রোববার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১

গুলিবিদ্ধ বন্ধুদের উদ্ধারে গিয়ে নিহত হয় রাজৈরের শাওন

রাজৈর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
  ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১৭:৩১
ছবি : যায়যায়দিন

স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র জনতার আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েছিল মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা বদরপাশা ইউনিয়নের পূর্ব দাড়াদিয়া গ্রামের শাহাবুদ্দিন মুপ্তি ও মাকসুদা বেগম দম্পত্তির একমাত্র ছেলে শাওন মুপ্তি (২২)।

পতনের পরে নিশ্চিন্তায় ঢাকা তাতীবাজার এলাকার বাসায় মায়ের সাথে ছিলেন তিনি। কিন্তু ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় হঠাৎ তাতীবাজার এলাকায় পুলিশের সাথে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।

এসময় শাওন তার কয়েকজন গুলিবিদ্ধ বন্ধুদের উদ্ধার করতে গিয়ে নিজেও গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে থাকে। পরের দিন ৬ আগস্ট ছেলের খোঁজ না পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পায় রক্তমাখা শাওনের নিথর দেহ। তখন থেকেই শুরু হয় শাওনের পরিবারের আহাজারি। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগল প্রায় মা।

স্বজন ও স্থানীয়রা জানায়, গত ২০ বছর আগে পৈত্রিক ভিটা বিক্রি করে স্ত্রী ও তিন সন্তান ফেলে রেখে পালিয়ে বিয়ে করে অনত্র চলে যান শাওনের বাবা শাহাবুদ্দিন। এরপর আর তাদের কোন খোঁজ নেননি। এরপরই শুরু হয় অসহায় পরিবারটি যুদ্ধ। ঢাকায় গিয়ে বাসায় বাসায় কাজ করে নিজের সন্তানদের পড়াশোনা করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয় মা মাকসুদা।

পরে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়ে ছেলেকে একটি কাপড়ের দোকানে চাকরি দেয়। মা ও ছেলের বেতনের টাকায় মোটামুটি ভালোই কাটছিল তাদের সংসার। কিন্তু সেই সুখ আর বেশিদিন সইলো না তাদের ভাগ্যে। ঢাকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে বিভিন্ন স্থানে শরিক হয়ে ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকার পালিয়ে যাওয়ার পরেও শান্তিতে বাড়ীতে ঘুমাতে পারলো না শাওন।

পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাহীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। পরিবারে বাবা না থাকায় দরিদ্র মা ও দুই বোন অসহায় হয়ে পড়েছে। যৌবন বয়স থেকেই কস্ট করে সন্তানদের নিয়ে জীবন যুদ্ধে হার না মেনে এখন সব স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়ায় ছেলের ছবি আর কবরের পাশেই পরে শুধু চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে চোখ ভাষাচ্ছেন শাওনের মা।

নিহত সাওন মুফতির ছোট বোন মনিফা আক্তার বলেন, ভাই না থাকায় অনেক কস্ট হচ্ছে আমাদের। আমাকে নিয়েও ভাইয়ের অনেক স্বপ্ন ছিল। নিহত সাওন মুফতির মা মাকসুদা বেগম জানান, শাওনের আসা ছিল চাকারি ছেড়ে বিদেশ গিয়ে মা বোনদের শান্তির সংসার করে দিবে, জমি কিনবে, থাকার মত একটা ঘর তৈরি করে দিবে। কিন্তু সেই আসা স্বৈরাচারী সরকারের পুলিশের গুলিতে ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। আমার ধারনা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসার অভাবে শাওন মারা গেছে।

এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি আমার ছেলেসহ সকল হত্যার বিচার যেন দ্রুত কার্যকর করা হয় এবং আমরা যেন খেয়ে বাঁচতে পারি সেই ব্যবস্থা করেন।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে