পুরো উপজেলা জুড়ে রাস্তার পাশদিয়ে পোল পুতে লাইন টানানো হয়েছে। পোলের গায়ে ব্লকের মাধ্যমে লেখা বিটিসিএল হাওর বাউর প্রজেক্ট। কোন কোন জায়গায় বিদ্যুতের পিলারকেই ওই প্রজেক্টের পোল হিসেবে ব্যবহার করতে দেখা গেছে। পোলে টানানো লাইনের তার স্থানে স্থানে ঝুলে পড়ে আছে। আবার কোথায়ও কোথায়ও তার চুরি হয়ে গেছে। ধীর্ঘদিন যাবত এমন হযবরল অবস্থায় পড়ে থাকলেও কাজের কোন অগ্রগতি নেই এই প্রজেক্টের। কারা করছে? কেন করছে ? এর কার্যক্রম কি হবে? কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে? প্রকল্পের বরাদ্দ কত? ইত্যাদি জানতে চেষ্টা করলেও উপজেলা বা জেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কেউ কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন।
নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় এমন এক প্রজেক্ট এর সন্ধান পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা এই প্রজেক্টককে বেওয়ারিশ প্রজেক্ট অবাহিত করে বলছেন এর মাধ্যমে একটি মহল হয়ত কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই প্রজেক্ট কোনদিন আলোর মুখ দেখবেনা বলে তারা ধারনা করছেন, সেই সাথে এই প্রকল্প ব্যয়ের টাকাও জলে যাওয়ার সংশয় প্রকাশ করছেন।
প্রজেক্টটির বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে পূর্বধলা টেলিফোন ভবনে কর্মরত কর্মচারীরা জানান এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানিনা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: খবিরুল আহসান জানান, পূর্বধলায় এমন প্রজেক্ট বাস্তবায়নের বিষয়ে কেউ আমাকে অবগত করেনি। তাই বিষয়টি সম্পর্কে আমি কিছুই বলতে পারবনা।
নেত্রকোণা জেলা বিটিসিএল এর সহকারী ব্যবস্থাপক টেলিকম মো: জাকারিয়া সোলায়মান অংকনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পূর্বধলায় হাওর বাউর প্রজেক্টের কোন প্রকল্পের কাজ চলছে কিনা তা তাদের জানা নেই। আপনাদের দপ্তর সংশ্লিষ্ট একটি প্রকল্পের কাজ আপনার জেলায় চলমান রয়েছে অথছ আপনারা কিছুই জানেনা এটা কি করে হয়? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বিভাগীয় অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন বলেন ফোন কেটে দেন।
ময়মনসিংহ বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী টেলিকম এর কার্যালয় (বিটিসিএল) এর উপ-ব্যবস্থাপক (অ: দা:) হানিফ উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রজেক্টেগুলো আমাদের আওতাধীন না। এই প্রজেক্টের বিষয়ে তথ্য জানতে বিটিসিএল এমডি অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।
পরে হাওর বাওর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠির জন্য টেলি যোগাযোগ সুবিধা স¤প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এ.এম. আব্দুল্লাহ পাটওয়ারীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই প্রকল্পের আওতায় নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলায় ১৭৮টি পয়েন্টে ওয়াইফাই হটস্পট স্থাপন করা হবে।
যার সিংহভাগ হবে স্থানীয় বাজার ও ইউনিয়ন পরিষদে। প্রকল্পের উপকারভোগীরা হবেন এলাকার সাধারন জনগণ। এর মধ্যে একটি কলেজ ও একটি মাদ্রাসাও রয়েছে। প্রকল্পটি ২০২৫ সালের জুন মাসে সমাপ্ত হওয়ার কথা রয়েছে বলে তিনি জানান।
পূর্বধলা উপজেলায় প্রকল্পের কোন নজরদারী নেই। চোরেরা তার খোলে নিয়ে যাচ্ছে। কোথায়ও কোথায়ও বিদ্যুতের পিলারকে পুল হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। পূ
র্বধলায় কোন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে? বরাদ্ধ কত? ইত্যাদি বিষিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রকল্পের আওতাধীন পোল স্থাপন, অপট্যিাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপন এতদ সংক্রান্ত অন্যান্য কাজগুলো বর্তমানে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সম্পাদন কাজ চলমান রয়েছে। কাজ শেষ হলে আমাদের কাছে হস্তান্তর করার পর বিস্তারিত বলা যাবে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে অনলাইনে খোঁজ নিতে গিয়ে ২০২২ সালের ২৭ জুন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বিএসএস) অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত একটি একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে টেলিযোগাযোগ সুবিধা বঞ্চিত হাওর, দ্বীপ ও দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে ডিজিটাল সংযোগ স্থাপনে ২ হাজার ২৬ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতাধীন বিটিআরসি’র সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল (এসওএফ) থেকে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে আইসিটি বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ৫শ’ ৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে টেলিযোগাযোগ সুবিধা বঞ্চিত এলাকাগুলোতে ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি স্থাপন, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে দ্বীপ এলাকায় ৪৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নেটওয়ার্ক স্থাপন, টেলিটকের মাধ্যমে ৩শ’ ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে হাওর ও দ্বীপাঞ্চলে ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক স্থাপন, টেলিটকের মাধ্যমে হাওর-বাওরের দ্বিতীয় স্তরের প্রকল্প সম্প্রসারণ এবং বিটিসিএল’র মাধ্যমে ৪শ’ ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে হাওর-বাওর ও প্রত্যন্ত এলাকায় ব্রডব্যান্ড ওয়াইফাই সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত, দুর্গম ও উপকুলীয় এলাকায় বিভিন্ন জনপদ ও স্থাপনায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে সংযোগ স্থাপনে ৪৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে এবং সুবিধা বঞ্চিত প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা ডিজিটাল করতে ৮৩ কোটি ২৫ লাখ টাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। অপরদিকে, উপক‚লীয় পার্বত্য ও অন্যান্য দুর্গম এলাকায় টেলিটকের মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে ৫শ’ ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
তৎকালীন সময়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের অর্থে বাস্তবায়িত এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি বিষয়ক সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল কাউন্সিলের ১৬তম সভায় প্রকল্পগুলোর সার্বিক অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
বাংলাদেশ সচিবালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এ সংক্রান্ত সভায় সভপিতত্ব করেন তৎকালীন তহবিল কাউন্সিলের সভাপতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
এসব প্রকল্পের আওতায় নেত্রকোণার পূর্বধলায় হাওর বাওর প্রজেক্ট এর কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে আছে। চুরি হয়ে যাচ্ছে এর তার। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশয় প্রকাশ করছেন এলাকাবাসী। এর আগে মোটা অংকের টাকা খরচ করে পুরো উপজেলায় মাটির নীচ দিয়ে ফাইবার অপটিক্যাল লাইন টানানো হলেও তা কোন কাজে আসেনি।
উপজেলার সদর বাজারের কম্পিউটার ব্যবসায়ী কেবিএম নোমান শাহরিয়ার বলেন, প্রকৃত পক্ষে এই প্রকল্পগুলো মানুষের কোন কাজে আসবে বলে মনে হচ্ছে না। যারা এই প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন তারা এর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন বলে তিনি ধারনা করছেন।
যাযাদি/ এম