রোববার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১

দক্ষিণখানের কাওলায় বিএনপির দোয়া মাহফিলের মঞ্চে বসা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নামধারী সন্ত্রাসী জাকির, ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি!

বিমানবন্দর / দক্ষিণখান থানা প্রতিনিধি
  ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮:৪৫
ছবি : যায়যায়দিন

পরিচিত অপরিচিত অনেক আওয়ামীলীগের অনেকেই নানা চল চাতুরী করে বিএনপিতে ঢুকে পড়ছে। বিএনপির একশ্রেণির সুবিধাবাদী নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সম্প্রতি সারা দেশে এমন কয়েক টি ঘটনা ঘটেছে । বিএনপির ওয়ার্ড ,থানা লেবেলের অনেক মিছিলে তারা যোগদান করে ।এই বিষয়ে বিএনপির হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা রয়েছে কোনো ভাবেই আওয়ামীলীগের কোনো নেতাকর্মী কিংবা সমর্থক বিএনপিতে যেমন ঢুকতে পারবেনা তেমনি আশ্রয় পশ্রয়ও দিতে পারবেনা । তারপরেও কোনো না কোনো ফাঁক ফোকরে এরা ঢুকে পড়ছে ।

সম্প্রতি এমন একটি ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর বিমানবন্দর থানা কাওলা এলাকায়। দক্ষিণখান থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জাকির ও হান্নান স্থানীয় বিএনপির এক নেতার সমর্থক ফোরামের উদ্যোগে আলোচনা সভায় মঞ্চে বিএনপি নেতাদের পাশে বসে বক্তৃতা করায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে ।

সূত্র জানায়, দক্ষিণখান এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন জাকির (৪২) এবং আব্দুল হান্নান পলাশ (৪৮) আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত।তারা এলাকায় পোস্টের ছাপিয়েও পরিচিতি হওয়ার চেষ্টা করেছে । এরা ৪৯ নং ওয়ার্ড এর পলাতক সাবেক কমিশনার আনিসুর রহমান নাঈম ও সাবেক এমপি হাবিব হাসানের সমর্থক ও অনুসারী। এদেরকে প্রয়াত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ঢাকা ১৮ আসনের সাবেক এমপি সাহারা খাতুনের সাথেও থাকতে দেখতে গিয়েছে। বিগত আওয়ামী দুঃশাসনের সময়ে তারা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা অপকর্মকরে বেড়িয়েছে । এ চক্রের ফাঁদে আটকা পড়ে বহু লোক সর্বস্বান্ত হয়। দক্ষিণ খান, তিনশ’ফুট, পূর্বাচল এবং ভাটারা এলাকায় এরা ভূমিদস্যু হিসাবেও পরিচিত।

এলাকাবাসী জানায়, জাকির-হান্নান মানিক জোড়। দক্ষিণখান কাওলা এলাকার বাসিন্দা। সব সময় একসঙ্গে ঘোরাফেরা করে। এরা অবৈধ অস্ত্রধারী। এছাড়া আওয়ামী লীগের স্থানীয় কমিশনার আনিসুর রহমান নাঈম এবং ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য মোহাম্মদ হাবিব হাসানের ক্যাডার বাহিনীর অন্যতম সদস্য হিসাবে পরিচিত রয়েছে ।

জাকিরের পিতার নাম আব্দুল আউয়াল। ২০১,নয়াবাড়ী ,কাওলা,দক্ষিণখান । এই জাকিরের বিরুদ্ধে দক্ষিণখান থানায় ১২ টি মামলা এবং বিমানবন্দর থানায় ১টি মামলার সিপিআর পাওয়া গিয়েছে ।

আওয়ামী লীগের ১৬ বছরে এরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে ,সন্ত্রাসী ,চাঁদাবাজি করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন। এদের অত্যাচারে এলাকার মানুষ বিগত ১৬/১৭ বছর মুখ খুলে কথা বলার সাহস পায় নাই । এখন তারা নিজেদের বাঁচাতে এবং সাম্রাজ্য রক্ষায় বিভিন্ন কৌশলে খোলস পাল্টে বিএনপির পতাকা তোলে ভিড়তে চাচ্ছে ।

এ চক্রের গডফাদার কমিশনার নাঈম এবং সাবেক এমপি হাবিব হাসান বর্তমানে আত্মগোপনে থাকলেও গ্রেফতার এড়াতে জাকির-হান্নান এখন ভোল পাল্টে বিএনপিতে ঢুকে পড়েছে। এখন তারা বলার চেষ্টা করছেন আগে বিএনপি করতেন। অথচ এদের কারণে আওয়ামী লীগের স্বৈরশাসনের সময় বিএনপির বহু নেতাকর্মী রাতে বাসায় ঘুমাতে পারেনি। জাকির-হান্নানের দ্বারা নানাভাবে হয়রানির শিকার ভুক্তভোগীরা এদের দ্রুত গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণখান বিএনপির উল্লিখিত দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার প্রধান অতিথি এবং বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আলাউদ্দিন সরকার টিপু দৈনিক যায়যায়দিনকে বলেন, যে অনুষ্ঠানে জাকিরকে দেখা গিয়েছে সেটি গত ৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় । এই অনুষ্ঠানে বহু মানুষের উপস্থিতি ছিল ।কে কখন স্টেজে এসে বসেছে তা নিরুপন করার সুযোগ হয় নাই তিনি আরো বলেন ,গত ১৭ বছর পর এলাকায় এসেছেন। যে কারণে অনেককে তিনি চেনেন না। এজন্য তার অজান্তে ওই সভায় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য জাকির ও হান্নান বিএনপি সেজে উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কিংবা মূল আওয়ামীলীগের নেতা কর্মী যেই হউক তাদের কোনো সুযোগ নাই বিএনপির কোনো মিটিংয়ে প্রকাশ্যে উপস্থিত হওয়া । এই বিষয়ে আমাদের কেন্দ্রের নির্দেশনা রয়েছে । বিগত আওয়ামীলীগ সরকার এর সময়ে বিএনপির সর্বোচ্চ থেকে শুরু করে তৃনমুল এর নেতাকর্মীদেরকে মিথ্যে,বানোয়াট মামলা দিয়ে জীবনটা দুর্বিষহ করে তুলেছে ।আর আমরা এদেরকে গ্রহণ করবো তা কি করে সম্ভব । আমি কথা দিচ্ছি , আগামীতে এই বিষয়ে আমরা সতর্ক থাকবো । যাতে আওয়ামীলীগের যে কোনো নেতাকর্মী,কিংবা সন্ত্রাসীরা কোনো ভাবেই আমাদের দলে ভিড়তে না পারে ।

একটি অনুসন্ধানে দেখা যায় , বিএনপির উত্তরা অঞ্চলের অর্থাৎ ঢাকা ১৮ আসনের ৭ টি থানায় ব্যাপক সমন্বয়হীনতা রয়েছে । গ্রূপভিত্তিক রাজনীতির কারণে আওয়ামীলীগের মাঠপর্যায়ের কিছু নেতা,সমর্থক বিভিন্ন থানা,ওয়ার্ড ,ইউনিটের বিএনপির নেতাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ঢুকে পড়ছে ।তবে ঘরোয়া বৈঠকে তাদেরকে দেখা না গেলেও বিভিন্ন সভাসমাবেশের মিছিলে দেখা যাচ্ছে । এই বিষয় গুলনিয়ে বিএনপির দায়িত্বশীল কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে চিহ্নিত করেছে । এবং সতর্ক থাকবেন বলেও বলছেন ।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে