মানিকগঞ্জের সাবেক জেল সুপার বজলুর রশিদ আকন্দ ও তার স্ত্রী নাসিমা সুলতানার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
প্রকাশ | ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৮:০১ | আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ২০:৪৬
বজলুর রশিদ আকন্দ কারা বিভাগে বহুল আলোচিত-সমালোচিত সাবেক এই জেল সুপার। সমগ্র কর্মজীবনে তিনি তদবির ও মতলববাজি করে নিরন্তর ভাগ্যবদলের চেষ্টা করে ত্যক্ত-বিরক্ত করেছেন ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের। দূর্নীতি ও অনিয়ম করে চাকরি জীবনে পেয়েছেন বহুবার লঘুগুরু দণ্ড। গুরুত্বর অসদাচরণের বিভিন্ন অভিযোগের দায়ে সর্বশেষ গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খুইয়েছেন কারাগারের চাকরিটিও। চাকরির মেয়াদ বছর দুইয়েক বাকি থাকতেই তাকে পাঠানো হয়েছে বাধ্যতামূলক অবসরে।চাকরি থেকে অবসরে গিয়েও রেহাই পেলেন না এই বিতর্কিত কারা কর্মকর্তা।অবৈধভাবে ৬১ লাখ ৭৯ হাজার ৪১১ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারের সাবেক জেল সুপার মো. বজলুর রশিদ আখন্দ ও তার স্ত্রী নাসিমা সুলতানার বিরুদ্ধে কক্সবাজারে মামলা হয়েছে।উল্লেখ্য যে, তিনি ইতোপূর্বে কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেল সুপার হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হুমায়ূন বিন আহমদ মামলাটি রুজু করেন। বজলুর রশিদ আখন্দ ও তার স্ত্রী নাসিমা সুলতানা নরসিংদি জেলার বাসিন্দা হলেও তারা বর্তমানে ঢাকার খিলগাঁও এলাকায় বসবাস করেন। বজলুর রশীদ আকন্দ দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা রুজুর বিষয়টি দুদক সমন্বিত কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, নাসিমা সুলতানা দুদকের ইস্যু করা সম্পদ বিবরণীর ফরম গ্রহণ করেও বিবরণী দাখিল করেননি। স্বামীর দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্জিত ৬১ লাখ ৭৯ হাজার ৪১১ টাকার সম্পদ নিজ ভোগদখলে রেখে তিনি দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন লঙ্ঘন করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। প্রাথমিক তদন্তে ৬১ লাখ ৭৯ হাজার ৪১১ টাকার সম্পদ অবৈধভাবে ভোগদখলে রাখার সত্যতা পাওয়া যায়।দুদক সূত্রে জানা যায়, অনুসন্ধানকালে দুদকের তদন্তকারী নাসিমা সুলতানার নামে ৪৩ লাখ ৪৭ হাজার ৮৫৯ টাকার স্থাবর ও ৪১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৮ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পান। দায় ৭ লাখ ৩৭ হাজার ৬২৬ টাকা বাদ দিলে নাসিমা সুলতানার অবৈধ সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭৭ লাখ ৮৯ হাজার ৩০১ টাকা। এ সময় তার পারিবারিক ব্যয় পাওয়া যায় ১০ লাখ ১১০ টাকা। তা সহ সাকুল্যে সম্পদের পরিমান দাঁড়ায় ৮৭ লাখ ৮৯ হাজার ৪১১ টাকা। এই সম্পদ অর্জনের বিপরীতে নাসিমার আয় পাওয়া যায় ২৬ লাখ ১০ হাজার টাকা। কিন্তু আয়কর নথিতে ব্যবসায়ী হিসেবে আয়কর দিলেও নাছিমার নামে কোনো ট্রেড লাইসেন্স, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সহ ব্যবসাসংক্রান্ত কোনো নথিপত্র পাওয়া যায়নি। তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া গেছে ৬১ লাখ ৭৯ হাজার ৪১১ টাকা। নাসিমা সুলতানা একজন গৃহিণী হওয়া সত্ত্বেও ব্যবসায়ী মিথ্যা পরিচয়ে তার স্বামীর দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ বৈধ করার চেষ্টা করেছেন বলে দুদকের এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে জানার জন্য বজলুর রশীদ আকন্দকে মোবাইলফোনে কল করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। কারা মহা পরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোতাহের হোসেন চৌধরীকে কল করে জানতে চাইলে তিনি জানান- বজলুর রশিদ আকন্দ বর্তমানে অবসরে আছেন। ব্যক্তির অসদাচরনের দায় প্রতিষ্ঠানের উপর বর্তায় না। অনিয়ম-দুর্নীতি যিনি করবেন তথ্য-প্রমাণ পেলে তাকে প্রচলিত আইন ও বিধি মোতাবেক শাস্তির আওতায় আনা হবে। কারাগারকে দুর্নীতিমুক্ত ও সেবামূলক সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানিয়ে এ লক্ষে তিনি সবার সহযোগীতা কামনা করেন।
যাযাদি/এসএস