খুলনার রূপসায় ৫বিঘা জমিতে জৈব প্রক্রিয়ায় রাসায়নিক মুক্ত মাল্টা বাগান গড়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কৃষক জাহাঙ্গীর ফকির (৪৮)। ২০২১ সালে গড়ে তোলা বাগানে এখন মাল্টা ফলে টইটুম্বুর।
গাছে ঝুলছে কাঁচা-পাকা মাল্টা। রাসায়নিক মুক্ত হওয়ায় বাজারে মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ভালো দামে। চলতি মৌসুমে ইতি মধ্যেই প্রায় লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন। তাঁর বাগানে এখনো প্রচুর পরিমাণ ফল রয়েছে।
সরেজমিনে ওই বাগানে গিয়ে দেখা যায়, তিন বছর আগে প্রায় পাঁচ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে তিনি মাল্টা চাষ শুরু করেন। বর্তমানে প্রতিটি গাছে অসংখ্য মাল্টায় তার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে।
প্রতিটি গাছে ২০ থেকে ৩০টি করে মাল্টা ঝুলছে। মাল্টার ওজনে নুয়ে পড়েছে বেশির ভাগ গাছ। ভালো ফলন হওয়ায় তার বাগান দেখতে আগ্রহী চাষীরা দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই ছুটে আসছেন।
মাল্টা চাষি জাহাঙ্গীর ফকির বলেন, একসময় বেকার জীবন কাটানোর পর কৃষিতে যুক্ত হলেও সফলতা পাইনি। একপর্যায়ে চুয়াডাঙ্গা বেড়াতে গিয়ে প্রচুর দেশি মাল্টার গাছ দেখতে পাই। চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, মাল্টা চাষ করে তারা লাভবান। আমিও ফল বাগান করতে আগ্রহী হয়ে পড়ি। ওই জেলা থেকে মাল্টার চারা সংগ্রহ করে শুরু করি মাল্টা বাগান। জাহাঙ্গীরের মাল্টার বাগান শুরু ২০২১ সালে। পাঁচ বিঘা জমিতে বারি-১, ভিয়েতনামি ও ইয়োলোকিং জাতের মাল্টার চারা রোপন করেছিলেন। মাল্টা গাছে ফলনের জন্য তিন বছর অপেক্ষা করতে হয়। সেই অপেক্ষার অবসান ঘটেছে জাহাঙ্গীরের। এ বছরই গাছগুলোতে প্রথম ফল এসেছে। এ ছাড়া কমলা ও আঙুরের চারাও রোপণ করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে তার খরচ পাঁচ লাখ টাকার মত।
জাহাঙ্গীর জানালেন, মাল্টা গাছে ফুল আসে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে। বারি-১ জাতের দেশি মাল্টা নভেম্বর মাসে খাওয়ার উপযোগী হয়। কমলা হয় নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসে। নভেম্বর যখন আসি আসি করছে, জাহাঙ্গীরও তখন মাল্টা বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মাল্টা চাষি তিনি আরো বলেন, এ বছর অর্ধ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি। দেশি মাল্টা আমাদের দেশে পূর্ণাঙ্গ ফলন দেবে এবং অনেক চাষি ভাইয়ের ভাগ্য বদলাতে সহায়তা করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমরাও রূপসার মাটিতে এ ধরনের সফলতা দেখাতে চাই।
একসময় সবুজ মাল্টা ক্রেতারা কিনতে চাইত না। তবে বর্তমানে বাজারে দেশি মাল্টার ব্যাপক চাহিদা। এটি একটি ফরমালিনমুক্ত ফল। অনেকে বাড়ি থেকেই ফলটি কিনে নিয়ে যাচ্ছে। রূপসা উপজেলার সদর ইউনিয়নের কাজদিয়া বাজারের ফল বিক্রেতা খোকন বলেন, ফলটি খুব সুস্বাদু হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে দেশি মাল্টার চাহিদা ব্যাপক। আমি প্রতি কেজি মাল্টা ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। খুলনা মহানগরীর পশ্চিম রূপসা ঘাট এলাকায় দেশি জাতের মাল্টা কিনতে আসা তাসফিয়া বেগন বলেন, এই মাল্টা বাজারের অন্য মাল্টার চেয়ে ভালো। দেখতে কাঁচা হলেও এই ফল খুব সুস্বাদু। বাজারে যেখানে আফ্রিকার মাল্টা বিক্রি হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়, সেখানে দেশি এই মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়।
অন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে জাহাঙ্গীর বলেন, চাষি ভাইদের যাদের জমি ফাঁকা পড়ে আছে, তারা সেই জমিতে আমার মতো ফল বাগান করতে পারেন। একই সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে কাঁচামরিচ, উস্তা, করলা, বেগুন, ঝাল, আদাসহ অনেক মসলাজাতীয় ফসল চাষ করা সম্ভব। গত বছর একই জমিতে কাঁচামরিচ চাষ করে এক লাখ ২০ হাজার টাকার বিক্রি করেছি। পোকার আক্রমণ কেমন জানতে চাইলে এই মাল্টা চাষি বলেন, দেশি মাল্টা ও কমলা গাছে পোকার আক্রমণ খুবই কম। এরপরও গাছে পোকামাকার আক্রমণ করলে সিডিউল স্প্রে করতে হয়।
যাযাদি/ এসএম