উল্লাপাড়ায় সাবেক এমপি তানভীর ইমামের সহযোগিতায় মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুলের ১১ কোটি টাকা আত্মসাত

প্রকাশ | ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১৭:০৭

উল্লাপাড়া সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
ছবি যাযাদি

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় সাবেক এমপি তানভীর ইমামের সহযোগিতায় মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুলের ১১ কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন স্কুল ম্যানেজিং কমিটির দুই সভাপতি, মীর আরিফুল ইসলাম উজ্জল, কাজী এহসানুল হক সন্টু, ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ রকিবুল ইসলাম ।

দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে গত সাত বছরে উল্লাপাড়া সদরের সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুলের ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির দুই সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ শাসনামলে দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিদ্যালয়টি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন ও প্রতিষ্ঠাতাকে দাতা সদস্য থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা, বিদ্যালয়ের ভবন বিক্রি ছাড়াও নানাবিধ অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।  এসবকিছুরই মাষ্টার মাইন্ড হিসেবে কাজ করেছেন সাবেক এমপি, তানভীর ইমাম।

সলপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, কাজী এহসানুল হক সন্টু, সাবেক, এমপি, তানভীর ইমামের ব্যক্তিগত সহকারী, মীর আরিফুল ইসলাম উজ্জলের মাধ্যমে মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুলের ১১ কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের সকল অনিয়ম, দূর্নীতি, অপকর্মের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন তাদের মনোনীত প্রধান শিক্ষক মোঃ রকিবুল ইসলাম।

 ফলাফলের দিক দিয়ে রাজশাহী বোর্ডের মধ্যে সেরা ১০ টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে থাকা প্রতিষ্ঠানটি আওয়ামী লীগ শাসনামলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি অনিয়ম আর দূর্নীতি করে প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়েছে। বিদ্যালয়টিকে টাকা তৈরির কারখানা বানিয়েছিলেন, তানভীর ইমাম ।

বিদ্যালয় সুত্রে জানাযায়, প্রথমেই সাবেক, এমপি তানভীর ইমাম  নিয়মবহির্ভূতভাবে নিজেই মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুলের এডহক কমিটির সভাপতি হন। সভাপতি হয়েই তিনি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এম. আকবর আলী ও দাতা সদস্য মোমেনা আলীকে বিদ্যালয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এর থেকে শুরু হয় তানভীর ইমাম বাহিনীর লুটপাটের একক আধিপত্য। এর ৬ মাস পরে তার ব্যক্তিগত সহকারী শওকত ওসমান কে সভাপতি করেন। দুই বছর পরে এই কমিটির মেয়াদ শেষ হলে শওকত ওসমানের সহকারী হিসাবে পরিচিত কাজী এহসানুল হক সন্টু কে সভাপতি করেন। সন্টু কাজীর মেয়াদ শেষ হতে না হতেই, এমপি তানভীর ইমামের ব্যক্তিগত আরেক সহকারী, মীর আরিফুল ইসলাম উজ্জল কে সভাপতির চেয়ারে বসানো হয়।এর পর থেকে উপজেলার সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুল এন্ড কলেজ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেন। বিদ্যালয়টি তাদের মতো করে পরিচালনা করতে প্রধান শিক্ষক কে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নিজেদের পছন্দের এক সহকারী শিক্ষক রকিবুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। নামমাত্র প্রধান শিক্ষক মোঃ রকিবুল ইসলামকে দিয়ে বিদ্যালয়ে নানাবিধ অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে অর্থ লোপাট শুরু করেন। নিজেদের ইচ্ছে মতো স্কুলের ব্যাংক একাউন্ট থেকে অর্থ উত্তোলনসহ ভর্তি বানিজ্যের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। এছাড়াও তানভীর ইমাম এই কমিটিকে ব্যবহার করে স্কুলের নাম পরিবর্তন করে মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুলের পরিবর্তে তার মা ইসমতারা বিজ্ঞান স্কুল করার চেষ্টা করেন। ২০১৪- থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি ফি বেতন ও অন্যান্য অর্থ আদায়ের হিসাবেও ব্যাপক গরমিল রয়েছে। ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই সাত বছরে বিদ্যালয়ের ব্যাংক একাউন্ট থেকে প্রায় ২১ কোটি টাকা উত্তোলন করে  আত্মসাত করেছেন।  এই ১০ কোটি টাকা বিভিন্ন খাতে ব্যয় দেখানো হলেও বাকি ১১ কোটি টাকার কোন হিসাব দেখাতে পারেনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ রকিবুল ইসলাম। ১১ কোটি টাকা বিভিন্ন সময়ে  শওকত ওসমান, কাজী এহসানুল হক সন্টু, মীর আরিফুল ইসলাম উজ্জল, ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ রকিবুল ইসলাম আত্মসাৎ করেছেন। রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে স্কুলের অবকাঠামো থেকে শুরু করে পুরো শিক্ষা ব্যবস্হাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। স্কুলটির এমন ভগ্নদশা দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মান ফিরিয়ে আনার দাবি এলাকাবাসীর।

 মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ জানান, স্কুলের পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ রকিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে অর্থআত্বসাতের মামলা দায়ের করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে প্রমানিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


যাযাদি/এসএস