জনগণের নজর কাড়ছে খুলনার ভ্রাম্যমাণ ‘নিরাপদ কৃষি বাজার’

প্রকাশ | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৩

খুলনা অফিস
ছবি : যায়যায়দিন

জনগণের নজর কাড়ছে খুলনার ভ্রাম্যমাণ ‘নিরাপদ কৃষি বাজার’। কৃষকদের উৎপাদিত নিরাপদ সবজি, ফলমূল ও কৃষিপণ্য সরাসরি ক্রেতাদের পৌঁছে দিতে এমন উদ্যোগ। সপ্তাহে একদিন শহরের প্রাণ কেন্দ্র শিববাড়ি মোড়ে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ট্রাকে করে বিক্রি করা হচ্ছে এই নিরাপদ কৃষিপণ্য। এতে ক্রেতাদের সাড়াও পাচ্ছে তারা।  

খুলনা মহানগরীতে ভ্রাম্যমাণ এই নিরাপদ কৃষি বাজার বসানো হয়। বটিয়াঘাটা উপজেলার কৃষকদের কৃষিপণ্য একত্রিত করে মৈত্রী কৃষক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এই ভ্রাম্যমাণ বাজারে সরাসরি ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হয়। এতে সহযোগিতা করছে লোকজ।  

কৃষকরা জানান, নিরাপদ কৃষি বাজারে মিলছে উচ্ছে, কাঁচা মরিচ, ঝিঙা, ধুন্দল, কাঁচা পেঁপে, ডিম, পাকা কলা, কাঁচা কলা, ঢেরস, কচু, কচুর লতি, কলার মোচা, পুঁইশাক, কুষি, লাউ, কুমড়া, আমড়া, শশা, ওল কপি, চাল কুমড়া, বাতাবী লেবু, করলাসহ ৩০ পদের ফলমূল ও সবজি।

বটিয়াঘাটা সুকতারা গ্রামের কৃষক শ্যামল সরকার বলেন, সব ধরনের পণ্য এনেছি আমরা। প্রথম দিন হিসেবে যে বেচা-কেনা হয়েছে তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। আশা করছি সামনে আরও বেশি বেচা-কেনা হবে। অননেক ক্রেতা আসছে বেচা-কেনা ভালো হয়েছে।  

ক্রেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, আমি স্থানীয় একটি বাজার থেকে সবজি কিনে বাসায় যাওয়ার সময় এখানে ট্রাকে নিরাপদ সবজি দেখে এসেছি। বাজার থেকে যে সবজি কিনেছি, সেই তুলনায় এখানে দাম অনেক কম। বাজারে ৬৫ টাকা করে ঝিঙা, এখানে ৩০ টাকা করে। সবজিগুলোও ভালো।

মৈত্রী কৃষক ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক বিভাষ মন্ডল বলেন, গ্রামের সাধারণ কৃষকরা সবজি উৎপাদন করে। কিন্তু বাজারে তারা ন্যায্য দাম পায় না। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য মধ্যস্বত্ব ভোগীদের মাধ্যমে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানো দাম এবং আমাদের বিক্রিত দামের ব্যাপক পার্থক্য থাকে। এই বৈষম্য দূর করা, পাশাপাশি গ্রামের কৃষকদের নিরেট জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত বিষমুক্ত সবজি বাজারে সেই রকম নেই। বাজারের যেটা পাওয়া যায় সেটি চাষিদের বড় বড় ফার্মে তৈরি করে বিক্রি করা হয়।

ওইসব সবজিতে প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক ও বিষ ব্যবহার করা হয়। যেটা খেয়ে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মানুষের নিরাপদ সবজি খাওয়ার কোন উপায় থাকে না। সেই কথা চিন্তা করে আমাদের ফেডারেশনের অনেক কৃষক রয়েছে যারা জৈব কৃষি পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন করে। সেটি যদি আমরা শহরের মানুষের কাছে উপস্থাপন করতে পারি, আমরা নিরাপদ জৈব গ্যাসের মাধ্যমে সবজি উৎপাদন করি যেটা বিষমুক্ত, রাসায়নিক ও কীটনাশক মুক্ত। সেটা খেলে মানুষের ক্ষতি হবে না। মানুষের মধ্যে যদি এই আস্থাটা তৈরি করা যায় তাহলে অবশ্যই মানুষ এই নিরাপদ সবজি খাবে। নিরাপদ সবজিটা খেলে তার ওষুধ খরচ কমে যাবে। পাশাপাশি কৃষক একটা ভালো দাম পাবে।

তিনি বলেন, শহরে আজ শুরু করেছি, এর আগে বটিয়াঘাটে এলাকায় কয়েকবার বিক্রি করা হয়েছে। শহরে কয়েকবার ছোট পরিষদের শুরু করেছিলাম, তবে আজ থেকে বড় পরিসরে শুরু করেছি। এটা  নগরীর শিববাড়ি মোড়ে প্রতি বিকালে বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিক্রি করবো। মানুষ যদি এটা গ্রহণ করে তাহলে পরবর্তীতে সপ্তাহে দুই দিন অথবা তিন দিন করব। আমাদের ইচ্ছা নিরাপদ কৃষি বাজারটা শুধু শিববাড়ি নয়, আরও মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়া।

মৈত্রী কৃষক ফাউন্ডেশনের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, ৩০টি কৃষক সংগঠনের কৃষকরা আমাদের ফাউন্ডেশনের সাথে জড়িত। তারা এই নিরাপদ সবজি উৎপাদন করে এবং বাজারে বিক্রি করে। এখানে দামের একটু তফাৎ আছে, আমরা ৩৫ টাকা কজিতে পাইকারি উচ্ছে বিক্রি করি, এখানে ৪৫-৫০ টাকায়ও বিক্রি করছি। এই টাকাটা আমাদের কৃষকরা পাচ্ছে। এই সজির সাদও আলাদা এবং মানুষের স্বাস্থ্য সম্মত খাবার। ভোক্তা সরাসরি কৃষকের হাত থেকে কিনতে পারছে। এ জন্য আমরা এই উদ্যোগটি গ্রহণ করেছি।

যাযাদি/ এসএম