গৌরীপুরে মহিলাদের জন্য নির্মিত মার্কেটগুলো পুরুষের দখলে

প্রকাশ | ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১৮:১৫

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
ছবি : যায়যায়দিন

নামে মহিলা মার্কেট, রাজত্ব পুরুষের! নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বাবলম্বী করার জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদ্যোগে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে পৌর মহিলা বিপনী বিতান ও গোবিন্দপুর ওমেন্স কর্ণার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হলেও নারীদের ভাগ্যে জুটেনি দোকান বরাদ্দ। অবৈধ, নিয়ম-নীতি বর্হি:ভূতভাবে প্রায় ২২বছর ধরে এসব মার্কেট পুরুষরা দখল করে আছেন। 

একাধিক সূত্রে জানা যায়, গৌরীপুর পৌরসভার মধ্যবাজারে ১৬টি দোকান বিশিষ্ট পৌর মহিলা বিপনী বিতান, শ্যামগঞ্জ মহিলা মার্কেট, ভূটিয়ারকোনো নারী দোকান শেড ও গোবিন্দপুর ওমেন্স কর্ণার নির্মাণে তৎকালীন সময়ে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয় হয়। গোবিন্দপুর ওমেন্স কর্ণারটি ২০০২সনে মইলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের নিকট হস্তান্তর করা হয়। গৌরীপুর পৌরসভার পৌর মহিলা বিপনী বিতানটি ২০০৬সনে গৌরীপুর পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম হবির নিকট হস্থান্তর করেন। 

সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ১নং মইলাকান্দা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর ওমেন্স কর্ণারটি ইউনিয়ন পরিষদের নিকট হস্তান্তরের পর ২০০২সনের ২০জুন তৎকালীন সাবেক এমপি এএফএম নজমুল হুদা উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে এ মার্কেটটি নিয়ম-নীতি বর্হি:ভূতভাবে স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখলে নিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদে হস্তান্তর করা হলেও দোকান বরাদ্দের নীতিমালা অনুযায়ী কোনো বরাদ্দপত্র দেয়া হয়নি। মার্কেটের ১২টি দোকানের মধ্যে ৪/৫টি দোকান পুরুষদের দ্বারা পরিচালিত হয়। অন্যদোকানগুলো গোডাউন হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এরমধ্যে দোকানের সবগুলো ফ্যান, বিদ্যুৎ সরবরাহের সরঞ্জামসহ চুরি হয়ে গেছে। স্থানীয় লোকজনও জানে না ‘এটা ওমেন্স কর্ণার।’ 

মইলাকান্দা ইউনিয়নে মহিলা মার্কেট (ওমেন্স কর্ণার) আছে শোনে বিস্মৃত হন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি জানান, ইউনিয়ন পরিষদে এ মার্কেটের কোনো তথ্য আছে বলে আমার জানা নেই! ওমেন্স কর্ণারটি নারীদের নামে বরাদ্দ দেয়ার কথা শোনে তাৎক্ষনিক আগ্রহ প্রকাশে করেন পাশের চা দোকানী মোছা. ফরিদা খাতুন। তিনি বলেন, ভাঙা ঘরে দোকান করি, রাতে চোর-ডাকাতের ভয়, তাই দোকানে থাকতে হয়। এ মার্কেটে দোকান পেলে তো নিরাপদে ব্যবসা করতে পারতাম। দর্জি দোকান নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন পাশ্ববর্তী শহিদুল ইসলাম স্ত্রী জুয়েল আক্তার। তিনি বলেন, এতোবছর পর জানলাম এটা ‘আমাদের (নারীদের) মার্কেট।’ এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রকৌশলী অসিত বরণ দেব বলেন, নির্মাণের পর মার্কেট স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কোনো অনিয়মের অভিযোগ পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো। 

অপরদিকে গৌরীপুর পৌরসভার মধ্যবাজারে পৌর বিপনী বিতানের ১৬টি দোকানেই এখন প্রভাবশালী পুরুষ ব্যবসায়ীদের মালামাল সংরক্ষণের গোডাউন। আর মার্কেটের সামনে তাদের অবৈধ দোকানপাট । মার্কেটটি ২০০৬সনে উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর নারী ব্যবসায়ী দোকান খোলায় তৎকালীন সময়ে সামনে বড় মসজিদ হওয়ায় মুসুল্লিদের আপত্তি ও পিছনে মদের দোকান থাকায় মাদকসেবীদের উৎপাত শুরু হয়। এ নিয়ে ২০০৮সনে সিদ্ধান্ত হয়েছিলো ‘মার্কেটটির আউটডোর সাইড অফ করে, ইনডোর সাইড করা হবে। যা ১৬বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি।

 মার্কেট প্রসঙ্গে গৌরীপুর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মদন মোহন দাস জানান, মার্কেটের ১৬টি দোকান বরাদ্দের জন্য সেই সময় প্রায় ৬০জন নারী ব্যবসায়ী (উদ্যোক্তা) আবেদন করেন। 

এরমধ্যে দোকান বরাদ্দের নীতিমালা অনুযায়ী ১৬জনকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিলো। বরাদ্দপ্রাপ্ত দোকানীরা সাবভাড়া দেয়া ও পৌরসভার নিয়মিত ভাড়া পরিশোধও করে নাই। দোকান মেরামতের কারণে তৎকালীন পৌর মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম দোকানদারদের বরাদ্দ ২০১১সনে বাতিল করে তাদেরকে উচ্ছেদ করেন। সেই দোকানগুলো পরবর্তীতে মৌখিকভাবে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিকট গোডাউনের জন্য ২০২০সাল পর্যন্ত দেয়া ছিলো। এরপরে কিভাবে কারা আছে জানা নেই, তবে তারা অবৈধ দখলদার। সবগুলো দোকান পুরুষদের দখলে আছে! এ মার্কেটে ঠাঁই না পেলেও শহরের মধ্যবাজার, গোবিন্দবাড়ি জিউর মন্দির মার্কেট, বেগ প্লাজা, সরকারপ্লাজা, কালিপুর দৈনিক বাজার ও শাপলায় ২৯জন নারী ব্যবসায়ী (উদ্যোক্তা) দোকান পরিচালনা করছেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গৌরীপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মমতাজ বেগম বলেন, নারীদের অগ্রগতি ও তাদেরকে স্বাবলম্বী করার জন্য সরকারের এ উদ্যোগ শুধুমাত্র দোকান বরাদ্দের নীতিমালা না মেনে চলায়, নারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সরকারের উদ্যোগও বাস্তবায়িত হয়নি। নীতিমালা অনুযায়ী এসব দোকান নারী উদ্যোক্ত বা ব্যবসায়ীদের মাঝে বরাদ্দ প্রদানের দাবি জানাচ্ছি। 

এ প্রসঙ্গে গৌরীপুর পৌরসভার প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুনন্দা সরকার প্রমা বলেন, মহিলা মার্টেকের ফাইল খোঁজে বের করা হচ্ছে। পৌর পরিষদ নেই, পৌর পরিষদ হলেই দোকান বরাদ্দের নীতিমালা অনুযায়ী দোকান বরাদ্দ প্রদানসহ প্রয়োজনী সংস্কার ও মেরামতও করা হবে।

যাযাদি/ এস