শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১

কালিয়াকৈরে আ’লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা ছয় নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
  ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১৮:২২
সংগৃহীত ছবি

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে তিনটি হত্যা মামলার পর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় এবার আরেকটি একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ নিয়ে হত্যা ও হত্যার চেষ্টায় মোট চারটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রীসহ দেড় হাজারের বেশি আসামী করা হয়েছে। এসব মামলায় আওয়ামীলীগের ছয় নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে শনিবার দুপুরে গাজীপুর জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলার উত্তর দাড়িয়াপুর এলাকার মৃত জমশের আলীর ছেলে ইব্রাহিম খলিল, আটাবহ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য ও পশ্চিম খোলাপাড়া এলাকার মৃত মবেদ আলীর ছেলে ইয়াসিন আলী, একই ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সাধারন সম্পাদক ও গোসাত্রা এলাকার হাতেম আলীর ছেলে শাহরিয়ার সুজন, সূত্রাপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ও টানসূত্রাপুর এলাকার মৃত বিল্লাল উদ্দিনের ছেলে জলিল হোসাইন, একই ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও উত্তরহিজলতলী এলাকার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে মোস্তাক হোসেন এবং একই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও মোস্তাকের ছেলে সম্প্রাট হোসেন।

মামলা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মামলার বাদী রুবেল শেখ নড়াইলের লোহাগড়া থানার আড়পাড়া এলাকার কামরুল শেখের ছেলে। তিনি কালিয়াকৈর উপজেলার হরিণহাটি এলাকায় বসবাস করেন। উল্লেখিত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে জুলুমবাজ, স্বৈরাচার, ও খুনী শাসক শেখ হাসিনার সরকার বিদেশে পলায়নের খবর পেয়ে আনন্দ মিছিলে যোগ দেয় রুবেল শেখ। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আনন্দ মিছিলটি উপজেলার সফিপুর বাজার থেকে পাশের আনসার একাডেমির সামনে পৌছে। এসময় জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগান নিয়ে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা দেশীয় আগ্নেয় অস্ত্র, রামদা, চাপাতি, কুড়াল, লাঠি-সোটাসহ পিছন থেকে অতর্কিত হামলা করে। তাদের নির্দেশে আনসার বাহিনীর সদস্যরা ওই আনন্দ মিছিল লক্ষ্য করে ব্যাপক গুলিবর্ষণ করেন। এসময় ওই আনন্দ মিছিলে অংশগ্রহণকারী অনেকে আহত হন। এতে রুবেলের শরীরের বিভিন্ন স্থান ছররা গুলি বিদ্ধ হয়ে গুরুতর জখম হন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় দুই মাস পর শুক্রবার সকালে রুবেল শেখ বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আকবর আলী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাসেলসহ ১৩০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো ৩০০ নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে।

গাজীপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (কালিয়াকৈর সার্কেল) আজমীর হোসেন ওই মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রধান আসামি করা হয়েছে রেজাউল করিমকে। অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আকবর আলী, শ্রীফলতলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফরহাদ হোসেনসহ আরো অনেকে।

এদিকে বর্তমান গণঅভুথ্যান পরবর্তী প্রেক্ষাপটের কারণে ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় নিহতের পরিবার ও আহত ব্যক্তি কালিয়াকৈর থানায় মোট চারটি মামলা দায়ের করেছেন। এর মধ্যে তিনটি হত্যা ও একটি হত্যার চেষ্টা মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হকসহ দেড় হাজারের বেশি আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে। এসব মামলায় পুলিশ বিভিন্ন এলাকা থেকে শুক্রবার রাতে ইব্রাহিম খলিল, ইয়াসিন আলী, শাহরিয়ার সুজন, জলিল হোসাইন, মোস্তাক হোসেন ও তার ছেলে সম্প্রাট হোসেন নামে ছয়জন আওয়ামীলীগ ও অংগসংগঠনের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুরে গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের গাজীপুর জেলহাজতে পাঠানো হয়।

কালিয়াকৈর থানার ওসি অপারেশন যোবায়ের আহম্মেদ জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই আসামীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে দুপুরে গ্রেপ্তারকৃতদের গাজীপুর জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।

যাযাদি/এসএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে