রুহেনা আক্তার লুবনা (২২)। গত এক যুগ থেকে সে মানসিক রোগী। পাগলী নামে গ্রামের সকলেই চিনেন। মূর্তি ভাঙচুরের চেষ্টা ও হামলার অপবাদ দিয়ে তার ওপর চালানো হয় নিষ্ঠুর নির্যাতন। তাতেই ক্ষান্ত হয়নি তারা। তুলে দেয় প্রশাসনের হাতে। পুলিশও তাকে আটক দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে।
গত এক সপ্তাহ থেকে সেই নির্যাতন আর অপবাদের ক্ষত নিয়ে নিয়ে মৌলভীবাজার জেলহাজতের প্রকোষ্টে কাটছে পাগলী লুবনার অনিশ্চিত দিনকাল। এমন অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের বিজয়া চা-বাগানের পূজা মণ্ডপে।
এদিকে রাত আনুমানিক দেড়টায় পার্শ্ববর্তী বিজয়া বাজারে তাকে ঘোরাফেরা করতে দেখেন পাহারাদার সুরুজ মিয়া ও সিরাজ মিয়া। তাকে বাড়ি ঘরের কথা জিজ্ঞাসা করলে কোনো উত্তর দেয়নি। এসময় কিছু খারাপ প্রকৃতির ছেলেরাও তাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টায় মেতে উঠে। মেয়েটির নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে টহল পুলিশের কাছে তুলে দেন বাজার পাহারাদাররা।
কিন্তু টহল পুলিশের দায়িত্বরত কুলাউড়া থানার এএসআই মো: নুরু মিয়া ও সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স লুবনাকে তাদের হেফাজতে না রেখে বিজয়া চা-বাগানের দুর্গাপূজা মণ্ডপে দায়িত্বরত মহিলা আনসারের কাছে নিয়ে রাখেন। আনসাররা থাকে পূজামণ্ডপের পাশে বাগানের স্কুল ঘরে রাখেন।
কিন্তু বাজারের লোকজন জানান, সকালে বাগানের শিশু কিশোররা তাকে পাগলী পাগলী বলে উত্যক্ত করলে লুবনা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে শিশুদের তাড়িয়ে নিয়ে যায়। মূর্তি ভাঙ্গার অপবাদ দিয়ে ইসকন মন্দিরের সুমন এবং বাগানের নয়নের নেতৃত্বে লুবনাকে বেধড়ক মারপিট করা হয়। এসময় হুলস্থুল কান্ডে এক শিশু আহত হয়। থমথমে পরিস্থিতির খবর পেয়ে ইউএনও মো. মহিউদ্দিন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জহুরুল হোসেন, ওসি মো. গোলাম আপছার এবং সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
লুবনার মামা বাচ্চু মিয়া ও লেবু মিয়া জানান, ২০১২ সাল থেকে সে মানসিক রোগী। তারা ডাক্তারের সকল ব্যবস্থাপত্র নিয়ে মানসিক রোগী হিসেবে ছাড়িয়ে আনতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বাগানের লোকজন উল্টো তাদের ওপর আক্রমণ করার চেষ্টা করে। অসহায় হয়ে তারা ফিরে আসেন। এসময় ইসকন মন্দিরের নয়নসহ কয়েকজন শ্রমিক মন্দিরে হামলার কথা বলে ঘটনাটি লাইভ করে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য শ্রমিকদের উৎসাহিত করেন।
এ ঘটনায় বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি কিরন শুক্ল বৈদ্য বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় লুবনার বিরুদ্ধে শিশুর ওপর হামলা ও ৫০০ টাকার ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ করা হয়।
জয়চন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রব মাহাবুব জানান, মেয়েটি মানসিক ভারসাম্যহীন বলে তার মামারা জানিয়েছেন এবং চিকিৎসার কাগজপত্রও দেখিয়েছেন। কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে তাকে প্রশাসনের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. গোলাম আপছার জানান, এ ঘটনায় একটা মামলা হয়েছে। তবে মেয়েটিতো আদালত থেকে জামিন পাওয়ার কথা। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার দায়ে এএসআই মো. নুরু মিয়াকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে।
যাযাদি/ এসএম