দেবীর মহাষষ্ঠী মধ্য দিয়ে দূর্গাপূজা শুরু

প্রকাশ | ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৪৩

মন্তোষ চক্রবর্তী
ছবি : যায়যায়দিন

 "জটাজুটসমাযুক্তামৰ্দ্ধেন্দুকৃতশেখরাম্। লোচনত্রয়সংযুক্তাং পুর্ণেন্দুসদৃশাননাম্‌॥ অতসীপুষ্পবর্ণাভাং সুপ্রতিষ্ঠাং সুলোচনাম্‌। নবযৌবনসম্পন্নাং সর্ব্বা্ভরণ ভূষিতাম্॥ 

সুচারুদশনাং তদ্বৎ পীনোন্নতপয়োধরাম্। ত্রিভঙ্গস্থানসংস্থানাং মহিষাসুরমর্দিনীম্‌॥ মৃণালায়তসংস্পৰ্শ-দশবাহুসমন্বিতাম্। ত্রিশূলং দক্ষিণে ধ্যেয়ং খড়গং চক্রং ক্রমাদধঃ॥ তীক্ষবাণং তথা শক্তিং দক্ষিণেষু বিচিন্তয়েৎ। খেটকং পূর্ণচাপঞ্চ পাশমেঙ্কুশমেব চ॥ ঘণ্টাং বা পরশুং বাপি বামতঃ সন্নিবেশয়েৎ। অধস্তান্মহিষং তদ্বদ্বিশিরস্কং প্রদর্শয়েৎ॥ 

শিরশ্ছেদোদ্ভবং তদ্বদ্দানবং খড়গপাণিনম্। হৃদি শূলেন নির্ভিন্নং নির্য্যদন্ত্রবিভূষিতম্‌॥ রক্তরক্তীকৃতাঙ্গঞ্চ রক্তবিস্ফুরিতেক্ষণম্। বেষ্টিতং নাগপাশেন ভ্রকুটীভীষণাননম্॥ সপাশবামহস্তেন ধৃতকেশঞ্চ দুৰ্গয়া। 
বমদ্রুধিরবক্ত্রঞ্চ দেব্যাঃ সিংহং প্রদর্শয়েৎ॥ দেব্যাস্তু দক্ষিণং পাদং সমং সিংহোপরিস্থিতম্। কিঞ্চিদুৰ্দ্ধং তথা বামমঙ্গুষ্ঠং মহিষোপরি॥ স্তূয়মানঞ্চ তদ্রুপমমরৈঃ সন্নিবেশয়েৎ। উগ্রচণ্ডা প্রচণ্ডা চ চণ্ডোগ্রা চণ্ডনায়িকা। চণ্ডা চণ্ডবতী চৈব চণ্ডরূপাতিচণ্ডিকা॥ অষ্টাভিঃ শক্তিভিস্তাভিঃ সততং পরিবেষ্টিতাম্‌। চিন্তয়েজ্জগতাং ধাত্রীং ধর্ম্মকামার্থমোক্ষদাম্॥
- দেবী দুর্গার ধ্যান-

আজ বুধবার মহাষষ্ঠীর মধ্যদিয়ে শুরু হবে বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা।
ষষ্ঠীতে দেবী বোধনের পর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যে দিয়ে দেবী দূর্গা অধিষ্ঠান হবে মন্ডপে। টানা তিন দিন পূজার পর দশমীতে দেবী বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচদিনের সর্বজনীন এ উৎসবের মহালয়া থেকে ক্ষণ গণনা শুরু হলেও শারদোৎসবের আগমনী বার্তা জানিয়ে দেয় শরতের কাশফুল। তারপর শরৎ এর শিউলি পুষ্পের  স্নিগ্ধ ঝড়া সকালে শারদ লক্ষ্মীকে বরণের বার্তা দেয় শিউলি ফুল,ঠিক এই সময়ে বাঙালির মন ভরে এক অন্যরকম আনন্দে। প্রাণে প্রাণে জ্বলে খুশির বীণ। 

 সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান এই ঋতুতেই উদযাপিত হয়। ধর্মমত নির্বিশেষে এই ঋতু মানুষকে জড়িয়ে রাখে এক মায়াবী বন্ধনে। এই সময় দূরের স্বজনরা ঘরে ফিরে। বাঙালির যা কিছু নিজস্ব তার মধ্যে শারদোৎসবের একটি নির্দিষ্ট স্থান আছে। 

দেবীর বোধন। বোধনের পর দেবীর অধিবাস৷ বেল তলায় দেবীর আরাধনা। গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতী-সপরিবারে একরাত সেখানেই থাকবেন মা দুর্গা। সপ্তমীর সকালে পা দেবেন বাপের বাড়িতে।

আজ বুধবার (৯ অক্টোবর ) মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব। এই শেষ মূহুর্তেও পূজা মণ্ডপ গুলো সাজ সজ্জায় আর রং তলীতে ব্যস্ত সময় পার প্রতিমা শিল্পীরা, বসে নেই পূজা উৎযাপন কমিটির আয়োজকেরা। 

