উখিয়ায় পরিবহন সেক্টরের শীর্ষ  চাঁদাবাজ বাদশাসহ আটক ৫

প্রকাশ | ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:০০

উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
ছবি : যায়যায়দিন

কক্সবাজারের  উখিয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া দাপুটে ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিল নুর মোহাম্মদ বাদশা। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী ছত্রছায়ায় উখিয়ায় বিস্তর প্রভাব ও ক্ষমতা চালিয়ে রীতিমতো আলোচনার শীর্ষে চলে  আসেন তিনি। ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকার পতন হলে উখিয়ার দাপুটে নেতা বাদশার ক্ষমতারও পতন হয় এলাকায়।

সরকার পতনের এক দফা দাবিতে  আন্দোলনরত ছাত্র জনতার উপর সশস্ত্র হামলা সংক্রান্তে তার বিরুদ্ধে কক্সবাজারের উখিয়া থানায় ০৫টি মামলা দায়ের করা হয় । যার প্রেক্ষিতে  বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) বিকালে তাকে আটক করে র‍্যাব -১৫।

জানা যায়, উখিয়া সিকদার বিল এলাকার সৈয়দ নুরের ছেলে নুর মোহাম্মদ বাদশা (৪০) এক সময় তাঁর নুন আনতে পান্তা ফুরাই অবস্থা। সংসার চালাতে নেমে পড়ছিলেন গাড়ির জগতে। প্রথমে হেলফার পরে ড্রাইভার হয়ে বেশ কয়েকবছর তিনি জীবন নির্বাহে সংগ্রাম করেন। তারপরও সংসারিক জীবন চালাতে হিমসিম হচ্ছিল তার। এরপর থেকে জড়িয়ে পড়েন অবৈধ কর্মকান্ডে। ব্যবহার করেছেন তৎসময়ের স্থানীয় চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীসহ  প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতাদের।

উখিয়া-টেকনাফ আসনের গ্রেফতারকৃত সাবেক এমপি ইয়াবা সম্রাট আব্দুর রহমান বদি ও উখিয়া  উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর অন্যতম সহযোগী হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জোরপূর্বক ভূমি দখল, কক্সবাজারের পরিবহন সেক্টরে সিন্ডিকেট করে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত ছিল। জীপ মালিক সমিতি গঠন করে সমস্ত ডাম্পার গাড়ি থেকে প্রতি মাসে নিয়মিত মাসিক চাঁদা আদায় করতো। এছাড়াও উখিয়া কক্সবাজারগামী সড়কের সি-লাইন নামক বাস সমিতি গঠন করে উক্ত লাইনের বাসগুলো থেকে দৈনিক হারে চাঁদা আদায় করতো।  তার এই অপকর্মের সংবাদ স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশের কারণে বিভিন্ন সাংবাদিককে প্রাণনাশের হুমকিসহ ব্যাপক হয়রানি করতো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার ঘনিষ্ঠ আপন এক ব্যাক্তি জানিয়েছে, বর্তমানে তার নামে-বেনামে যত সম্পদ দৃশ্যমান হয়েছে সব কালো টাকায়। বাদশা সুযোগে সৎ ব্যবহার করে এসব সম্পদ অর্জন করেছেন। উখিয়া থেকে গাড়ি চালিয়ে কক্সবাজার যাওয়ার পথে সকল যাত্রীদের তল্লাশী করা হলেও ড্রাইভারদের তল্লাশী করা হতো না। এটি এখনো চলমান রয়েছে। মাঝে মধ্যে তল্লাশি করা হয় কোন ইনফরমেশন বা সন্দেহজনক হলে।

বাদশা সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ইয়াবার বড় বড় চালান গুলো ক্যারিং করতো ড্রাইভার সেজে। সে ব্যবসা করেনি সত্য। কিন্তু তার চালিত গাড়ি করে ইয়াবা ক্যারিং করে কক্সবাজার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার কন্টাক্ট নিয়ে মোটা অংকের টাকা কামিয়েছেন।

হাতে টাকার গরম আসলে গাড়ির ড্রাইভারি ছেড়ে দিয়ে নিজেই কিনে নেন সী-লাইন গাড়ি। গাড়ির মালিক বনে যাওয়ায় নিজেকে আরো ক্ষমতাধর  করতে প্রবেশ করেন আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে।  রাজনীতি শুরু করে সরকার দলীয় প্রতিটি প্রোগ্রামে মোটা টাকার ডোনেশন দিয়ে হয়ে উঠে নেতাদের আস্তাভাজন। ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে রাজাপালং ৫নং ওয়ার্ডের সভাপতির পদটিও তিনি ভাগিয়ে নেন তার কালো টাকায়।

পরে আরো বেপরোয়া হয়ে তৎসময়ে দায়িত্বে থাকা শ্রমিক নেতাদের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি করে দিয়ে রাতারাতি নিজেই হয়ে উঠেন পরিবহন  শ্রমিক নেতা। এভাবেই তার উত্থান শুরু হয়ে উখিয়ায় গড়ে তুলেন নামে বেনামে অটল সম্পদ। সম্প্রতি কোটি টাকার জমি ক্রয় করে নির্মাণ করতেছে বহুতল ভবন।

তার গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আরিফ হোসেন মুঠোফোনে বলেন, বাদশাহকে র‍্যাব কর্তৃক আটক করেছে।

র‍্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া) অফিসার মোঃ আবুল কালাম চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, বাদশাকে আটক করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে কক্সবাজার জেলার সদর মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে উখিয়া থানার পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে নুরুল আবছার, সৈয়দ নুর, হেলাল উদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলম নামে ৪ পলাতক আসামিকে গ্রেফতার করেছে বলে জানিয়েছেন উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম। তারা সকলেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ও সক্রিয় কর্মী বলে জানা গেছে।

যাযাদি/ এসএম