গাছের ডাল মইরা মইরা পড়ে, মানুষ দুঃখ পায়! ভাঙে দোকান ঘর

প্রকাশ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩:১৪

পূর্বধলা (নেত্রকোণা) প্রতিনিধি
ছবি : যায়যায়দিন

গাছগুলো প্রায় ২০০ বছরের পুরান। গাছের ডাল পালায় মরন ধরছে। আর গাছের ডাল মইরা মইরা পড়ে। মানুষ দু:খু পায়। ভাঙ্গে গাছের নীচের দোকান ঘর। আর এজন্য মানুষকে সারাক্ষন ভয়ে থাকতে হয়। নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার বিশকাকুনী ইউনিয়নের সরিস্তলা বাজারে প্রায় ২০০বছরের পুরোনো ৬টি রেইন্ট্রি গাছ সম্পর্কে এই ভাবেই অভিব্যক্তি প্রকাশ করছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল গফুর বাচ্ছু।

সরেজমিনে দেখা গেছে সরিস্তলা বাজার পুরোটাই ছেয়ে রেখেছে ৬টি রেন্ট্রি গাছ। গাছের আকার আকৃতিই স্বাক্ষী দিচ্ছে গাছ গুলো বেশ পুরুনো। বিশাল আকারের গাছের প্রতিটি ডালপালা ঘিরে রেখেছে পরগাছা জাতীয় গাছ। আর ডালের অধিকাংশগুলোতেই মরন ধরেছে। আর এসব মরে যাওয়া ডাল সময়ে সময়ে ভেঙ্গে নীছে পড়ে। এজন্য মানুষকে আতংকে থাকতে হয়। 

সরিস্তলা বাজারে প্রায় ৪০ বছর যাবত ব্যবসা করে আসছেন ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার। তিনি জানান, সরিস্তলা বাজারটি প্রায় ৩ একর ৭৩ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। এখানে ছোট বড় প্রায় ৭০ থেকে ৮০টি দোকান রয়েছে। সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার এখানে হাট বসে। গাছগুলি সম্পর্কে বলেন, লোকমুখে শোনেছেন গাছগুলির বয়স প্রায় ২০০বছরের কাছাকাছি হবে। গাছগুলির বয়স বেশি হওয়ার কারনে এর ডালগুলি মরে যাচ্ছে। আর এসব মরে যাওয়া ডাল ঝড়-বাদলে ভেঙ্গে পড়ে। এতে নীচের দোকান পাঠ ভেঙ্গে মানুষ আহতের ঘঠনাও ঘটে। এজন্য আমাদের আতংকে থাকতে হয়। তাই তিনি গাছ গুলি কেটে ফেলার দাবী জানান।

আর এক ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বলেন, ছোটবেলা থেকেই গাছগুলিকে এমন বিশাল আকৃতির দেখে আসছি। বর্তমানে গাছগুলি খুবই ঝুঁকিপূর্ন হয়ে পড়েছে। এই গাছগুলির বতর্মান বাজার মুল্য রয়েছে প্রায় ৩০ থেকে ৪০লাখ টাকার মত। গাছগুলি কাটা হলে এখানকার ব্যবসায়ী ও বাজারে কেনাকাটা করতে আসা লোকজন ঝুঁকি মুক্ত হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পূর্বধলা উপজেলা পরিষদ চত্বরে ৫টি, জালশুকা বাজারে ১টি ও ভিকুনিয়া বাজারে ১টি, হোগলা বাজারে ১টিসহ এমন বেশ কয়েকটি পুরাতন গাছ রয়েছে। যেগুলি প্রত্যেকটি ঝুঁকিপুর্ণ গাছে পরিনত হয়েছে। 

পূর্বধলা মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির আহমেদ খান কামাল জানান, যে কোন জাতীয় দিবস পালনের জন্য শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্তরে যেতে হয়। কিন্তু উপজেলা পরিষদ চত্ত¡রের পুরুনো গাছগুলির ডাল পালা মরে যাওয়ায় এ সকল মরা ডাল ভেঙ্গে শিক্ষার্থীদের উপরে পড়ে দুর্ঘটনার আশংকায় থাকতে হয়। তাছাড়া গুরুত্বপুর্ন দপ্তর হিসেবে প্রতিদিনই এখানে লোক সমাগম থাকে। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে মরে যাওয়া এই গাছগুলো কেটে ফেলার জন্য তিনি দাবী জানান।

পূর্বধলা পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক  রাশেদ খান সুজন বলেন, গাছ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। যে কোন সরকারি গাছ কাটার ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ রয়েছে। কিন্তু এই পুরোনো গাছ গুলি যেহেতু বয়সের কারনে ঝুকিপুর্ন হয়ে পড়েছে তাই এই গাছ গুলি যথাযথ প্রক্রিয়ায় কেটে নতুন করে গাছ লাগিয়ে দেয়া যেতে পারে।
 
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: খবিরুল আহসান জানান, সরকারি গাছ কর্তনের বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। বর্তমান পরিপত্র অনুযায়ী ঝড়ে পড়ে যাওয়া, মরে যাওয়া গাছ কাটার বিধান রয়েছে। তবে বয়স পূর্ণ হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ গাছ কাটার স্পষ্ট কোন নির্দেশনা নেই। উপজেলা পরিষদের গাছগুলি মৃতপ্রায় থাকায় পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কর্তন করে নিলামে বিক্রয়ের অনুমতির জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।

যাযাদি/ এসএম