কটিয়াদীতে নতুন জাতের ধান রোপন করে ক্ষতির মুখে কৃষকরা

প্রকাশ | ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১৪:৫৮ | আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১৫:০৩

কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
ছবি : যায়যায়দিন

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে কৃষি বিভাগের পরামর্শে ব্রি ১০৩ ধানের  বীজ রোপণ করে কয়েক শতাদিক কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বীজ রোপণের পর নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ধানের শীষ গজানোর ফলে ধানে চিটা ধরাসহ ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।

কৃষকরা জানান, রোপা আমান ধান রোপনের জন্য বীজ সংগ্রহ করার সময় কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা  নতুন জাতের ব্রি ১০৩ ধান রোপন করার পরামর্শ দেন। অল্প দিনে ও অন্যান্য দানের চেয়ে ফলন বেশি হবে। তাদের পরামর্শে ইমরান সিডস্  ব্রি-১০৩ ধানের বীজ রোপন করে প্রতারিত হয়েছে কয়েকশত কৃষক। এসব এলাকার মাঠের রোপণ করা ধান‌ গাছে সময়ের আগেই ধানের শিস গজিয়েছে। এর ফলে আগেই পরিপক্ব হওয়ায় চিটে হয়ে মরে যাচ্ছে।

সেচ খরচ, কীটনাশক খরচ, জমিতে নিয়োগ করা শ্রমিক খরচ বাবদ  প্রতি বিঘা ধানখেতে খরচ হয়েছে ১০-১২ হাজার টাকা। এতো টাকা খরচ করেও কাঙ্ক্ষিত ফলন না পাওয়ার দুশ্চিন্তায় ভুগছেন কৃষকরা। 

কৃষি বিভাগ জানান, নতুন জাতের ধানের মাঝে ১০৩ ধানের পরামর্শ দিয়েছি। তবে যারা বিভিন্ন কোম্পানির ব্রি ১০৩ ধান রোপন করেছে তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে। যারা বিডিসির বীজ রোপন করেছে তাদের ফলন অনেক ভালো হয়েছে।

মসূয়া ইউনিয়নের পং মসূয়া গ্রামের কৃষক মো. ইব্রাহিম  জানান, ইমারান সিডস ব্রি-১০৩ জাতের ধানের চারা রোপণ করে প্রতারণার শিকার হয়েছি। ধানের শিস বের হওয়ার পর দেখা যায় অধিকাংশ ধানের শিস চিটা হয়ে মরে যাচ্ছে। এতে আমরা ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছি।

পং মসূয়া এলাকার কৃষক মনির হোসেন জানান, আমার এই জমির ধান দিয়ে পরিবারের তিন বেলা খাবার জোটে। এবার ভেজাল বীজ লাগানোর ফলে ধানে চিটা হয়েছে। এখন চিন্তা করছি পরিবার নিয়ে খাব কি?
আচমিতা ইউনিয়নের অগ্রিয়েকোনা গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান, ভিটাদিয়া গ্রামের আবুল কাসেম রজব আলী, মো. হাসিম ও জয়নাল আবেদীন জানান আমরা  উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে ব্রি১০৩ জাতের নতুন ধান রোপন করি।  বীজ রোপণের পর নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ধানের শীষ গজানোর ফলে ধানে চিটা বের শুরু করে। এ বিষয়ে কৃষি অফিস দফায় দফায়  বিভিন্ন ধরণের ওষুধ প্রয়োগ করার পরামর্শ দেয়। আশায় বুক বেঁধে দফায় দফায় বাজার থেকে ওষুধ কিনে  প্রয়োগ করেও  শেষ পর্যন্ত কোন ভাল ফল না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে।

আচমিতা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফারহানা ইয়াছিন জানান, আমাদেরকে উপজেলা কৃষি অফিসার ব্রি ১০৩ ধান রোপন করার জন্য কৃষকদের কে পরামর্শ দেওয়ার কথা বলে। স্যারের কথা মত কৃষকদেরকে পরামর্শ দিয়েছি। ১০৩ জাতের ধান কেনো এমন হল তা জানা নেই আমার। তাবে আমার ধারণা বীজবাহী রোগ অথবা আবহাওয়া জনিত কারণে এই অবস্থা হতে পারে। মাঠ পর্যায়ে কৃষকের অবস্থা উপজেলা কৃষি অফিসারকে জানিয়েছি। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম ভুইঞা জানান, ব্রি ১০৩ ধানসহ অন্যান নতুন জাতের ধান রোপন করার জন্য কৃষকদেরকে পরামর্শ দিয়েছি। কৃষকরা বিভিন্ন কোম্পানির ধান রোপন করায় ফসলের বিপর্যয় হয়েছে বলে মনে করি। আমরা  মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ করছি। বীজ বাহিত কারণে ফসলের ক্ষতি হলে আমরা বীজ কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রয়োজন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

যাযাদি/এআর