রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১

কুমিল্লা মডার্ণ হাই স্কুলে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন 

স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা
  ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১:০৩
ছবি : যায়যায়দিন

কুমিল্লা মডার্ণ হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনে বাধা ও তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের নিকট অভিযোগ দেয়াসহ অবৈধভাবে একজনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করার ঘটনায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সরকার পতনের পর সাবেক এমপি বাহার চক্র প্রধান শিক্ষক একেএম আক্তার হোসেনকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করতে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামিয়েছে।

অধিকাংশ শিক্ষকদের অভিযোগ আন্দোলনের নেপথ্যে আছেন বাহার পন্থী কয়েকজন এমপিওভুক্ত সিনিয়র শিক্ষক ও খন্ডকালীন কিছু শিক্ষক। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমে স্থবিরতা নিরসন করে শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে রোববার জেলাপ্রশাসন ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে।

এদিকে প্রায় ৮ বছর আগে সাবেক এমপি বাহারের নির্দেশে বিদ্যালয়টির ১৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী চাকুরীচ্যুত হলেও তারা আজও কর্মস্থলে ফিরতে পারেননি।

এদিকে প্রায় ৮ বছর আগে সাবেক এমপি বাহারের নির্দেশে বিদ্যালয়টির ১৯ জন শিক্ষক কর্মচারী চাকুরীচ্যুত করা হলেও তারা এখনো কর্মস্থলে বহাল হতে পারেননি। চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের অভিযোগ বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজল খান পন্থী হওয়ার অপরাধে সাবেক এমপি বাহার অন্যায়ভাবে তাদের চাকুরীচ্যুত করেছিলেন।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৩ সালে এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠাতা করেন প্রয়াত প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজল খান এডভোকেট। এতে দিবা ও প্রভাতী শাখায় শিক্ষার্থী আছে প্রায় ৮ হাজার। এমপিওভুক্ত ৪৫ জন এবং নন এমপিওভুক্ত ৯০ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন।

২০১৬ সালে তৎকালীন সদর আসনের এমপি আ ক ম বাহা উদ্দিন নিজের পছন্দ মতো বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি দিয়ে আফজল খান পন্থী ১৯ জন এমপিওভুক্ত ও খন্ডকালীন শিক্ষক কর্মচারীকে চাকুরীচ্যুত করেন। দীর্ঘ দিন তারা আইনী মোকাবেলা করে চাকুরী ফিরে পাওয়ার প্রক্রিয়া করলেও বাহারের নির্দেশের কারণে তারা চাকুরীতে যোগদান করতে পারেননি।

এদিকে সরকার পতনের পর বিদ্যালয়ের বর্তমান বাহারপন্থী শিক্ষকদের একটি অংশ প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষককে চাকরীচ্যুত করতে তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে রাস্তায় নামান। এ সময় ক্লাশ বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে অংশ নেন।

শিক্ষকরা জানান, বিদ্যালয়ের দিবা শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক রাসেল উদ্দিন মজুমদারের পদত্যাগের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। একই সময়ে প্রধান শিক্ষক আক্তার হোসনের পদত্যাগের দাবি উঠে। সাবেক এম পি বাহারের ঘনিষ্ঠ সহকারী শিক্ষিকা সৈয়দা রোকেয়া বেগমকে অবৈধভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিতে তার সহযোগী বেশ কিছু শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে প্রধান শিক্ষক এ.কে.এম আক্তার হোসেন ও সহকারী প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে পদত্যাগে বাধ্য করতে আন্দোলন শুরু করেন। প্রধান শিক্ষক আক্তার হোসনের ভাষ্য ‘অবৈধভাবে সৈয়দা রোকেয়া বেগম ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেন। তিনি (রোকেয়া) তার অনুসারী সহকারী শিক্ষক আরিফুর রহমান, নীলিমা আক্তার, আবু তাহের, জাহাঙ্গীর আলম, প্রবীর রঞ্জন, মাহফুজুর রহমান, জসিম উদ্দিন ও কামরুল হাসানসহ বেশ কয়েকজন নন এমপিও শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে রাস্তায় বের করিয়েছেন। এতে তিনি কর্মস্থলে যেতে পারছেন না। এদিকে সাবেক এমপি বাহারের নির্দেশে চাকরীচ্যুতরা দায়িত্বে ফিরতে এরই মধ্যে আইনী প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।

চাকুরীচ্যুতরা হচ্ছেন, সহকারি শিক্ষক মো. শহীদুল ইসলাম, মো. কামাল হোসেন, প্রিয়লাল মজুমদার, আসমা খানম, মানিক চন্দ্র ভৌমিক, তাহমিনা স্মৃতি, আয়েশা ইয়াসমিন, বোরহান উদ্দিন, দিদার ই ইলাহী,সাইফুল ইসলাম, তাসনিম আহমেদ, মো. আবদুল বাছির,আল আমিনসহ আরও ৫ জন অফিস স্টাফ।

চাকুরীচ্যুতদের মধ্যে সিনিয়র সহকারি শিক্ষক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, এমপি বাহারের নির্দেশে তার গঠিত কমিটি আমাদের অন্যায়ভাবে চাকুরীচ্যুত করার প্রায় ৮ বছর কেটে গেছে। চাকুরী ফিরে পেতে আদালত, বোর্ড, শিক্ষা অফিসসহ স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছি, বাহারের ভয়ে কেউ সহায়তা করেনি।

আদালতের চিঠির কিংবা নির্দেশনারও তারা বাস্তবায়ন করেনি। সাবেক এমপি বাহার তার অনুসারী প্রয়াত সিটি মেয়র আরফানুল হক রিফাতকে কাজে লাগিয়ে রিফাতের ভগ্নিপতি তৎকালীন কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমিন ভ‚ইয়ার মাধ্যমে অবৈধভাবে এমপিভুক্ত ও খন্ডখালীন শিক্ষকদের চাকুরীচ্যুতির বৈধতা দিয়ে ছিলেন। বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের এই সময়ে আশা করি ন্যায় বিচার পাবো এবং চাকুরীতে ফিরতে পারবো।

প্রধান শিক্ষক একেএম আক্তার হোসেন বলেন, সরকার পতনের পর থেকেই সাবেক এমপি বাহার পন্থী কিছু শিক্ষকদের ইন্ধনে আমাকেসহ কয়েকজন শিক্ষককে পদত্যাগে বাধ্য করতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামানো হয়। আমি কোন অনিয়ম ও দুর্নীতি করে থাকলে তা জেলা প্রশাসন কিংবা বোর্ড কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে।

কিন্তু তদন্তের আগেই জোরপূর্বক পদত্যাগে স্বাক্ষর করিনি, কর্মস্থলেও যেতে পারছি না, ছুটিতে আছি। তিনি আরও বলেন, আন্দোলনকারী ননএমপিও শিক্ষকদের অধিকাংশেরই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, নিয়োগপত্র, রেজুলিউশন ও যোগদানপত্র নেই।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা বলেন, আন্দোলনের সময় বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি ছিল না। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক অনুপস্থিত ছিলেন। তাই গত ১৮ আগস্ট শিক্ষকরা গোপন ভোটে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। ছাত্রদেরকে ইন্ধন দিয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামানোর বিষয়টি সঠিক নয়।

কুমিল্লা জেলাপ্রশাসক ও বিদ্যালয়টির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকসহ বিভিন্ন বিষয়ে কিছু অভিযোগ এসেছে। এসব বিষয়ে তদন্তের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা আক্তার জ্যোতিকে আহবায়ক করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হচ্ছেন জেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। কমিটির প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে