বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১

চট্টগ্রামে গান গেয়ে যুবককে পিটিয়ে হত্যা : হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সূত্র ধরে ৩জন গ্রেপ্তার

চট্টগ্রাম ব্যুরো
  ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৬:৫৫
ছবি : যায়যায়দিন

চোর সন্দেহে চট্টগ্রাম নগরের আখতারুজ্জামান উড়াল সেতুর নিচে ২ নম্বর গেট মোড় এলাকায় দুটি খুঁটির সঙ্গে দুই হাত বেঁধে ‘মধু হই হই আরে বিষ হাওয়াইলা’ গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নেচে-গেয়ে শাহাদাত হোসেন (২৪) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত নগরের ২ নম্বর গেট এবং শিল্পকলা একাডেমি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সূত্রে জানা যায়, ভ্যানচালক শাহাদাত হোসেনকে পিটিয়ে নির্দয়ভাবে হত্যায় জড়িতরা ‘চট্টগ্রাম ছাত্র জনতা ট্রাফিক গ্রুপ’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। অভিযানে ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটির অ্যাডমিন এবং এ হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী জুয়েল (৪২), একই গ্রুপের সদস্য মো. সালমান (১৬) এবং আনিসুর রহমান ইফাতকে (১৯) গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ জানায়, সরকার পতনের পর ভাসমান ব্যবসায়ী ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী জুয়েল তৈরি করেন একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। সেটির নাম দেন ‘চট্টগ্রাম ছাত্র জনতা ট্রাফিক গ্রুপ’। সেই গ্রুপের সদস্য ১৩০ জন। জুয়েল তার পরিচিত সার্কেলের মানুষদের ওই গ্রুপটিতে যুক্ত করেন। ওই গ্রুপেই নিহত শাহাদাতকে পেটানোর আগে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ভিডিওটা দেওয়া হয়। তখন গ্রুপে বলা হয় একজনকে ধরা হয়েছে যিনি মোবাইল চোর বা ছিনতাইকারী। তাকে মারতে হবে সবাই আসেন। এরপর একে একে দলে দলে গিয়ে তাকে পেটানো হয়।

সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পিআর) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, মূলত ঘটনাটি ঘটেছিল গত ১৩ আগস্ট। ঘটনার পর ভিকটিম শাহাদাতের লাশ তারা প্রবর্তক মোড় এলাকায় ফেলে রাখে। পরে পুলিশ দেখতে পেয়ে লাশটি উদ্ধার করে। এর আগে, কয়েক দফায় গান গেয়ে গেয়ে তাকে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে সে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এরপর ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করে। মামলা দায়েরের পরপরই পুলিশ আসামিদের শনাক্তে কাজ শুরু করে এবং গতকাল টানা চার ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পৃথকভাবে ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আসামিদের জিজ্ঞাবাদের বরাতে তারেক আজিজ বলেন, গ্রেপ্তার তিনজনসহ আনুমানিক ২০ জনের অধিক ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট আছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। পুলিশ বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তবে, আসামিদের সাথে ভিকটিমের কোনো ধরনের পূর্ব পরিচয় ছিল না। ভিকটিমকে ছিনতাইকারী সন্দেহে মারধর করা হয়। এক দলের পর আরেক দল এসে এসে তাকে মারধর করে।

এডিসি তারেক আজিজ বলেন, চট্টগ্রাম ছাত্র জনতা ট্রাফিক গ্রুপের এডমিন ফরহাদ আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বেই এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে। তবে সে কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত নয়। তবে বিভিন্ন ভাসমান ব্যবসা করে। আরেক আসামি যার বয়স ১৬, নাম সালমান। সে আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশু। সেও কিন্তু ছাত্র নয়। সে ঘুরেফিরে বেড়ায় মূলত। আর আনিসুর রহমান ইফাত নামে যাকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি সে চান্দগাঁও এলাকার একটি কলেজের ছাত্র।

অতিরিক্ত উপ-কমিশনার তারেক আজিজ বলেন, গ্রুপটি ছাত্র জনতার নাম দিয়ে অপকর্ম করে বেড়াচ্ছিল। সরকার পতনের পরে ট্রাফিকিংয়ের জন্য পুলিশের অনুমোদনকৃত কোনো ট্রাফিক গ্রুপ ছিল না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে উদ্যোগী হয়ে অনেকে ট্রাফিকিংয়ে সহায়তা করেছে। কিন্তু তারা এই গ্রুপের সদস্য নয়।

প্রসঙ্গত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ২০ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, গান গাইতে গাইতে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা এক যুবককে পিটিয়ে মারছে কয়েকজন ব্যক্তি। গত ১৪ আগস্ট এ ঘটনা ঘটলেও জানাজানি হয় সম্প্রতি। মারধরে মৃত্যুবরণকারী যুবকের নাম মো. শাহাদাত হোসেন (২৪)। তাঁকে নগরের আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের নিচে ২ নম্বর গেট এলাকায় বেঁধে রাখা হয়েছিল। তিনি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি থানাধীন পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামের বাসিন্দা। তার পিতা ওই এলাকার মিয়া জান ভূঁইয়া বাড়ির মৃত মোহাম্মদ হারুন।

শাহাদাত নগরের বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে থাকতেন এবং ফলমণ্ডিতে একটি দোকানে চাকরি করতেন। ১৪ আগস্ট রাতে প্রবর্তক এলাকা থেকে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ১৫ আগস্ট শাহাদাতের চাচা মো. হারুন বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে