রোববার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১

পূর্বধলায় বেড়িবাঁধ ভাঙ্গনে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি

পূর্বধলা (নেত্রকোণা) প্রতিনিধি
  ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:২১
ছবি : যায়যায়দিন

নেত্রকোণার পূর্বধলায় আজ রবিবার বিকেলে জারিয়া ইউনিয়নের আনসার ক্যাম্পের পাশে নাটেরকোনা গ্রামে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এতে কংশ নদের পানি প্রবল বেগে উপজেলায় প্রবেশ করছে। ফলে প্লাবিত হয়ে পড়ছে পুরো এলাকা। পানিবন্ধী হয়ে পড়ছে বিভিন্ন এলাকার শতশত পরিবার। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় পরিবারগুলো দুর্ভোগে পড়ছে। বন্যার পানির কারনে তলিয়ে গেছে শতশত একর আমন ফসল। ভেসে যাচ্ছে মৎস্য খামার।

ভারী বর্ষন ও উজানের পানির নেমে আসায় নেত্রকোণার পূর্বধলায় গত কয়েকদিনধরে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়ে প্রতিনিয়ত পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। উজানের পানি নেমে আসায় কংস নদের পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছিল।

এই অবস্থায় উপজেলা প্রশাসন সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য একটি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়। প্রস্তুত রাখা হয় উপজেলার বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো।

এদিকে কংশ নদের পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ঝুঁকিতে পড়ে বেড়িবাঁধটি। বাঁধটি রক্ষায় স্থানীয় লোকজনের আজ রবিবার দিনভর প্রচেষ্টার পরও শেষ রক্ষা হয়নি।

উপজেলার জারিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম মন্ডল নান্টু বলেন, জারিয়া আনসার ক্যাম্পের পাশে নাটেরকোনা গ্রামের অংশে সন্ধার দিকে বাঁধটি ভেঙ্গে যায়।

এতে প্রবলবেগে পানি জারিয়া ইউনিয়ন হয়ে উপজেলায় প্রবেশ করছে। ফলে প্রতিনিয়ত উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির ব্যপক অবনতি হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে ভারীবর্ষন ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে।

উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নে কালীপুর, বাইঞ্জা এলাকার লোকজন পানিবন্ধী হয়ে পড়ে। এতে তাদের প্রনিতিয়ত দুর্ভোগ বাড়ছে। উপজেলার ঘাগড়া, জারিয়া, হোগলা, ধলামুলগাঁও খলিশাউড়, বৈরাটি ইউনিয়নসহ প্রতিটি ইউনিয়নে নীচু এলাকার আমন ফসল তলিয়ে গেছে।

মাছের খামার ভেসে যাচ্ছে। সব্জি ফসলের ব্যবক ক্ষয় ক্ষতি হচ্ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে প্রায় ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠে যাওয়ায় শিক্ষা কার্যত্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। উপজেলার কালীপুর গ্রামের দুর্গাপুজা উপযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক নিবেদন ঘোষ জানান, তাদের পুজা মন্ডপের মন্দিরে পানি প্রবেশ করছে। পুরো গ্রাম পানি বন্ধী হয়ে পড়ছে।

এতে আসন্ন দুর্গাপুজা উদযাপনে সমস্যায় পড়বে পুন্যার্থীরা। উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের বাইঞ্জা গ্রামের এমদাদুল হক কামাল বলেন, এক রাতের ব্যবধানে কংস নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঘাগড়া থেকে বাইঞ্জা গ্রামের রাস্তাটি তলিয়ে গেছে। গ্রামের মানুষের বাড়ী ঘরে পানি উঠে যাচ্ছে। পুকুরের মাছ ভেসে যাচ্ছে।

কুছখালী গ্রামের বাসিন্দা মো: শহিদ ব্যপারী জানান সকাল থেকেই কংশ নদের পানি নদের এপাড় ওপার প্রায় ৪ফুট ব্যবধান বিরাজ করছিল। কিছু এলাকা ঝুকিপুর্ণ হয়ে পড়লে এলকাবাসীর সহযোগিতায় মাটিভর্তি বস্তা দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।

উপজেলার কাপাশিয়া ও ধোবাউড়া উপজেলার পোড়াকান্দুলিয়া রাস্তাটি হাটু পানির নীছে তলিয়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মোতালিব জানান যে ভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে দুই একদিনের মধ্যে এই রাস্তায় দুই উপজেলার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়বে। ময়মনসিংহ-জারিয়া ঝানজাইল রেললাইনে জারিয়া অংশে ডুবো ডুবো অবস্থায় বিরাজ করছে। আজ রবিবার ধীরগতিতে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও আগামীকাল থেকে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা বিরাজ করছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আলমগীর কবির জানান, উপজেলায় ১৭শ হেক্টর আমন ফসল পানির নীচে তলিয়ে গেছে। তবে বিকেলে বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় এর পরিমান এখন আরও বাড়বে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: খবিরুল আহসান জানান, উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষনের জন্য একটি কন্ট্রোলরুল খোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে বন্যা কবলিত কিছু এলাকায় জরুরী ভিত্তিতে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলার আশ্রায়ণ কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে