‘আল্লাহ সবগুলো মানুষ নিয়ে গেল’
প্রকাশ | ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১৪:৩০
"আল্লাহ কি দেহালো, একটা মানুষও বাইচা নাই যে কি দিয়ে কি হলো বলবে, কোনো কিছু বলার নাই। আল্লাহ আহতও করে নিহতও করে, আল্লাহ সব গুলো মানুষ নিয়ে গেলো" কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে এভাবেই আহাজারি করেন পিরোজপুরে খাদে প্রাইভেটকার পড়ে নিহত শাওনের খালা।
পিরোজপুরে বুধবার (০৯ আক্টোবার) রাত ৩টার দিকে ঢাকা-পিরোজপুর সড়কের স্থানীয় নুরানীগেট সংলগ্ন এলাকায় খালে প্রাইভেটকার পড়ে ৮ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে চারজনের বাড়ি জেলার নাজিরপুর উপজেলা হোগলাবুনিয়া গ্রামের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত শাওন মৃধা উপজেলার হোগলাবুনিয়া গ্রামের মৃত আসাদুজ্জামান মৃধার ছেলে। শাওনরা পরিবারসহ ঢাকায় বসবাস করেন এবং ব্যবসা করেন।
নিহত শাওনের বাড়িতে গেলে কাউকে না পাওয়ায় তার মামা বাড়িতে গেলে জানা যায়। শাওন ও তার বন্ধুর পরিবার সহ গত পরসু কুয়াকাটা ভ্রমন করে গতকাল সন্ধ্যায় মামা বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়। রাত ৩টার দিকে গাড়ি পিরোজপুরের নুরানীগেট এলাকা পর্যন্ত পৌছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে শাওন ও তার বন্ধুর পরিবারসহ ৮ জনই মারা যায়। শাওন নিজেই তার নিজস্ব গাড়ি চালাচ্ছিলেন।
নিহত শাওনের মামাতো বোন রিমা আক্তার জানান, শাওন ভাই আমাকে সন্ধ্যায় ফোন করে কুয়াকাটা থেকে আমাদের বাড়িতে আসার কথা বলে। তখন তার সঙ্গে ভাবি ও ভাইয়ার বন্ধুসহ ৮ জনের খাবার রান্না করার কথা বলে। আমরা খাবার রান্না করে রাত আড়াইটা পর্যন্ত অপেক্ষা করি। আমার সঙ্গে তাদের রাত ১টা সময় কথা হয়। এরপর আর কথা হয় নাই। সকালে ঢাকা থেকে বড় ভাই ফোন করে তাদের নিহতের কথা জানান।
নিহতের বড় মামা বাবুল ফকির বলেন, আমরা তো ঘুম ফজরের আজানের সময় শুনেছি ও (শাওন) গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে।
শাওনের বড় মামি বলেন, যখন বাড়িতে আসত তখন বলত কি রান্না করছো রাতে কিন্তু খাবো। ওরা (শওনরা) পরিবারসহ ঢাকা থাকে, ঢাকা ওদের বাড়ি আছে। ওর ছোট মামি বাজার করেছে রান্না করেছে।
নিহতের ছোট মামি রেবা জানান, শাওনের বউ আমেনার সঙ্গে কথা হলে জানান তারা কুয়াকাটার উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছে সেখানে সারাদিন কাটানোর পরে গতকাল বুধবার রাতে আসার কথা ছিলো আমাদের বাড়িতে। বৃহস্পতিবার আমাদের বাড়িতে থাকার পর রাতে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দিবে। শাওনের জন্য রুই মাছ, দেশি মুরগী ও করলা ভাজি করে রেখেছি কিন্তু সকালে শুনতে পারি তার মৃত্যুর কথা।
জেলা সিভিল সার্জন মিজানুর রহমান জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পরিবারের ৮জন মৃত্যু হয়। প্রাথমিক ধারনা গাড়িটি পানিতে পরার কারনে ডুবে তাদের মৃত্যু হয়। আটজনকে মৃত্যু অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
পিরোজপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবদুস সোবাহান জানান, আমরা রাতে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় একে একে ৮টি মরদহ উদ্ধার করি। তাদের মধ্যে চারজনের বাড়ি নাজিরপুরে উপজেলা হোগলাবুনিয়া গ্রামে।
উল্লেখ্য ৮ জন নিহতের মধ্যে ৪ জনের বাড়ি শেরপুর জেলায়, এবং ৪ জনের বাড়ি পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলায়, তারা হলেন, ১। মোতালেব (৪৫), পিতা-নাজিম উদ্দিন, ২। সাবিনা (৩০), স্বামী- মোতালেব ৩। মুক্তা (১২), ৪। সোয়াইব (২), পিতা- মোতালেব, তাদের সবার বাড়ি ,শেরপুর সদরের রগুনাথপুর দীর্ঘাপাড়া গ্রামে।
এছাড়া ৫। মোঃ শাওন (৩২), পিতা-আছাদ মৃধা, ৬। আমেনা বেগম (২৫), স্বামী-মোঃ শাওন ৭। শাহাদাত (১০), ৮। আব্দুল্লাহ (৩), উভয় পিতা- মোঃ শাওন।
যাযাদি/ এস