দামুড়হুদার রায়সাবিল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শাপলা-শালুক                 

প্রকাশ | ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৩

হাসমত আলী, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

এক সময় গ্রাম-গঞ্জে ডোবা-নালায় এবং খালে বিলে, আমাদের জাতীয় ফুল শাপলার সমারোহ ছিল দেখারমতো।  দামুড়হুদার কুড়–লগাছির ঐতিহ্যবাহী রায়সাবিল থেকে ওষুধী  ও পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ জাতীয় ফুল শাপলা-শালুক বিলুপ্ত হতে চলেছে। দামুড়হুদার কুড়–লগাছির ঐতিহ্যবাহী রায়সাবিলে তার চিরচেনা রুপ হারিয়ে যেতে বসেছে। 

রায়সাবিলে এখন আর আগের মতো পাওয়া যায়না বিভিন্ন প্রজাতির শাপলা ফুল  ও গুল্মলতা। এর মধ্যে দৃষ্টিনন্দন মনোমুগ্ধকর লাল ও বেগুনি শাপলা ফুলের আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি। বর্ষা মওসুমে বিলে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয় শাপলা। আবহমান কাল ধরেই শাপলা মানুষের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। গ্রাম-গঞ্জের হাটবাজারে পাওয়া যেত শাপলা ফুলের মধু (পদ্মমধু), শালুক আর ঢেপের খইয়ের মোয়া। 

বিলাঞ্চলের স্বল্প আয়ের অভাবী মানুষ বিল থেকে পদ্মমধু, শাপলা-শালুক ও মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করত। এখন শুকনো মওসুমে রায়সাবিলে পানি কমে যাওয়ায় শুকিয়ে বিল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দেশী প্রজাতির মাছ, শাপলা, গুল্মলতা ও জলজপ্রাণী। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বিল ও নদীর জীবনচক্র। শুকনো মওসুমে বিলে আবাদি জমিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। বর্ষাকাল শুরু থেকে শরৎকালের শেষভাগ এ সময় পর্যন্ত বিশাল রায়সাবিলে শত শত মিটারের পর মিটার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকত নয়নাভিরাম লাল, বেগুনি ও সাদা শাপলা। বর্ষার শুরুতে শাপলার জন্ম হলেও হেমন্তের শিশিরভেজা রোদমাখা সকালে বিলে চোখ পড়লে রঙবেরঙের শাপলার বাহারি রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত। বিলে শাপলার নয়নাভিরাম এ দৃশ্য দেখার জন্য ছুটে আসতেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। এখনো বিলপাড়ের অনেকেই নৌকা নিয়ে বিল থেকে শাপলা তুলে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। 

গত শনিবার সকালে একদল শিশুরা তারা রায়সাবিল থেকে বিভিন্ন রংয়ের শাপলা তুলতে যায়। বেশী শাপলা পাইনি তাই অনেকেই মন খারাপ করে বাড়ি যাচ্ছে, এসময় মাইশা, তাবাসুম ও রাব্বি বলেন, গত বছর অনেক শাপলা পেয়েছিলাম বিলে এবছর খুব বেশী নেই। আমরা এগুলো নিয়ে অনেক সময় খেলা করি , আবার রান্না করেও খাই।

জানা যায়, সাদা বর্ণের শাপলা সবজি হিসেবে এবং লাল রঙের শাপলা ওষুধি গুণে সমৃদ্ধ। ছোটদের কাছে শাপলা ফুল খুবই প্রিয়। জমিতে উচ্চফলনশীল জাতের ফসল আবাদে অধিক মাত্রায় রাসায়নিক সার প্রয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন, অবৈধ দখল ও শুকিয়ে যাওয়ার কারণে বিলগুলো থেকে বিলুপ্ত হতে চলেছে শাপলা ফুল। এখন বিল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শাপলা। আগে অনেকে সৌন্দর্যের জন্য পুকুরে চাষ করতেন লাল শাপলা। এখন পুকুরে বিদেশী কার্প জাতীয় মাছ চাষ হওয়ায় বেগুনি ও লাল শাপলা বিলুপ্তির পথে। আগে গ্রাম-গঞ্জের হাটবাজারে পাওয়া যেত ঢেপের খই মোয়া। এখন আর আগের মতো পাওয়া যায় না পদ্মমধু ও সুস্বাদু ঢেপের খইয়ের মোয়া। শাপলা চুলকানি ও রক্ত আমাশয়ের জন্য বেশ উপকারী। ডায়াবেটিস, বুকজ্বালা, লিভার, ইউরিনারি সমস্যা ও নারীদের মাসিক নিয়ন্ত্রণে লাল শাপলা খুবই উপকারী। সাদা বেগুনি ও লাল রঙের। এর মধ্যে সাদা ফুলবিশিষ্ট শাপলা সবজি হিসেবে এবং লাল রঙের শাপলা ওষুধি কাজে ব্যবহৃত হয়। শাপলা খুব পুষ্টিসমৃদ্ধ সবজি।

যাযাদি/ এসএম