গাইবান্ধায় গ্রন্থাগার গুলিতেপাঠক নেই তাকে তাকে সাজানো আছে বই

প্রকাশ | ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১৭:৫৯

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
ছবি : যায়যায়দিন

গাইবান্ধা জেলা সাতটি উপজেলা নিয়ে গঠিত। জেলা উপজেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ বে-সরকারি ব্যবস্থাপনায় পাঠাগার রয়েছে। পাঠাগার থাকলেও পাঠক উপস্থিতি হতাশাজনক। প্রমথ চৌধুরীর মতে হাসপাতাল মানুষের দেহের চিকিৎসা করে, লাইব্রেরীতে হয় মনের চিকিৎসা। আর মনের মৃত্যু ঘটলে সব কিছুই ধ্বংস হয়ে যায়। আজকে মনের চিকিৎসার জন্য লাইব্রেরীর গুরুত্ব যেন কমে গেছে। 

গাইবান্ধা জেলায় উল্লেখযোগ্য দুটি লাইব্রেরী রয়েছে- একটি হচ্ছে গাইবান্ধা সরকারি গণ-গ্রন্থাগার আরেকটি হচ্ছে পাবলিক লাইব্রেরী এন্ড ক্লাব। সরকারি গণ গ্রন্থাগারটি ১৯৮২ সাল থেকে বিভিন্ন জায়গায় ভাড়া নিয়ে লাইব্রেরী কার্যক্রম চলতো। ২০০৮ সালে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল সড়কে ৩৩ শতাংশ জমির উপর ভবন নির্মাণ করে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। লাইব্রেরী ভবনের সামনে সবুজ বাগান পেছনের অংশে শাকসবজির বাগান মিলে সুশোভিত একটি পরিবেশ তৈরী হয়েছে। 

পাঠাগারে বইয়ের সংখ্যা প্রায় আটাশ হাজার, পাঠকের পড়ার জন্য ১০টি জাতীয় পত্রিকা নেয়া হয়। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বন্ধের দিন বাদে সপ্তাহের বাকি পাঁচদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত লাইব্রেরী খোলা থাকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সেখানে চাকুরী প্রত্যাশী কিছু সংখ্যক পাঠক এবং কয়েকজন ছাত্রছাত্রী পাঠককের উপস্থিতি। সারিবদ্ধ আলমারীতে তাকে তাকে সাজানো রয়েছে হাজারো বই, তবে উল্লেখযোগ্য আনাগোনা নেই পাঠকদের। বই পড়া, পত্রিকা পড়া ও ফ্রি ইন্টারনেট সেবা সহ সকল সুবিধা থাকার পরেও পাঠকের উপস্থিতি একেবারেই কম। বিশিষ্টজনদের ধারণা মতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তি সহ নানাবিধ কারণে স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীদের বই পড়ার প্রতি অনীহা সৃষ্টি হচ্ছে। 

তরুণ প্রজন্ম দিনে দিনে সাহিত্য চর্চা ও বই পড়ার অভ্যাস হারিয়ে ফেলছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি অন্য বই উদ্বুদ্ধ না করাটা বইয়ের প্রতি অনীহা তৈরী হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন। 

গণ গ্রন্থাগারের বই পড়তে আসা গাইবান্ধা সরকারি কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী জলি আক্তার বলেন পাঠাগারের পরিবেশ চমৎকার, কিন্তু পাঠক উপস্থিতি কম, গোলাম মোস্তফা নামের অপর এক পাঠক বলেন, মোবাইল আসক্তি শিক্ষার্থীদের বই পড়া অনীহার কারণ, সরকারি গণ গ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান মো. সাইফুল ইসলাম পাঠক উপস্থিতির বিষয়ে কি উদ্যোগ নিয়েছেন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস পালিত হয়, জাতীয় দিবসগুলোতে রচনা চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন, প্রতি মাসে পাঠকদের সাথে মতবিনিময় সভা, বছরে চারবার স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় সহ নানা মূখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। 

পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য শিক্ষক অভিভাবক শিক্ষার্থী তথা সবাইকে সচেতন হতে হবে। গাইবান্ধা পাবলিক লাইব্রেরি একটি ঐতিহ্যবাহী পাঠাগার এটি প্রতিষ্ঠা হয় ১৯০৭ সালে। ১১৮ বছর ধরে এই ঐতিহ্যবাহী পাঠাগারটির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এক সময় বই পড়ার জন্য পাঠকের দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। সেখানে এখন পাঠক নেই বললেই চলে। এমনকি স্কুল-কলেজের পাঠাগার গুলোতেও পাঠকের উপস্থিতি কম বলে জানা গেছে। 

এ বিষয়ে গাইবান্ধা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. খলিলুর রহমান বলেন, বইয়ে বৈচিত্র নিয়ে আসতে হবে এবং স্কুল-কলেজে শিক্ষাথীদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক ও পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করতে পারলেই বইয়ের প্রয়োজন হবে। তখনই লাইব্রেরীগুলোতে পাঠক বাড়ানো সম্ভব হবে। 

যাযাদি/ এম