শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

সারিয়াকান্দিতে বালু পরিবহনের কারণে সড়ক নষ্ট ও যানজট 

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি
  ১২ অক্টোবর ২০২৪, ১৩:১৬
ছবি : যায়যায়দিন

বগুড়ার সারিয়াকান্দির যমুনা নদীর বালু এখন এলাকাবাসীর জন্য অভিশাপ হয়ে উঠেছে। বালু ব্যবসায়ীরা বে-পরোয়া ভাবে সারিয়াকান্দি পৌর ও ইউনিয়নের রাস্তা দিয়ে নদী থেকে বালু পরিবহন করায় রাস্তা ভেঙে ও রাস্তায় বালু পরে তা পথচারীদের জন্য চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সারিয়াকান্দির মধ্য দিয়ে বয়ে চলা যমুনা নদীটি একসময় ছিল অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনন্য লীলাভূমি। ওই নদীর চরে থাকা বালু সরকারি ইজারায় বিক্রি করা হলেও কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ইজারাদাররা ড্রেজারের মাধ্যমে অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীটি বর্তমানে বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে।

নদীবেষ্টিত সারিয়াকান্দিতে যমুনা ও বাঙ্গালী নদী থেকে গত কয়েক বছর ধরে বালু উত্তোলনের নামে চলছে বালুলুট। বালু পরিবহনের কারণে পরিপাটি পৌরশহর একটু বৃষ্টি হলেই কাঁদাপানিতে ভরে থাকে।

ট্রাকে করে ভেজা বালু পরিবহনের সময় বালু সড়কের ওপর পড়ে একটু বৃষ্টি হলে সৃষ্টি হয় চলাচলের বিড়ম্বনা।অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা যমুনা নদীকে করছে ক্ষত-বিক্ষত। এতে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল ব্যাপকভাবে লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদী ও নদীর তীরবর্তী সাধারণ মানুষ।

সরকার পাচ্ছে নামমাত্র রাজস্ব। বালু পরিবহনে রাস্তা ভাঙনের কারণে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সারিয়াকান্দি থেকে বগুড়া মহাসড়ক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।সড়কের বিভিন্ন স্থান দেবে যাচ্ছে। কেবল প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের অসাধুতা ও পরিকল্পনাহীনতার কারণে বিপর্যস্ত হচ্ছে পৌরবাসীর জনজীবন।

মুনাফালোভী এ অসাধু সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের কারণে ড্রাম-ট্রাকগুলোতে অতিরিক্ত বালু বোঝাই থেকে শুরু করে সড়কে চলে অদক্ষ চালকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা। পৌর শহরের ভেতর দিয়ে প্রতিদিন বালুবাহী ট্রাক চলাচলের কারণে প্রতিনিয়ত সড়কে ঝরছে প্রাণ। সড়ক দুর্ঘটনা এখানে নিত্যদিনের সঙ্গী।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বগুড়া জেলা শহরে যাতায়াত করার জন্য দুইটি সড়ক রয়েছে। সড়ক দুইটির একটি হলো বগুড়ার চেলোপাড়া থেকে শুরু হয়ে গাবতলী নেপাতলী হাট ফুলবাড়ি হয়ে সারিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত।অপরটি হলো চেলোপাড়া থেকে শুরু হয়ে গাবতলী উপজেলার তরনী হাট জোড়গাছা হাট ও কুতুবপুর হয়ে সারিয়াকান্দিতে যাতায়াতের সড়ক।

এ দুটি সড়কে প্রায় ৫২ টি সেতু কালভার্ট রয়েছে। এর মধ্যে চেলোপাড়া থেকে শুরু হয়ে জোড়গাছা,কুতুবপুর, সারিয়াকান্দি সড়কে বগুড়া জেলার সবচেয়ে বড় সেতুটি হলো জোড়গাছায় বাঙালি নদীর ওপর।আর অপরটি হলো সারিয়াকান্দী প্রবেশের মুল সেতু বাঙ্গালী নদীর ওপর সারিয়াকান্দি সেতু।

এ সেতু গুলোর উপর দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী বগুড়া শহরে যাতায়াত করে থাকেন। এছাড়াও চেলোপাড়া থেকে শুরু হয়ে, গাবতলী হাটফুলবাড়ি হয়ে সারিয়াকান্দী উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত প্রধান সড়ক হিসেবে পরিচিত। সারিয়াকান্দি বাঙগালী নদীর সেতু সহ অন্যান্য নদীর উপর সেতু দিয়ে দৈনিক অসংখ্য যানবাহন সহ লক্ষাধিক লোকের যাতায়াত হয়।

গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি সড়কের ওপর দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে বালু পরিবহনের নামে প্রভাবশালীদের রাতে দিনে ট্রাক, মিনি ট্রাক তো চলছেই তার সাথে ইদানীং নতুন সংযোজন হয়েছে ড্রাম ট্রাক।তারা এতটাই প্রভাবশালী যে সড়কে কোন নিয়ম নীতিই ও কর্তৃপক্ষকে থোড়াই কেয়ার করছেন। অবৈধ ভাবে চলছে, বালু পরিবহনের নামে শ' শ' ড্রাম ট্রাক দিন রাত অবিরাম। প্রত্যক্ষদর্শীর আরও জানান, এসব ১০/১২ চাকার ট্রাক প্রতিদিন চলছে রাত দিন বিরামহীন।

এতে করে বাঙ্গালী নদীর জোড়গাছা সেতুটি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। সেতুটির উপরের ঢালাইয়ের অংশ সড়ে যাওয়ায় সেতুটির উপর একাধিক স্থানে খানখন্দর সৃষ্টি হয়েছে। এতে স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল ব্যাহত ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী লাজু, গনেশ ও রবিউল হোসেন বলেন,শুধু জোড় গাছা সেতুই নয়। সারিয়াকান্দির বাঙ্গালী সেতুর উপর ওইসব ড্রাম ট্রাক চলাচল করাই সবগুলো সেতুই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে।

অপরদিকে সড়ক ও জনপদ বিভাগের প্রায় ৬০ কিলোমিটার সড়ক ঝুঁকিপূর্ণ খানা খন্দের সৃষ্টি হওয়ায় সড়কে যানবাহন সহ যাত্রীদের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় দিন-রাত এ রকম যান চলাচল করলেও রহস্যজনক কারণে প্রশাসন নিরব রয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সারিয়াকান্দি পৌরসভার প্রশাসক মো. শাহারিয়ার রহমান বলেন, সরকার যেহেতু ইজারা দিয়েছে তারাতো বালু পরিবহন করবেই। এর সাথে যারা জড়িত আছে তাদের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে