বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১

রূপসায় ভারী বৃষ্টিতে প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি, হুমকির মুখে বেড়িবাঁধ

আ. রাজ্জাক শেখ, রূপসা (খুলনা)
  ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪৭
ছবি: যায়যায়দিন

গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে রূপসার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত এ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ফসলি জমি, চিংড়ি ঘের, মাছের ঘেরসহ পানের বরজ মালিকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে পানি নেমে গেলেও ফুটে উঠেছে ক্ষতির চিহ্ন। আর এ সকল মালিকদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পুষিয়ে নিজেদের কাটিয়ে উঠতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সব কিছু নতুন করে ঠিকঠাক করতে দুর্ভোগ বেড়েছে তাদের। তারা জানিয়েছেন এখনো এ ব্যাপারে সরকারি কোনো সহযোগিতা পায়নি ক্ষতিগ্রস্তরা। এদিকে বেশিরভাগ এলাকা থেকে নেমে গেছে জমে থাকা পানি।

তবে উপজেলার ঘাটভোগে বেশকিছু এলাকা এখনও প্লাবিত আছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, গত টানা তিনদিনের অতি বর্ষণে রূপসা উপজেলার সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ঘাটভোগ ইউনিয়নে। ভুক্তভোগীর সাথে আলাপকালে জানা যায়, ঘাটভোগ ইউনিয়নের পিঠাভোগ, ধোপাখোলা, গোয়ালবাড়ির চর গ্রামের প্রায় দেড় শতাধিক পানের বরজ পানির নিচে তলিয়ে যায়। তিনটি গ্রামে ফসলি জমি ও মৎস্য ঘেরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বিপুল পরিমাণ। নরনিয়া, বিল মৌভোগ, বড়জ্বালা, পুটিমারি বিলে এমন কোনো ঘের নাই যা পানির নিচে নিমজ্জিত হয়নি।

পিঠাভোগ গ্রামে জিল্লাল পাইক জানান, তার দশ শতাংশ জমির উপর অবস্থিত পানের বরজ সম্পূর্ণ তলিয়ে গিয়ে প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। তেমনি একই গ্রামের মাধব রায়, জগদীশ রায়, আসাদ শেখ, গোয়ালবাড়িচর গ্রামের হাফিজুর ভূইয়ার পানের বরজের একই পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পিঠাভোগ গ্রামের কৃষক শক্তিপদ বসু জানান, ৫ বিঘা জমির উপর মিশ্র মৎস্য চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। প্রবল বর্ষণে তার দুটি ঘেরই পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গলদা এবং সাদা মাছ ভেসে গেছে৷ এতে করে তার ৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

কৃষক তেমনি একই গ্রামের শিবপদ মজুমদারের ১২ বিঘা, বিশ্বজিত পালের ১৫ বিঘা,তাপস পালের ৩ বিঘা, নজরুল শেখের ৩ বিঘা,ধোপাখোলা গ্রামের সঞ্জয় বিশ্বাসের ৩ বিঘা, সনজিত বিশ্বাসের ২ বিঘা, গোয়ালবাড়িচর গ্রামের নাদের আলী ভূইয়ার ৩ বিঘা এবং বাবুল শেখের ২ বিঘা জমিতে অবস্থিত মৎস্য ঘের পানিতে নিমজ্জিত হয়ে মৎস্য ঘেরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে পিঠাভোগ, ধোপাখোলা এবং গোয়ালবাড়ির চর এলাকায় অবস্থিত দেড় শতাধিক ঘেরে প্রায় ৯০ লক্ষ টাকা এবং পানের বরজে ৫০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তেমনি উক্ত ঘেরের পাড়ে চাষকৃত শসা, করোলা, উচতা, তরমুজ, রকমিলন, ঝিঙ্গা, লাউ, কুমড়া, খুশি সহ বিভিন্ন প্রকার সবজি পানিতে তলিয়ে গিয়ে সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়েছে। ঘাটভোগ ইউনিয়নের ডোবা গ্রামের ইউপি সদস্য সমর মন্ডল জানান, নরনিয়া এবং বড়জ্বালা বিলে অবস্থিত পাঁচ হাজার একর মৎস্য ঘের এবং নতুনদিয়া এবং ডোবায় অবস্থিত দুই শতাধিক একর পানের বরজ পানিতে তলিয়ে বিপুল পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়া গোয়াড়া, শিয়ালি ,বামনডাঙ্গা, চাঁদপুর, বলটি,বান্দাখাল, সিন্দুরডাঙ্গা, ঘাটভোগ, নারকেলি চাঁদপুর, পুটিমারি, আনন্দ নগর, আলাইপুর সহ বিভিন্ন গ্রামে কৃষক, মৎস্যচাষী এবং পান চাষিদের ক্ষতির পরিমান বিপুল।

অপরদিকে রূপসা উপজেলার টিএসবি ইউনিয়নের তিলক, পাথরঘাটা, পাঁচানী,কাজদিয়া, তালতলা, গিলাতলা, গোয়ালবাথান এলাকায় মৎস্যচাষী, সবজি চাষী এবং পানচাষীদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়া নৈহাটী ইউনিয়নের জাবুসা,শ্রীরামপুর বিল, বাগমারা বিল,পদ্মবিল সকল মৎস্যঘের পানিতে নিমজ্জিত হয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অপরদিকে আইচগাতী ইউনিয়নের দূর্জনীমহল,শ্রীফলতলা ইউনিয়নের বাধাল, ডোমরা, ভবানীপুর এলাকায় অবস্থিত পান বরজ, সবজি ক্ষেত এবং মৎস্য ঘের সহ বড় বড় পুকুর বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তেমনি উপজেলায় বিভিন্ন এলাকার বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল। এতে কাঁচাঘর ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

এছাড়া বেড়িবাঁধগুলো নিয়ে রয়েছে আতংকের মুখে। যে কোন সময় ভেঙে গিয়ে প্লাবিত হতে পারে ফসলে কৃষি জমি। যদিও এ ব্যপারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো জানানো হয়নি।

তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, টানা বর্ষণে শসা, তরমুজ,পানবরজ সহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে