পূর্বধলায় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে তালা, বন্ধ বিদ্যুৎ সরবরাহ!

প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১৫:৩৩ | আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১৫:৩৭

পূর্বধলা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
ছবি : যায়যায়দিন

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১০ কর্মকর্তার নামে মামলা, গ্রেফতার এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত করার প্রতিবাদে নেত্রকোণা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পূর্বধলায় জোনাল অফিসে তালা দিয়েছে অফিসে কর্মরত কর্মকতা ও কর্মচারীরা।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিয়ে অফিসে তালা লাগিয়ে তারা নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে অবস্থান করছেন। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আরইবির চেয়ারম্যানের অপসারণ ও মামলা প্রত্যাহার করা না হলে কমপ্লিট শাটডাউন ও লং মার্চের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা।  

সারা দেশের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর পক্ষে’ আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সমিতির এজিএম (ওএন্ডএম) আব্দুল হাকিম, মো. সালাহউদ্দিন, ডিজিএম মো. আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া ও এজিএম (ইএন্ডসি) প্রকৌশলী রাজন কুমার দাসের যৌথ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হেয়েছে, চলতি বছরের শুরু থেকে আরইবি ও পবিস একীভূতকরণসহ অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন এবং চুক্তিভিত্তিক বা অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিতকর এ এবং দু’দফা দাবি আদায়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলন চলছে।

আন্দোলনের যৌক্তিকতা উপলব্ধি করে বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক পল্লী বিদ্যুৎ সিস্টেম তথা আরইবি সংস্কার সময়ের দাবি হিসেবে উল্লেখপূর্বক সংস্কারসহ অন্যান্য সমস্যার যৌক্তিক সমাধানের জন্য গত ১ আগস্ট ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। ইতিপূর্বে উক্ত কমিটির চারটি সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘ সময় অতিবাহিত এবং দফায় দফায় সভা অনুষ্ঠিত হলেও সরকারের সংস্কার উদ্যোগে আরইবি’র প্রত্যক্ষ অসহযোগিতার কারণে কমিটি চূড়ান্ত সুপারিশ প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়নি। সভায় অনুপস্থিত থাকা, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন না করা, পরবর্তীতে বিদ্যমান কাঠামো বহাল রাখার প্রস্তাব প্রদান, গোপনে আইন সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণের মতো কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকে তারা। গণ-স্বাক্ষরসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দাবি উপস্থাপন,  গ্রাহক সেবা ও বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রেখে গত মে মাসে পাঁচদিন এবং জুলাই মাসে ১০ দিন কর্মবিরতি, আগস্টে লং মার্চ টু আরইবি, ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটামে গণছুটি ঘোষণার পর জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনায় কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন তারা। পরে সারাদেশে একযোগে ডিসি অফিস ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন, স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিতকরণের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ও বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বরাবর একাধিকবার স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। 

বিবৃতিতে তারা বলেন, আন্দোলনের দাবী না মেনে ইতিমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতার এবং ১০ জন কর্মকর্তাকে চাকুরি থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। এ অবস্থায় দায়িত্ব গ্রহণের পর একটি অহিংস আন্দোলনে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন না করে আরইবির পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে দেশের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে ভুল তথ্য উপস্থাপন করেছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে অস্থিতিশীল করার প্রত্যক্ষ মদদের কারণে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ, সমিতির কর্মকর্তাদের চাকুরি অবসানের আদেশ ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।  অন্যথায় ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণাপূর্বক দু’দফা দাবি আদায়ে ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী ঢাকা অভিমূখে লং মার্চ করতে বাধ্য হবেন বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন। বিবৃতিতে ১৪ কোটি মানুষের নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে টেকসই, আধুনিক ও যুগোপযোগী বিতরণ ব্যবস্থা বিনির্মাণ এবং শহর ও গ্রামের বিদ্যুৎ বৈষম্য নিরসনে দেশের সব স্তরের ছাত্র-জনতাসহ সর্বসাধারণের সুদৃষ্টি কামনা করা হয়। 

পল্লী বিদ্যুতের এমন আন্দোলনে দুর্ভোগে পরেন গ্রাহকরা। বৃহস্পতিবার সকালে পূর্বধলা জোনাল অফিসের গিয়ে দেখা গেছে পুরো অফিস তালাবন্ধ। কথা বলার মত কাউকে পাওয়া যায়নি। এ সময় বিদ্যুতের বিল জটিলতা নিরসনের জন্য আসা খলিশাউড় ইউনিয়নের পাজুনিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমান বলেন, বিদ্যুৎ অফিস বন্ধ থাকায় কিছুই করতে পারছিনা। 

উপজেলার বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সকল প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিসমিল্লাহ ওয়ার্কসপের সত্বাধিকারী মো: কামরুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।  
পূর্বধলা জোনাল অফিসের ডিজিএম প্রকোশলী গোলাম মোর্তজা জানান, আন্দোলনের কারনে অফিসে তালা দেওয়ায় তিনি অফিসে প্রবেশ করতে না পেরে নেত্রকোণায় অবস্থান করছেন।  

যাযাদি/এআর