মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে এবার পূজার ছুটিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গলে পর্যটকের ভিড় জমে উঠেছে। নানা বয়সী নরনারী আশ্বিনের শেষে বৃষ্টিভেজা শ্রীমঙ্গলের পর্যটন স্পটগুলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মনের আনন্দে।
বৃহস্পতিবার থেকেই পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গলের হোটেল মোটেলে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। অনেকেই সিট না পেয়ে বিপাকে পড়েন। হাইল হাওর, বাইক্কাবিল, পাহাড়, ঝরনা, সবুজে ঢেউ খেলানো চা-বাগান, লাউয়াছড়া, বনবনানী, খাসিয়া পুঞ্জি, পাহাড়, হরিণছড়া গলফ্ মাঠ, মাধবপুর লেক, বধ্যভূমি-৭১সহ, চায়ের রাজ্য শ্রীমঙ্গলের প্রকৃতি যেন তার সৌন্দর্যের ডালি মেলে ধরেছে। চা বাগান, হাওরসহ বিভিন্ন নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক স্পট চায়ের রাজ্যকে দিয়েছে আলাদা স্বকীয়তা।
প্রাকৃতিক সোন্দর্যমতি শ্রীমঙ্গলে শীত, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত সব মৌসুমই থাকে উপভোগ্য। কয়েক দিনের ছুটি পেলেই পর্যটকরা ছুটে আসেন এখানে। এবার সাপ্তাহিক ছুটিসহ পূজার ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় পর্যটকদের আগমনও বেড়ে গেছে। সবুজে ঘেরা চা বাগান, পাহাড়, নীল আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনা, নতুন পাতার চা-বাগানের সবুজ সৌন্দর্য মন কেড়ে নেয়। চা বাগানের ফাঁকে ফাঁকে আঁকাবাঁকা রাস্তা, শ্রীমঙ্গলের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুখরিত হন পর্যটকরা। এর মাঝে মাঝে হঠাৎ বৃষ্টি হঠাৎ রোদের পরশ-সে এক অন্যরকম অনুভূতি। চায়ের বাগানের ফাঁকে ফাঁকে দেখা যায় কেউ সেলফি বা কেউ ছবি তুলছেন স্মৃতির এ্যালবামে গেথে রাখার জন্য।
শ্রীমঙ্গলের পাহাড়ের ওপর ঢেউ খেলানো সবুজ চা বাগানগুলো প্রকৃতির সৌন্দর্যে যোগ করেছে এক অন্যরকম মাত্রা।
নেত্রকোনা থেকে আসা যোগল জনতা ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী বৃহস্পতিবার থেকে সিলেটের জাফলং, রাতারগুল, সাদা পাথরের দেশ ভুলাগঞ্জ ঘুরে আজ এসেছেন শ্রীমঙ্গলে নাম শুনেছি আজ নিজ চোখে এর অপরোপ সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। আমার পরিবারও খুব খুশি।'
কুমিল্লা থেকে আসা শারমিন বলেন, শ্রীমঙ্গলে যে দিকে থাকাই সবুজ আর সবুজ দেখে মনটাও সবুজ হয়ে গেছে। সবুজে ঘেরা চা বাগানের আকাঁবাকা রাস্তা ও ঢেউ মাতানো চা বাগানের দৃশ্য দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি। আমরা একসাথে ৪০ জনের একটি দল এসেছি শুধু পর্যটন নগরী চা বাগান কে উপভোগ করতে।
শ্রীমঙ্গলের পাঁচ তারকা মানের হোটেল দি গ্র্যান্ড সুলতাল গলফ্ এর জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আরমান খান যায়যায়দিনকে বলেন, অনেক দিনপর হোটেলের ১৩৫টি রুম বুক হয়ে গেছে। কোন রুমই খালি নেই। আগামী রোববার পর্যন্ত বুকিং রয়েছে রুম গুলো ।
শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হোটেল ইসাকি এমোস এর ম্যানিজিং ডাইরেক্টর (এমডি) সাইফ উদ্দিন লিটন বলেন, হোটেলের সবগুলো রুমই বৃহস্পতিবার থেকে বুকিং কোন রুম খালি নেই । এখনও অনেক পর্যটক আসছেন কিন্তু কোন রুমই খালি হচ্ছে না। আমাদের রুম রয়েছে ৪০টি আরো ৪০-৫০ টি রুম ভাড়া দিতে পারতাম । উপজেলার সব হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট এর সব রুম বুকিং হয়ে গেছে কোথায় কোন হোটেল খালি নেই।
ট্যুর গাইড এন্ড ট্যুর অপারেটর অব মৌলভীবাজারের (টোয়াম) এর আহŸায়ক খালেদ হোসেন বলেন এবার পুজোঁয় টানা চার দিনের ছুটি পাওয়ায় পর্যটকদের ভিড়। তবে দীর্ঘদিন পর্যটন শহর শ্রীমঙ্গলে পর্যটকদেও আনাগোনা কম ছিলো ।
পুজোঁর ছুটির কারণে লম্বা ছুটি পেয়ে পর্যটকরা এসেছেন প্রকৃতি কণ্যা শ্রীমঙ্গলে সৌন্দর্য উপভোগ করতে। বন্যা, আন্দোলনসহ নানা কারণে এতদিন শ্রীমঙ্গলে পর্যটন স্পটগুলোতে 'খরা' চলছিল। ব্যবসায়ীরা লোকসান গুনছিলেন। এখন ছুটিতে শ্রীমঙ্গল পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মুখে হাসি ফুটেছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক মো: কামরুল হাসান চৌধুরী যায়যায়দিনকে বলেন, 'আমরা পর্যটকদের সেবাদানে সব সময় প্রস্তুত। তাদের জান মালের সার্বিক নিরাপত্তায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। পর্যটকদের নিরাপত্তায় কোনো ঘাটতি নেই।'
যাযাদি/ এম