পত্নীতলায় কৃষকদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে বস্তায় আদা চাষ

প্রকাশ | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২৪ | আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২৭

পত্নীতলা (নওগাঁ) প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

যে কোন বাঙ্গালি রান্নায় মসলা অতি প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ। আর তাই বাংলাদেশে মসলার চাহিদা মেটাতে কৃষি বিভাগ নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় অন্যান্য মসলার পাশাপাশি আদা চাষেও বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে কৃষি বিভাগ।

বিশেষত বস্তায় আদা চাষ প্রযুক্তি কৃষকদের মাঝে ব্যপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বস্তায় আদা চাষ যেকোন পতিত জমি কিংবা বাগানের ছায়াযুক্ত স্থানে অল্প ব্যয়ে ও শ্রমে লাভ বেশি হয় আবার মাটিবাহিত রোগের সংক্রমণ কম হয়। অতিবৃষ্টি বা বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে না। এ জন্য বাড়তি জমির প্রয়োজন না হওয়ায় আবাদি কমে যাওয়ার আশংকাও থাকে না এবং সেই সাথে এটি অত্যান্ত লাভজনক। আদা রাইজেম জাতীয় বীরূৎ মসলা এবং ভেষজজাতীয় উদ্ভিদ। আদিকাল থেকে মানুষ আদার বিভিন্ন ব্যবহার করে আসছে। মুখের রুচি বাড়াতে, বদহজম, সর্দি, কাশি আমাশয়, জন্ডিস ও পেটফাপায় আদার ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে আদার সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে মসলায়। এর রাইজমের সুগন্ধি ও ঝাঁঝালো হওয়ায় খাবারের স্বাদকে বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুণ।  

সাম্প্রতিক সময়ে পত্নীতলা উপজেলার ১ টি পৌরসভা ও ১১ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় পরীক্ষা মূলক ভাবে কৃষকদের বস্তায় আদা চাষ করতে দেখা যাচ্ছে। অল্প ব্যয়ে  অধিক  লাভের আশায় দিন দিন এই পদ্ধতিতে আদা চাষের পরিধি বাড়ছে। এবছর উপজেলায় মোট ১ লক্ষ ৫০ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছেন অত্র উপজেলার কৃষকগন। যা থেকে দু’শ পঁচিশ মেট্রিক টন আদা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে কৃষকদের আয় হবে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মত।

উপজেলার পাটিচরা ইউনিয়নের কৃষক ইলিয়াস আলী বলেন, তিনি উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে তাঁর আম বাগানে ২ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছেন। তিনি জানান, কৃষি বিভাগের সহায়তায় মসলা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৫শ বস্তায় আদা চাষের সহায়তা পাওয়ার পর নিজ উদ্যোগে মোট ২ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছেন। গাছের বৃদ্ধি ও বর্তমান অবস্থা দেখে তিনি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন পাবেন বলে আশা করছেন। একই চিত্রের দেখা মেলে পত্নীতলা উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নেও বিশেষ করে নজিপুর, পত্নীতলা, আকবরপুর, আমাইড় ও দিবর ইউনিয়নেও আম বাগানে আদা চাষ করেছেন শতাধিক কৃষক।

আদা মুলত আংশিক ছায়াযুক্ত স্থান পছন্দ করে, তাই পত্নীতলা উপজেলার আম বাগানে আদা চাষ সামনে আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করেন উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ সোহরাব হোসেন। বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি জানান, আদা চাষে সময় বেশি লাগে কিন্তু বস্তায় চাষ করা যায় এ কারণে এটি অত্যান্ত লাভজনক। সাধারণত বছরের এপ্রিল-মে মাস আদা রোপনের উপযুক্ত সময়। ভাল ফলন পেতে প্রথমে মাটি ১০-১২ কেজি, সাদা বালু ৪-৫ কেজি, গোবর ৫ কেজি, ভার্মি কম্পোস্ট ২ কেজি, এমওপি ১০ গ্রাম, টিএসপি ২০ গ্রাম, ছাই ১ কেজি, কার্বফুরান ১০ গ্রাম, দস্তা ৫ গ্রাম ও বোরন ৫ গ্রাম মিশিয়ে ১৫-২০ দিন পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। বস্তায় ৬০-৭০ গ্রামের কন্দ ৩-৪ সেঃমিঃ গভীরে রোপণ করতে হবে। ইউরিয়া ও ডিএপি সার পরবর্তিতে ২ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। কান্ড পচা ও ল্যাদা পোকা রোধে অনুমোদিত বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হবে। বস্তায় আদা থেকে ফলন পেতে ৮-১০ মাসের মত সময় লাগে। প্রতি বস্তা থেকে ১.৫ কেজি বা ২ কেজি পর্যন্ত আদা পাওয়া যায়, তাতে করে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ টাকা খরচ করে প্রতিবস্তা থেকে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত লাভ করা সম্ভব। সাধারনত জানুয়ারী ফেব্রুয়ারী মাসেই আদা উঠানোর উপযুক্ত হয়ে যায়। সাধারণ জমিতে আদা চাষ করলে রোগ দেখা দিলে গোটা জমির ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে কিন্তু বস্তায় আদা চাষ করলে রোগাক্রান্ত হলে ওই বস্তায় সীমাবদ্ধ থাকে, এতে করে অন্য বস্তায় সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ পদ্ধতিতে একদিকে যেমন মাটিবাহিত রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়, অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে বস্তা অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। বাড়ির উঠোন, প্রাচীরের কোল ঘেঁষে বা বাড়ির আশেপাশের ফাঁকা জায়গা অথবা ছাদে যেখানে খুশি রাখা যায়। এর জন্যে আলাদা কোনও জমি বা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। তাই এ প্রযুক্তি বর্তমানে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

যাযাদি/ এসএম