বুধবার, ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১

নিখোজ মুক্তিযোদ্ধা চাচার ভাতা নিচ্ছেন সৎ ভাতিজা  

শরীয়তপুর সদর প্রতিনিধি
  ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১৪:০৩
তাওহীদ ইসলাম রাফিন বেপারী

শরীয়তপুরের নড়িয়ায় নিখোঁজ চাচার আলী আজম বেপারীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে সৎ ভাতিজা তাওহীদ ইসলাম রাফিন বেপারী(২১) এর বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে তথ্য গোপন করে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মেনেজ করে এককালীন সোনালী ব্যাংক থেকে তুলেছেন কয়েক লাখ টাকা। এ ঘটনায় এলাকার অন্যান্য মুক্তি যোদ্ধাদের মাঝে বইছে নানা সমালোচনার ঝড়।

তার জন্মদাতা পিতা মোয়াজ্জেম হোসেন বেপারী একজন বীর মুক্তি যোদ্ধা।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বিঝারি ইউনিয়নের বাসিন্দা আলী আজম বেপারীও তার সৎ ভাই মোয়াজ্জেম বেপারী। তার পিতা মৃত মিরজা আলী বেপারী তৎকালীন সময় দুটি বিবাহ করেন। যার কারনে তারা দুই ভাই দুই মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়ায় তারা একে অপরের সৎভাই বিবেচিত। ততকালিন সময় যুদ্ধ করতে গিয়ে আলী আজম বেপারী শারিরীক ভাবে আঘাতে আহত হন। ততকালীন ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করার এক সপ্তাহ পর থেকেই তিনি নিখোঁজ হয়ে যায়। পরিবার এলাকার কেউ তার খোঁজ পায়নি। মুক্তিযুদ্ধ করার আগে অথবা পরেও তিনি বিবাহ করেনি। নেই কোন সন্তান, বাবা মা ও আপন ভাই বোনও। এরপর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার প্রবর্তিত ৩০০ টাকার দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বর্তমানে সব মুক্তিযোদ্ধার জন্য সম্মানী ভাতা হিসেবে প্রবর্তিত হয়েছিল। সেসময় থেকে রাফিনের বাবা মোয়াজ্জেম বেপারীও বীরমুক্তিযোদ্ধা সম্মানি পেতে শুরু করে। তবে তার সৎ ভাই মুক্তিযোদ্ধা আলী আজম বেপারী নিখোঁজ থাকায় ২০২৪ সাল পর্যন্ত কোন খোজ মেলেনি তার। কিন্তু ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে অবৈধভাবে তার সৎ ভাই মোয়াজ্জেম বেপারী নিজের ছোট সন্তান রাফিন বেপারীকে দিয়ে নিখোজ ভাইয়ের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা তুলছেন।

বীর মুক্তি যোদ্ধা মোয়াজ্জেম বেপারী বলেন, আমি নিজেই একজন মুক্তিযুদ্ধা আমার ভাইও একজন মুক্তিযুদ্ধা। আমার ভাই নিখোঁজ রয়েছেন। তার কোন ছেলে সন্তান বা স্ত্রী নেই। তাই আমি নিজেই যেহেতু সরকারিভাবে মুক্তি যোদ্ধা ভাতা পাই। আর কোন ভাতা আমি পাব না। সেই জন্য আমি স্টাম্পের মাধ্যমে আমার ছোট ছেলেকে পাওয়ার দিয়েছি তাই সে আমার ভাই মুক্তি যোদ্ধা আজম বেপারীর ভাতা পায়। এটা মুক্তি যোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের থেকে অনুমোদন করিয়ে এনেছি।

ভাতাভোগী রাফিন বেপারী বলেন, আমি আমার চাচা আলী আজম বেপারীর একজন ওলিওয়ারীশ হিসাবে ভাতা পাচ্ছি। সরকার আমাকে দিয়েছেন।

নড়িয়া সোনালী ব্যাংক অফিসার বলেন, আমরা কাগজপত্র দেখেই তার একাউন্ট খুলেছি। তবে রাফিন বেপারী যদি সৎ ভাতিজা হয় তাহলে তাকে বাতিল করা হবে। কারন সৎ ভাতিজা কখনো ভাতাভুগী হবে না।

নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শংকর চন্দ্র বৈদ্য বলেন, ওই মুক্তিযোদ্ধা নিখোঁজ হওয়ার পর তার ভাতা তুলছিল তার সৎ ভাতিজা। আমরা সংবাদটি পেয়েই সৎ ভাই মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম বেপারীকে ডেকে আনলে তিনি সৎ ভাই আলী আজম বেপারীর কথা শ্বিকার করেন। তবে তিনি তার ভাইর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নিতে কাগজপত্রে সৎ ভাই দেখাননি। তাই তার ভাইয়ের মুক্তিযোদ্ধা ভাতার কার্ড বাতিল এর জন্য এবং কি এ পর্যন্ত যত ভাতা পেয়েছে ফেরত দেওয়ার জন্য মুক্তি যোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব নুসরাত জাহান বলেন, কোন মুক্তি যোদ্ধা যদি নিখোঁজ হয়ে যায় তার কোন ওয়ারিশ না থাকে। যেমন তার বাবা-মা স্ত্রী সন্তান ও আপন ভাই ছাড়া কেউ তার ভাতা ভোগী হতে পারবেনা। এমন কোন জায়গায় যদি হয়ে থাকে আমরা অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নিব।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে