মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

ছেলেকে সতর্ক করে পিতাই মৃত্যুর শিকার

পূর্বধলা (নেত্রকোণা) প্রতিনিধি
  ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৬
ছবি: যায়যায়দিন

বাহিরে আন্দোলন চলতাছে। আন্দোলনে গুলাগুলিতে মানুষ মরতাছে। তাই ঘর থেকে বের হইয়ো না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ৫ আগস্ট সকালে একমাত্র ছেলে সন্তানকে এভাবেই সতর্ক করেছিলেন পিতা। এরপর ওই দিন মধ্যরাতেই একটি ফোনকলের মাধ্যমে জানতে পারেন তার পিতা গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছেন। পিতার এমন খবরে পরিবারের লোকজন হত বিহবল হয়ে পড়েন। বাহিরে থমথমে পরিস্থির মুখে বের হতে পারছিলেন না।

অনেক কষ্ট করে হাসপাতালে গিয়ে তাকে মুমুর্ষূ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। মুখে অক্সিজেন লাগানো। চিকিৎসক জানালেন তিনি বুকে ও হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাকে বাঁচানোর জন্য রক্তের প্রয়োজন। পরে রক্ত পাওয়া গেলেও তাকে আর বাঁচানো গেল না। ৬ তারিখ ভোর ৬টার দিকে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। বৈষ্যম্যবিরোধী আন্দোলনে একজন শ্রমজীবি পিতার মৃত্যু কথা এভাবেই বর্ণনা করছিলেন একমাত্র পুত্র সন্তান মো: কামাল হোসেন। মৃত্যুর শিকার তার পিতার নাম মো: রমজান আলী (৪০)। তার গ্রামের বাড়ী নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের দুধী গ্রামে। পরে ওই দিনই বিকেলে নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে পিতার পাশে তার লাশ দাফন করা হয়। পরিবারের লোকজন জানায়, রমজান আলী পেশায় একজন কাঠ মিস্ত্রি ছিলেন। কাজের সুবাধে তিনি স্ত্রী পুত্রকে নিয়ে ঢাকার বাড্ডা এলাকার পোস্ট অফিস গলিতে থাকতেন। তার আর এক কন্যা সন্তানকে নিয়ে রমজান আলীর মা গ্রামের বাড়ীতেই থাকতেন। তিনবোন ও ১ ভাইয়ের মধ্যে রমজান আলী ছিলেন সবার ছোট। ছোটবেলা থেকেই দারিদ্রের সাথে কঠিন সংগ্রাম করে তিনি যখন পরিবাবের কিছুটা স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনছিলেন তখনই বুলেটের গুলি তার প্রাণ কেড়ে নেয়। তার এমন মৃত্যুতে পরিবার ও এলাকাবাসী হতবাক। প্রায় ২০-২৫ বছর যাবত ঢাকায় অবস্থান করে কাঠমিস্ত্রিসহ অন্যান্য কাজ করে আসছেন তিনি। স্ত্রী গৃহকর্মী হিসেবে তাকে সহযোগিতা করে আসছিলেন। ছেলে সন্তানকে মাদরাসায় লেখাপড়া করিয়ে ঢাকা একটি কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। মেয়েকে গ্রামের বাড়ীতে একটি মাদরাসায় বোর্ডিং এ রেখে লেখাপড়া করাচ্ছেন।

গত মঙ্গলবার দুধী গ্রামের নিজ বাড়ীতে গিয়ে দেখা গেছে বাড়ী পাশের পিতার কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন রমজান আলী। বাড়ীতে সুন্দর হাফবিল্ডিং ঘরটি জনশুন্য হয়ে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। স্থানীয় বাসিন্দা মো: রতন মিয়া জানান, প্রায় ২০-২৫ বছর যাবত বউকে নিয়ে ঢাকায় কাজ করে অনেক কষ্ট করে গত বছর নিজের হাতে এই ঘরটি নির্মাণ করেছেন। এর জন্য অনেক টাকা ঋণও করেছেন। তিনি অত্যন্ত সহজ সরল প্রকৃতির একজন লোক ছিলেন। এত কষ্ট করে ঘর নির্মাণ করে সেই ঘরে বেশিদিন থেকে যেতে পারলেন না।

রমজান আলীর স্ত্রী গৃহকমী নূরুননাহার জানান, প্রতিদিনের মত ৫তারিখ সকালে তিনি কাজের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়ে কর্মস্থল মেরুল বাড্ডার দিকে যান। পরে সন্ধার পরও ঘরে না আসলে ভাবছিলেন ওভারটাইমের কাজ করছিলেন। কিন্তু রাতে হঠাৎ তার গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর আসে। পরে হাসপাতালে গিয়ে তাকে গুলিবিদ্ধ মুমুর্ষূ অবস্থায় পেলেও তাকে আর বাঁচানো যায়নি। তার মৃত্যুতে আমার সব শেষ হয়ে গেছে। বাড়ীতে ঘর করতে গিয়ে অনেক টাকা ঋণ করে ফেলেছিলাম এখান জানিনা সেই ঋণ কিভাবে শোধ করব। কারোকাছ থেকে কোন সহযোগিতা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকায় জামায়াতের নেতারা ১লক্ষ টাকা ও ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু সহযোগিতা পেলেও সরকারীভাবে কোন সহযোগিতা বা খোঁজখবর কেউ নেয়নি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: খবিরুল আহসান বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকায় পূর্বধলার এক শ্রমজীবি ব্যক্তি মারা যাওয়ার বিষয়টি দুইদিন আগে একজনের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। তবে কিভাবে মারা গেছেন এর বিস্তারিত তথ্য এর আগে কেউ কোন কিছু জানায়নি। বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে পুলিশ তদন্ত করছে।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে