শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১ কার্তিক ১৪৩১

না‌জিরপু‌রে ভাসমান বেডে চারা চাষ ক‌রে সাফল্য অর্জন

না‌জিরপুর (পিরোজপুর)  প্রতি‌নি‌ধি
  ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১৮:৪২
ছবি : যায়যায়দিন

পানির উপরে সাফল্যের সাথে সবজি চাষ করে কৃষি ক্ষেত্রে বিল্পব সৃষ্টি করেছে পিরোজপুরের নাজিরপুরের কৃষকরা।

পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার দেউলবাড়ী দোবড়া এবং কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নের বিপুল পরিমান জমি সারা বছরই জলাবন্ধতা থাকে।ফলে দীর্ঘদিন এই এলাকায় চাষাবাদ করা সম্ভব না হওয়ায় বিপূল সংখ্যক কৃষক মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে আসছিলো।

কিন্তু এই এলাকার কৃষকেরা জলাবন্ধ এই নিম্নাঞ্চলের পানির উপর ভাসমান পদ্ধতিতে গাছের চারা ও সবজি উৎপাদন করে কৃষিক্ষেত্রে বিল্পব ঘটিয়েছে। দুই যুগ আগেও এই এলাকায় গেলে দেখা যেত মাইলের পর মাইল এলাকায় শুধু পানি আর পানি। আর এখন এই এলাকায় গেলে দেখা যাবে পানির উপর ভাসছে বিভিন্ন ধরণের সবজির বাগান। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈরী পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করে এই এলাকার কৃষকরা নিজেদের কৌশলে পানির উপর গড়ে তুলেছেন ভাসমান সবজির বাগান ও বিজতলা।

নাজিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইশরাতুন্নেছা এশা জানান, ভাসামন সবজি এবং চারা চাষের ঐতিহ্য দুই শত বছরের। উপজেলার তিন ইউনিয়ন মালিখালী, দেউলবাড়ী দোবড়া, কলারদোয়ানিয়া বছরের ৭ মাস পানি থাকায় এ পদ্ধবিতে চাষ করা হয়।

সবজির চেয়ে চারা চাষে লাভ বেশি তাই কৃষকদের চারা চাষে আগ্রহও বেশি। ১৮০ হেক্টর জমিতে ২২ শত বেডে এই সবজি ও চারা চাষ করা হয়। ভালো বীজ দিয়ে চারা উৎপাদন করলে ভালো দামে বিক্রি করতে পারে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা সাহায্য করি এবং পরামর্শ দিয়ে থাকি।

কৃষক বাদশা মিয়া বলেন, ছোট কাল থেকেই এই কাজ করি প্রায় ৪০ বছর। কচুরি দিয়ে ভাসমান বেড তৈরি করা হয়। অনেক দূর থেকে কচুরি আনতে হয়। ৬০ হাতের একটি বেড তৈরি করতে ৮ হাজার টাকা লাগে। এই বেডে লাউ, পেপে, মরিচ, বেগুন চাষ করি। ধাপের উপরে টোপাপেনা দিয়ে বেডটারে সুন্দর করে সাজিয়ে চারা রোপন করি। একটি বেডে ৪শত টাকার বীজ লাগে। একটি ধাপে ১১শত চারা রোপন করা যায়। এ বেডে বছরে ৪বার চারা উৎপাদন করা যায়।

তরুন চারা চাষি রেজাউল বলেন, ৩২-৩৩টি ধাপ আছে। ১টি বেডে ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়। চারা বিক্রি করতেছি ৪-৫টাখা ধরে, চারা বিক্রি যোগ্য করতে ৪ থেকে সাড়ে চার টাকা খরচ হয়। আবহাওয়ার উপর নির্বর করে লাভ। দুদলি বোন, পেনা, লাতার উপর চারা রোপন করি। বছরে চার মাস এ চারা ৪বার বিক্রি করা যায়।

ইব্রাহিম নামের এক অভিজ্ঞ কৃষক বলেন, ছোট থেকে বাপ-চাচাদের সঙ্গে কাজ করা শুরু করি । বর্তমানে আমার বয়স ৫২ বছর এখনও এই কাজ করি। ধাপগুলো মানুষ দিয়ে করিয়ে আনি যেটার মূল্য পরে ১৫ হাজার টাকা। প্রথম চালান একটু বেশি খরচ হয় এরপর খরচ কম লাগে। শেষ চালানে যা লাভ হয় তাতে হয়ে যায়। তবে আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে লাভ বেশি হয়।

উল্লেখ্য, ভাসমান বাগানগুলোতে কৃষকরা সাধারণত লাউ, সিম, বেগুন, বরবটি, করলা, পেঁপে, টমেটো, শশা, মরমা, পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়া, চালকুমড়া, মরিচ ইত্যাদি শাকসবজি ও মশলার চারা উৎপাদন করে থাকেন কৃষকরা৷ অনেক কৃষক আবার লাল শাক, ঢেঁড়স, হলুদ চাষও করে থাকেন ।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে