েক বছরে এনায়েতপুর থেকে পাচিল পর্যন্ত এলাকার অন্তত: ৩০টি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীণ হয়েছে। নদীতীরের শত শত বিঘা আবাদি জমি ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভাঙ্গণ ঝুকিতে রয়েছে।

স্থানীয় হাজী আব্দুস সালাম জানান, নদীতে পানি কমতে শুরু করায় নদীতীরে নতুন করে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এ নিয়ে নদীতীরের মানুষের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। দীর্ঘদিনের পুরাতন সৈয়দপুর পূর্বপাড়া কবরস্থানটি নদী থেকে মাত্র ১০ হাত ধুরে রয়েছে। এখানে আমাদের বাপ-দাদার কবর রয়েছে। আশপাশে আর কোন কবরস্থান নেই। এই কবরস্থানটি নদীতে বিলীন হলে মৃত মানুষকে কবরস্থ করার জন্য আমাদের আর কোন জায়গা থাকবে না।    

এ বিষয়ে জালালপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, এখানে প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে কোটি কোটি টাকা হরিলুট করা হয়েছে। কিছু কাজ করা হলেও তা পুনরায় নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীণ সরকারের কাছে প্রকল্পে লুটপাটের বিষয়ে তদন্তপূর্বক অভিযুক্ত ঠিকাদার ও অফিসের স্টাফদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী করেন তিনি।

নদী বাচাঁও আন্দোলনের শাহজাদপুর উপজেলার সভাপতি ফারুক রেজা বলেন, গত কয়েক বছরে নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বসতবাড়ি ও আবাদি জমি হারিয়ে এ অঞ্চলের হাজারো মানুষ নিঃম্ব হয়ে গেছে। ঠিকাদাররা প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে কোটি কোটি টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করেছে। প্রতি নিয়ত নতুন নতুন এলাকা ভাঙ্গনের কবলে পড়ছে। এ অবস্থায় দ্রæত বাঁধ নির্মান এবং অনিয়ম ও লুটপাটে জড়িতদের শাস্তি দাবী করেন তিনি।  

এবিষয়ে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী  মোঃ মোখলেসুর রহমান বলেন, স্থানীয়দের  কাজের ধীরগতির অভিযোগটি সত্য তবে বরাদ্দ না থাকার কারনে এবং কিছু ঠিকাদারদের  গাফলতির জন্য এ ধীরগতি হয়েছে।  এবছর ১৩০ কোটি টাকার বরাদ্দ পাওয়া গেছে আশা করা যাচ্ছে বরাদ্দ বাড়লে দ্রæত কাজ শেষ করা যাবে।


যাযাদি/এসএস