বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

গুলিবিদ্ধ স্কুলছাত্র রিয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় সিএনজিচালক পিতা

প্রকাশ | ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১:১৩

মো. বেলাল হোসাইন, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
গুলিবিদ্ধ স্কুলছাত্র জহিরুল ইসলাম রিয়াদ

গত ৫ আগস্ট দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ স্কুলছাত্র জহিরুল ইসলাম রিয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকায় রয়েছেন সিএনজি চালক পিতা। কবে ছেলে পুরোপুরি সুস্থ্য হবে, কিভাবে ছেলে ভবিষ্যত গড়বে এমন চিন্তায় দিন কাটছে পরিবারের। ৫ আগস্টের পর থেকে বির্ভিন্ন রাজনৈতিক দল, সেনাবাহিনী, সামাজিক সংগঠন ছেলের চিকিৎসায় এবং খোঁজখবর নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু আন্দোলনে গুলিবিদ্ধদের বিষয়ে এখনো রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন সহযোগীতা কিংবা মর্যাদার বিষয়ে ঘোষণা আসেনি। গুলিবিদ্ধ পা ভালো না হলে হয়তো স্বাভাবিক জীবনযাপন অসম্ভব হয়ে পড়বে রিয়াদের। 

জানা যায়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিজয়ের খবর শুনে বন্ধুদের সাথে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসেন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাতিসা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র জহিরুল ইসলাম রিয়াদ। এদিন দুপুর থেকে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম বাজারে আন্দোলনকারী জনতা, সাধারণ ছাত্রদের সাথে আন্দোলন বিরোধী সন্ত্রাসীদের সংঘর্ষ হয়। ৫ আগস্ট বিকাল আনুমানিক ৪টায় পায়ে গুলিবিদ্ধ হয় রিয়াদ। গুরুতর আহত অবস্থায় রিয়াদকে প্রথমে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে কুমিল্লা টাওয়ার হাসপাতালে নেয়। পরবর্তীতে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে বেশ কিছুদিক চিকিৎসাধীন ছিল রিয়াদ। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে সিএনজিচালক পিতা বেলাল হোসেন ছেলে রিয়াদকে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার পৌরসদরের পশ্চিম ধনমুড়ী গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসে। 

গত ৪ সেপ্টেম্বর (বুধবার) বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সৈনিক রিয়াজকে দেখতে যান চৌদ্দগ্রামে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী কমান্ডার মাহিম। এসময় রিয়াদ সাংবাদিক ও সেনাবাহিনীতে ৫ আগস্টের গল্প জানান। রিয়াজ বলেন, গত অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে আমাদের ছাত্রদের আন্দোলনের খবর শুনছি। আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ছাত্র-ছাত্রীদের নিহত ও আহত হওয়ার খবরে ঘরে থাকতে পারি না। গ্রামের বাড়িতে থাকায় ঢাকার আন্দোলনে শরীক হতে পারি নাই। তাই ৫ আগস্ট চৌদ্দগ্রামে বিজয় উৎসবের খবর পেয়েই বন্ধুদের সাথে ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়ি। 

এসময় স্কুলছাত্র রিয়াদ আরও বলেন, চাকরির জন্য যখন আমাদের ছাত্র ভাইয়েরা আবেদন করে, তখন মুক্তিযোদ্ধা কোঠা এবং ঘুষের জন্য চাকরি হয় না। একটি স্বাধীন থেকে আমার মতো সিএনজিচালকের ছেলের পক্ষে ঘুষ দিয়ে চাকরি করা সম্ভব না। তাই আন্দোলনে শরীক হই। আন্দোলন গুলিবিদ্ধ হয়েছি তো কি হইছে! এজন্য কোন আপসোস নেই, দেশতো স্বাধীন হইছে, মুক্ত হইছে।  

রিয়াদের বাবা বেলাল হোসেন বলেন, ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে সরকারিভাবে চিকিৎসা হয়েছে। এসময় জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানসহ অনেকেই আমার ছেলেকে দেখতে আসেন। পারিবারিক অভাবের কারণে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা শেষ না করেই ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে আসি। রিয়াজ দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এই বয়সের একটি ছেলে কিভাবে এই ধকল কাটিয়ে কবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে তা নিয়ে শংকায় আছি। সরকার যদি কোনভাবে আমার ছেলের ভবিষ্যতের কোন দায়িত্ব নেয় তবে আমার পরিবারের আশংকা অনেকটাই কমে যাবে। 

যাযাদি/ এসএম