যায়যায়দিনে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর

রবিকুলের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিলেন প্রবাসী জুয়েল

প্রকাশ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫৯

পূর্বধলা (নেত্রকোণা) প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

যায়যায়দিনে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী মো. রবিকুল ইসলাম ইয়াসিনের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিলেন আমেরিকা প্রবাসী আমানুর রশিদ জুয়েল। এর মাধ্যমে এসএসসিতে জিপিও ৫ পাওয়া মেধাী শিক্ষার্থী রবিকুলের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার আর কোনো প্রতিবন্ধকতা রইল না। এতে রবিকুল খুশি। খুশি হয়েছেন রবিকুলের পরিবার।

এসএসসি পরীক্ষা ২০২৪ এর ফল প্রকাশের পর গত ১৮ মে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকায় ‘দারিদ্রের সাথে সংগ্রাম করে এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে রবিকুল’ এই শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদে উঠে আসে দিনমুজুর বাবার অভাবের সংসারে অনেক কষ্ট করে রবিকুলের লেখা পড়ার কথা। রবিকুলরা ৪ ভাই ১ বোন। বাবা সারাদিন কাজ করে যা আয় করতেন তা দিয়ে তাদের সংসার চালানোই দায় ছিল। পরিবারের এমন দারিদ্রতার মাঝেও লেখাপড়া বন্ধ করেনি অদম্য শিক্ষার্থী রবিকুল ইসলাম ইয়াসিন। পূর্বধলা জগৎমণি সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে যখন ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৭ম শ্রেনি উত্তীর্ণ হয় তখন আর্থিক অনটনের কারনে লেখা পড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবাকে সহযোগিতা করার জন্য সে রাজমিস্ত্রির সহকারীর কাজ নেয়। পরবর্তীতে এতে ক্লাসের সমস্যা হলে স্কুল বন্ধের সময়ে ভ্যানগাড়ি চালানোর কাজ বেছে নেয়। এভাবে দারিদ্রের সাথে সংগ্রাম করে এসএসসিতে বাণিজ্য বিভাগ থেকে রবিকুল জিপিএ ৫ পায়। সে পূর্বধলা উপজেলা সদর ইউনিয়নের হিড়িভিটা গ্রামের দিনমজুর মরম আলীর পুত্র। ভালো ফলাফলে পরিবারের সদস্য, বিদ্যালয়ের শিক্ষক, সহপাঠী সবাই খুশি হলেও আর্থিক অনটনের কারনে ভালো কলেজ ভর্তি হয়ে লেখা পড়া চালিয়ে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এই বিষয়টি যায়যায়দিনে তুলে ধরা হলে পূর্বধলার বাসিন্দা বর্তমান আমেরিকা প্রবাসী আমানুর রশিদ জুয়েলের নজরে আসে। তিনি তার পরিবারের মাধ্যমে ফোনে যোগাযোগ করে ববিকুলের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাওয়ার কথা রবিকুলকে জানিয়ে দেন। এতে রবিকুলের পরিবার খুব খুশি হয়। রবিকুল বর্তমানে ময়মনসিংহ শহরের আনন্দমোহন কলেজে এইচএসসিতে বাণিজ্য বিভাগে লেখাপড়া করছে। তার খরচ বাবদ প্রতিমাসে তাকে ৫হাজার টাকা করে দিচ্ছেন প্রবাসী জুয়েল।    

এক প্রতিক্রিয়া শিক্ষার্থী রবিকুল ইসলাম বলেন, এসএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়ার পরও আর্থিক অনটনের কারনে আমার লেখাপড়া যখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছিল, ভাল কোন কলেজে ভর্তি হওয়ার সাহস পাচ্ছিলাম না তখন আমার পাশে দাঁড়ান প্রবাসী আমানুর রশিদ জুয়েল ভাই। এই জন্য আমিসহ আমার পরিবার তার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সেই সাথে আমার এই বিষয়টি যায়যায়দিনে প্রকাশের মাধ্যমে উনার দৃষ্টি আকর্ষন করায় যায়ায়দিন পত্রিকার প্রতিনিধি ও কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। 

পূর্বধলা জগৎমণি সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগের সহকারী শিক্ষক মো: আব্দুস সালাম মন্ডল জানান ছেলেটি নিতান্তই একজন দরিদ্র পরিবারের সন্তান এবং খুব মেধাবী। সে অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেও এসএসসিতে জিপিএ ৫ পায়। পরে তার দারিদ্রতা লেখা পড়া চালিয়ে যাওয়ার বাঁধা হয়ে দাঁড়ালে তার পাশে দাঁড়ান প্রবাসী জুয়েল। তিনি প্রত্যাশা করেন সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের এমন দরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর।

প্রবাসী আমানুর রশিদ জুয়েল মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, টাকার অভাবে একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর লেখাপড়া বাধাগ্রস্ত হবে সেটা হতে দেওয়া যায় না। সেই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই রবিকুলের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছি এবং আশা করছি ছেলেটি ভবিষ্যতে ভাল করবে।

যাযাদি/ এসএম