মুক্তিপণ না পেয়ে নির্মমভাবে যুবককে হত্যা

প্রকাশ | ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৩:৫১

গাজীপুর প্রতিনিধি
ছবি-যায়যায়দিন

গাজীপুরে অপহরণের পর ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ না পাওয়ায় হাত-পা বেঁধে, শ্বাসরোধ করে এবং দুই হাতের আগুল কেটে এক যুবক নাঈম মাঝিকে (২৪) চাঞ্চল্যকর হত্যার প্রধান আসামী ওয়াই এম ওয়াই সিদ্দীকি শিবলীকে (৩০) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১ গাজীপুর পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের সদস্যরা।

সোমবার (২৮ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৩ টায় জেলার জয়দেবপুর থানাধীন সিড়িরচালা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। এদিন সন্ধ্যায় র‌্যাব-১ গাজীপুর পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মাহফুজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ভিকটিম নাঈম মাঝি শরিয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কোদলপুর (হোসেন হাওলাদারপাড়া) গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে। তিনি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার ইছানগর এলাকার স্থানীয় খোরশেদের বাড়ীর ভাড়াটিয়া। তবে কি কারনে নাঈম গাজীপুরে আসছিল তা জানাতে পারেনি র‌্যাব।

গ্রেপ্তার ওয়াই এম ওয়াই সিদ্দীকি শিবলী গাজীপুর মহানগর সদর থানার ধীরাশ্রম (তরৎপাড়া) এলাকার আলী সিদ্দিকের ছেলে।

র‌্যাব কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান জানান, চলতি মাসের ১৫ অক্টোবর দুপুরে গাজীপুর মহানগর সদর থানার সামান্তপুর এলাকার দক্ষিণ পাশে স্থানীয় এরশাদের ধান ক্ষেতে জমিতে ভিকটিম নাঈম মাঝির মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মুখ থেতলানো, দুই বাঁধা, দুই হাতের বৃদ্ধা আগুল ব্যতীত অন্যান্য আগুল কাটা অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করে। পরে ডিএনএ সংরক্ষণের জন্য মরদেহের গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহম্মদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহের পরিচয় না পাওয়ায় আঞ্জুমান মফিদুলের মাধ্যমে দাফনের ব্যবস্থা করে। ভিকটিমের ছোট ভাই সাঈম মাঝি (২০) ছবি দেখে মরদেহ তার ভাইয়ের বলে সনাক্ত করে এবং গাজীপুর মহানগর সদর থানায় মামলা দায়ের করে। র‌্যাব বিষয়টি আমলে নিয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং হত্যাকান্ডে জড়ীত আসামী গ্রেফতারের জন্য গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। তারা ইন্ট উইংয়ের সহযোগিতায় জানতে পারে অজ্ঞাতনামা আসামী ওয়াই এম ওয়াই সিদ্দীকি শিবলী জয়দেবপুর থানাধীন সিড়িরচালা এলাকায় আত্মগোপনে আছে। ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে সোমবার সকাল সোয়া ৬টায় তাকে গ্রেফতার করে।

তিনি আরো জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আসামী চাঞ্চল্যকর হত্যার ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। পরে লোমহর্ষক ও নৃশংস হত্যাকান্ডের বর্ণনায় বলে ১৪ অক্টোবর প্রধান আসামীসহ তার তিন সহযোগী সদর থানার ধীরাশ্রম (তরৎপাড়া) এলাকার মনিরের ছেলে সুমন (২৯), রাজু (২২) এবং নাজমুল (২০) রাত সোয়া ২টায় সামান্তপুর এলাকার রেললাইন থেকে ভিকটিম নাঈম মাঝিকে অপহরণ করে। পরে আসামী সুমনের বাড়ীতে নিয়ে যায় এবং ভিকটিমের মোবাইল দিয়ে তার বাড়ীতে ফোন করে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের টাকা না দেওয়ায় ভিকটিম নাঈম মাঝিকে ঘটনাস্থলে নিয়ে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করে। একপর্যায়ে আসামীরা ভিকটিমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। মৃত্যুর পর ভিকটিমের পরিচয় গোপন রাখার জন্য আসামীরা তার দুই হাতের বৃদ্ধা আগুল ব্যতীত হাতের বাকী আগুলগুলো কেটে ফেলে এবং মুখে কিল-ঘুষি মেরে মুখ থেতলিয়ে দেয়। সকাল হয়ে যাওয়ায় তারা মরদেহ ঘটনাস্থলে ফেলে আত্মগোপন করে। অপর আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গ্রেফতারকৃত আসামীকে গাজীপুর সদর থানায় হসবতান্তর করা হয়েছে।

যাযাদি/এস