সোনাইমুড়ি থানায় হামলা, অস্ত্র লুট ও পুলিশ সদস্য হত্যা, গ্রেপ্তার ৩  

প্রকাশ | ১২ অক্টোবর ২০২৪, ১৬:৩৪

স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী
ছবি : যায়যায়দিন

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানায় হামলা, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশ কনস্টেবলকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে খুন হওয়া পুলিশ কনস্টেবল মোহাম্মদ ইব্রাহিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার করা হয়েছে। 

গ্রেপ্তার তিন আসামি হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।

শনিবার সকালে নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোঃ আব্দুল্লাহ আল ফারুক এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এ সময় তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়ে তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- সোনাইমুড়ী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কৌশল্যারবাগ গ্রামের প্রয়াত শফিকুল ইসলামের ছেলে নাহিদুল ইসলাম (১৬), ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ছিদ্দিকের ছেলে নাইম হোসেন (২১) ও জয়াগ ইউনিয়নের ভাওরকোট গ্রামের আবদুল হামিদের ছেলে ইমাম হোসেন ইমন (২২)।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার বলেন, গত ৫ আগস্ট সোনাইমুড়ি থানাতে আক্রমণ হয়েছিল। সেখানে দুইজন পুলিশ সদস্য হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল এবং বেশকিছু অস্ত্র-গুলি লুট হয়েছিল। 

পরবর্তীতে গত ১৫ আগস্ট অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে হত্যাকান্ড এবং অস্ত্র লুট সংক্রান্তে থানাতে একটি মামলা রুজু করে। পরবর্তীতে নাইম হোসেন নামে এক সন্দিগ্ধ আসামি সোসাল মিডিয়ায় অস্ত্র হাতে তার ছবি পোস্ট করেছিল। অস্ত্র হাতে ওই ছবির সূত্র ধরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সোনাইমুড়ি বাইপাস বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে নাইম হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

এ সময় তার কাছ থেকে নিহত পুলিশ কনস্টেবল ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ও নাইমের মোবাইল যাচাই-বাছাই করে পুলিশ কনস্টেবল মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে নৃশংসভাবে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।

পরে নাইমের মোবাইল ফোনের ডালায় লিস্ট পর্যারেঅচনা করে এবং তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কনস্টেবল  মোহাম্মদ ইব্রাহিম হত্যায় জড়িত ৩ নম্বর আসামি ইমাম হোসেন ইমনকে একই দিন সন্ধ্যায় জয়াগ ইউনিয়নের ভাওরকোট গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার থেকে একটি টেকনো স্পার্ক মোবাইল জব্দ করা হয়। তার ফোনের ম্যাসেঞ্জারেও একজনকে পাঠানো ভয়েস রেকর্ডে পুলিশ হত্যার তথ্য পাওয়া যায়। একই এলাকা থেকে অপর আসামী নাহিদুল ইসলাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এসপি আরো বলেন, গ্রেপ্তার তিন আসামি গত ৫ আগস্ট সোনাইমুড়ী থানায় হামলা, অস্ত্র ও গুলি লুট এবং পুলিশ কনস্টেবল মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার, গ্রেপ্তার তিন আসামির জবানন্দি অনুযায়ী গত ৫ আগস্ট সোনাইমুড়ি থানায় হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, অস্ত্র ও গুলি লুট এবং পুলিশ সদস্য মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে পিটিয়ে হত্যার বর্ণনা তুলে ধরেন।

এসপি বলেন, ‘আসামিরা কনস্টেবল ইব্রাহিমের দুটি মোবাইল ফোন সেট নিয়ে যায়, গ্রেপ্তারের পর তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন সেট দুটি উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়া ঘটার সময় ভুক্তভোগীর মানিব্যাগ এবং টাকাও  খোয়া গিয়েছিল। আসামিরা জানিয়েছে তারা সেগুলো বন্যার পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছে। যার কারণে সেগুলেঅ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।’

আসামিদের শুক্রবার আদালতে হাজির করা হলে তারা ফেজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে আদালতের নির্দেশে আসামিদের জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট দুপুর থেকে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী আনন্দ–উল্লাস করতে সোনাইমুড়ী উপজেলা সদরের রাস্তায় নেমে আসেন। তারা সোনাইমুড়ী বাজার, সোনাইমুড়ী বাইপাস এলাকা দখলে নিয়ে আনন্দমিছিল করতে থাকেন। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে আনন্দমিছিল থেকে একটি দল সোনাইমুড়ী থানার দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় থানার ভেতর থেকে পুলিশ গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলে একজন নিহত হন। 

এরপর উত্তেজিত জনতা সংঘবদ্ধ হয়ে থানা ঘেরাও করে হামলা-ভাঙচুর চালালে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হন। হামলার এক পর্যায়ে উত্তেজিত জনতা থানা ভবনে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় পুলিশের উপপরির্দশক মোহাম্মদ বাছির ও একজন কনস্টেবল নিহত হন।

যাযাদি/ এম