স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত শেরপুর জেলা। এর মধ্যে চারটি উপজেলা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। উপজেলাগুলো হলো নকলা, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতি ও শ্রীবরদী। নকলা উপজেলার গনপদ্দি, নকলা, উরফা ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। গতকাল থেকে নকলা পৌরশহরে পানি প্রবেশ করা শুরু করেছে। অনেকেই পানিবন্দি আবার অনেকেই ঘরের ধন্যার উপরে অবস্থান করছেন। তলিয়ে গেছে আবাদি কৃষি জমি। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে মৎস্য চাষীদের মাছের ঘের।
ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী জেলাটির চারটি পাহাড়ি নদীর উজানে পানি কমতে শুরু করলেও ভাটি এলাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ নিয়ে জেলার পাঁচ উপজেলার ৩০টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি অবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছে প্রায় দুই লাখ মানুষ। নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতীতে বন্যার পানিতে ডুবে দুই ভাইসহ ৭জনের মৃত্যু হয়েছে।
সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে বন্যায় আটকে পড়াদের উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে। তবে পানির প্রবল স্রোত আর পর্যাপ্ত নৌযানের অভাবে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
নালিতাবাড়ী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পানিতে এলাকার গুরুত্বপূর্ণ অনেক সড়ক এবং বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া ঝিনাইগাতি ও শ্রীবরদী উপজেলার বিরাট এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের কারণে অনেক জায়গা বসত বাড়ি ঘর ধসে গেছে এবং শস্য ও গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলার ভোগাই নদীর নাকুগাঁও পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার, নালিতাবাড়ী পয়েন্টে ৪৮ সেন্টিমিটার এবং চেল্লাখালীর ২৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অপর দু’টি পাহাড়ি নদী মহারশি ও সোমেশ্বরীর পানি এখনও বিপদসীমার সমান রয়েছে। এছাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে ব্রহ্মপুত্র, মৃগী ও দশানী নদীর পানি।
নকলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. মোশারফ হোসাইন বলেন, ১৯৮৮ সালের চেয়েও এবার বন্যা ভয়াভহ। ব্যক্তিগত উদ্যেগে ও সরকারি ভাবে যেসব ত্রান সামগ্রী আসছে তা বানবাসীর তুলনায় খুবই সামান্য। দেশের যারা বিত্তবান আছেন তাদের কাছে আবেদন আপনারা এগিয়ে আসুন বন্যার্তদের পাশে। নচেৎ বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে শেরপুর জেলা।
স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন নকলা অদম্য মেধাবী সংস্থা নির্বাহী পরিচালক প্রবাসী আবুু শরিফ কামরুজ্জামান বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যমত উদ্ধার কাজসহ শুকনা খাবার দিয়ে বন্যার্তদের পাশে থাকার চেষ্ঠা করছি। সবারই এগিয়ে আসা উচিৎ। সবাই যদি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে বানবাসিদের কিছুটা হলেও দু:খ লাঘব হবে।
মৎস্য চাষী শরিফ হাসান জানান,আমার জীবনে আমি এমন পানি দেখিনি। কিছু বুঝে উঠার আগেই সব শেষ হয়ে গেল। আমার ১২ টি পুকুর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। সব মাছ বন্যার পানিতে চলে গেছে। এতে করে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমি এখন নি:স্ব হয়ে গেছি।
নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দা তামান্না হোরায়রা বলেন, আমরা ইতিমধে্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের ত্রান সামগ্রী দেওয়া শুরু করেছি। সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাকিবুজ্জামান খান বলেন, আগামীকাল সোমবারের ভেতর কমবে সব নদীর পানি, উন্নতি হবে বন্যা পরিস্থিতির।
যাযাদি/ এসএম