জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেল মধুপুর গড়ের ঐতিহ্যের আনারস

প্রকাশ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩:৫৯

মেহেদী হাসান বকুল, মধুপুর (টাঙ্গাইল)
ছবি : যায়যায়দিন

জিআই পণ্য হিসবে স্বীকৃতি পেল লাল মাটির মধুপুর গড়ের ইতিহাস ঐতিহ্যের আনারস। লাল মাটির অঞ্চল হিসেবে যেমন মধুপুরের নাম রয়েছে তেমনি আনারসেরও রয়েছে ইতিহাস ঐতিহ্য ও সুনাম। দীর্ঘ দিন পরে হলে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় সমতল এলাকা মধুপুরের ঐতিহ্যবাহী অন্যতম অর্থকরি ফসল আনারস হওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক ভাবে ভাবমূর্তি বেড়ে গেল বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। একটা আশার জায়গা তৈরি হলো। চাষাবাদে গুণগত পরিবর্তন ও বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ভৌগোলিক নির্দেশক ইউনিট গত ২৪ সেপ্টেম্বর মধুপুরের আনারস জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি সনদ প্রদান করেছে। শিল্প মন্ত্রনালয়ের পেটেন্ট,শিল্প-নকশা টের্ডমার্ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মুমিন হাসান স্বাক্ষরিত ৩১ শ্রেনীতে জিআই-৫২ নম্বরে মধুপুরের আনারস কে ভৌগোলিক নির্দেশক সনদ প্রদান করে। 

জানা যায়, বাংলাদেশে সর্ব প্রথম আনারস চাষের গোড়াপত্তন হয় ১৯৪২ সালে। মধুপুরের ইদিলপুর গ্রামের ক্ষুদ্র নৃতাত্তি¡ক গারো সম্প্রদায়ের মিজি দয়াময়ী সাংমা প্রথম আনারস চাষ শুরু করেন। তিনি ভারতের মেঘালয়ের আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে সেখান থেকে ৭৫০টি চারা এনে তাঁর বাড়িতে আনারস চাষ শুরু করেন। সেই চাষকে সমৃদ্ধ করে বতর্মানে বিভিন্ন অঞ্চলে আনারস চাষ হয়েছে। 

জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সাবেক সভাপতি অজয় এ মৃ বলেন, মধুপুরে প্রথম আনারসের চাষ শুরু হয় ইদিলপুর গ্রামে। এর পর থেকেই আনারস চাষের বিস্তৃতি ঘটে। ঐতিহ্য ধরে রাখতে আনারস চাষ জৈবিক উপায়ে করার পরামর্শ তার। 
সিআইপি কৃষক গারো বাজারের ছানোয়ার হোসেন বলেন, মধুপুরের আনারস যেভাবে চাষাবাদ বাজারসহ প্রভৃতি হওয়ার কথা ছিল তা আশানুরূপ হচ্ছিল না। ভৌগোলিক নির্দেশক হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় একটা আশার জায়গা তৈরি হলো।  আনারসের ইতিহাস ঐতিহ্য দেশ এবং বিশ্বে  বহুগুণ বেড়ে গেল। মধুপুর উচ্চতায় যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরো যাবে বলে তিনি মনে করেন। 
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাকুরা নাম্মী বলেন, জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া মানে ভৌগোলিক নির্দেশক। আনারস তো মধুপুর ছাড়াও সিলেট, পার্বত্য এলাকা ছাড়াও আরো বিভিন্ন জন্মে থাকে। এখন আনারস মানে দেশে এবং বিশ্ব বাজারে মধুপুরের আনারস হিসেবে পরিচিতি পাবে। তিনি বলেন, আনারস আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানির যে চেষ্টা চলছিল, সেই সম্ভাবনার দ্বার এখন খুলে গেল। 

কৃষি বিভাগের ঢাকা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক আহসানুল বাসার বলেন, দেশের অন্যতম একক বৃহত্তর উপজেলা মধুপুর। মধুপুরের আনারসের নিজস্ব ঐতিহ্য রয়েছে। হানিকুইন জায়েন্টকিউ ও জলডুগি আনারসের মিষ্টতা আলাদা। স্বাদ ঘ্রাণও বেশি। যে এলাকায় ৭ হাজার হেক্টরেরও বেশি আনারস চাষ হয়। জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য। এ জন্য তিনি গর্ব বোধ করছেন বলে জানান তিনি। 

মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জুবায়ের হোসেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে দেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের জিআই স্বীকৃতিলাভ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মধুপুরের আনারসের জিআই জার্নালের জন্য অনুমোদিত হওয়াটা মধুপুরবাসীর জন্য অত্যন্ত আনন্দ ও গর্বের একটি ঘটনা। মধুপুরের আনারস সারা দেশেই জনপ্রিয়। এখন বিশ্ববাসীও এর সাথে পরিচিত হলো। এর ফলে বিশ্বে মধুপুরের আনারসের বাজার সৃষ্টি হবে।

যাযাদি/ এসএম