দেবীর বোধন : রাবণ ছিলেন দেবাদিদেব- মহাদেবের বর-প্রাপ্ত। আর দেবী দুর্গা বিভিন্ন রূপের একনিষ্ঠ সাধকও ছিলেন তিনি। 

কিন্তু রামের হাতে রাবণের বধ ছিল দৈববাণী। তাই রাম-রাবণের যুদ্ধ তখন অবশ্যম্ভাবী সেই সময় প্রজাপতি ব্রহ্মার দ্বারস্থ হলেন দেবতারা। কিন্তু দেবী তখন নিদ্রিতা। দেবতাদের অনুরোধে স্বয়ং ব্রহ্মা দেবীর পূজা করে তাকে তুষ্ট করার উপায় জিজ্ঞাসা করলেন। দেবী বললেন, যদি রামচন্দ্র তার বোধন করেন, তবেই তিনি রাবণ বধে তাকে সাহায্য করবেন। 

রামকে দেবীর নির্দেশের কথা জানালেন প্রজাপতি ব্রহ্মা ও দেবরাজ ইন্দ্র। যেহেতু সময়টা ছিল শরৎকাল, তাই রামচন্দ্র নিজ হাতে দেবীর মূর্তি গড়ে তার আরাধনার প্রস্তুতি নিলেন। সেই সময় ধ্যানে বসে ব্রহ্মা দেখলেন একটি বিল্ব বৃক্ষের বা বেল গাছের নিচে একটি ৮-১০ বছরের বালিকা খেলা করছে। ব্রহ্মা বুঝলেন তিনি দেবী। তারপরেই প্রজাপতি স্থির করলেন দেবীর বোধনের পুজো হবে ওই বেলা গাছের নিচেই। সেই কারণে প্রথা মেনে আজও বোধনের আগে বেল গাছের পূজা করে তা প্রতিষ্ঠিত করা হয় দেবীর ঘটে। তারপরেই শুরু হয় বোধন, শুরু হয় দেবীর আরাধনা।

সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, কৈলাস শিখর ছেড়ে পিতৃগৃহে আসা মা দুর্গার অকাল "বোধন" আজ। ভোরের শিউলি ছড়াচ্ছে মোহনীয় গন্ধ। এমন শারদীয় আবহেই  শুরু হচ্ছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আজ ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে মূল আনুষ্ঠানিকতা।

দুর্গোৎসবের প্রাক্কালে এই বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবীর নিদ্রা ভাঙার জন্য বন্দনা পূজা করা হবে। মণ্ডপে, মন্দিরে আজ  সায়ংকালে তথা সন্ধ্যায় এ বন্দনা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। বোধন দুর্গা পূজার প্রধান একটি আচার। ‘বোধন’ শব্দের অর্থ হলো  "জাগরণ" বা চৈতন্যপ্রাপ্তি। পূজা শুরুর আগে সন্ধ্যায় বিল্ল বৃক্ষ (বেল শাখায়) দেবীর বোধন দুর্গা পূজার একটি অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ। শরৎ কালের দুর্গাপূজায় এই বোধন করার বিধান রয়েছে। বিভিন্ন পুরাণ অনুসারে, ভগবান রামচন্দ্র শরৎ কালে রাক্ষস রাজ রাবণকে বধ করার উদ্দেশ্যে দুর্গাপূজা করেন। তিনি অকালে এই বোধন করেন বলেই এটি অকাল"বোধন" নামে খ্যাত। তবে বসন্তকালে চৈত্র মাসে যে দুর্গাপূজা তথা বাসন্তীপূজা অনুষ্ঠিত হয়, তাতে বোধন করার প্রয়োজন হয় না।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, 
সারাদেশের এবছর পূজা হচ্ছে  ৩১ হাজার ৪ শত ৬১টি মণ্ডপে এবার পূজা  হবে। গতবছর এই সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ৪শত ৮টি পূজা মন্ডপে। 

দূর্গা পূজা উযদাপন : শিউলি পুষ্পের শরৎ এ ইতিমধ্যে দেশজুড়ে উৎসবের ছড়িয়ে পড়েছে। ষষ্ঠীর সকাল থেকেই প্রতিমা দেখা, নতুন জামা কাপড়, নতুন জুতো, নতুন পাঞ্জাবী,পা-জামা কোথাও কোথা পুরুষেরা ধূতি-পাঞ্জাবি পড়ে আর সনাতনী নারীরা শাড়ী পড়ে হৈ-হুল্লোড়, খাওয়া-দাওয়া৷  পুজা মন্ডপে দল বেধে গিয়ে প্রসাদ নেওয়া, পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব একত্রে মিলে-মিশে  পূজা আনন্দ উদযাপন। 

শরৎ এর শুদ্ধ স্পর্শে সবার অন্তর্লোকে স্পন্দিত হয়ে উঠুক জীবন যাপনের মধুর ছন্দ।

আর দুর্গোৎসবের স্মৃতিগুলো ঝরে পড়ুক শিউলি পুষ্পে গন্ধে। 
শুভ শারদীয়া।

যাযাদি/এস