মাদ্রাসায় ঢুকে শিক্ষক কর্মচারীদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

প্রকাশ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩:৪১

নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

পিরোজপুর নেছারাবাদের ব্যাসকাঠী পাটিকেলবাড়ী নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ঢুকে শিক্ষক কর্মচারীদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে গুয়ারেখা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কুদ্দুস শিকদারের বিরুদ্ধে।

সোমবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মাদ্রাসার লাইব্রেরীতে এই ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উক্ত দাখিল মাদ্রাসার ইবতেদায়ী শাখার সহকারী শিক্ষক রেশমা আক্তার। 

সরেজমিনে জানা যায়, তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির আয়-ব্যয়ের হিসাব, নিয়োগ সংক্রান্ত ঘুষ বাণিজ্যের লেনদেন, সর্বশেষ নিয়োগপ্রাপ্ত তিনজন শিক্ষকের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর না দেয়ার দাবিতে কুদ্দুস শিকদারের নেতৃত্বে স্থানীয় লোকজনকে সাথে নিয়ে মাদ্রাসায় ঢুকে একাধিক শিক্ষকদের লাঞ্ছনা হেনস্থার এ ঘটনা ঘটে। এতে শিক্ষকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নেছারাবাদ উপজেলার ব্যাসকাঠি পাটিকেলবাড়ি নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসার ইফতেদায় শাখার লাইব্রেরীতে গত ১০ সেপ্টেম্বর দুপুরে এলাকার সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুদ্দুস শিকদারের নেতৃত্বে প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন লোক আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে প্রবেশ করেন। এবং মাদ্রাসার শিক্ষক কর্মচারীদের উপর চড়াও হয়। তারা উত্তেজিতভাবে অতীতের সকল নিয়োগের জন্য টাকা পয়সা দাবি করে এবং চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী মোঃ রহমত হোসেনকে মারতে উদ্ধত হয়। এ অবস্থায় মাদ্রাসায় এক ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং ছাত্র শিক্ষকের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তখন অভিযুক্ত চেয়ারম্যান কুদ্দুস শিকদারের ছেলে শাকিল শিকদার সহকারী শিক্ষক রেশমা আক্তারকে চর থাপ্পড় মেরে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেয় এবং অকথ্য ভাষায় গালিগাজ, তুই-তোকারি ও মানহানিকর শব্দ উচ্চারণ করে।

লাঞ্ছিত হওয়া কাম-কম্পিউটার শিক্ষক মোঃ রহমত হোসেন বলেন, আমি প্রতিদিনের ন্যায় অফিসে বসে কাজ করছিলাম। হঠাৎ লাইব্রেরীতে ঢুকে আমাকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করতে থাকেন। আমি স্বাভাবিকভাবেই তাদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলাম। কিন্তু স্থানীয় যুবক শাকিল শিকদার আমাকে স্কুলে না আসার জন্য হুমকি দেয় এবং পরবর্তীতে যেন হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর না দেই তার জন্য নিষেধ করেন। 

সহকারী শিক্ষিকা রেশমা আক্তার জানান, দুই বছর আগে সকল নিয়মকানুন মেনেই এই মাদ্রাসায় তিনজন কর্মচারীরা নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছে। স্থানীয় সাবেক চেয়ারম্যান কুদ্দুস শিকদারের দাবি ওই সময়ের তিনজনের নিয়োগে অর্থনৈতিক লেনদেন হয়েছে। সর্বশেষ নিয়োগ প্রাপ্তদের কাছ থেকে জোর করে নিয়োগের সময় টাকা দেবার স্বীকারোক্তি আদায় করার চেষ্টা করে। সেই কারণে বারবার তারা কোন টাকা দিয়েছি কিনা জিজ্ঞেস করছিল। তখন টাকার কথা অস্বীকার করায় এবং আমি প্রতিবাদ করায় আমার সাথে এবং অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে অন্যায় আচরণ সহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়েছিল। শিক্ষক ও কর্মচারীদের পক্ষ থেকে এই ধরনের আচরণের বিচার চেয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে অভিযোগ দিয়েছি।

এবিষয়ে অভিযুক্ত সাবেক চেয়ারম্যান কুদ্দুস সিকদারের মুঠোফোনে কল দিলে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। পরে ঐদিন তার সঙ্গে থাকা ছেলে শাকিল শিকদার জানায়, আমরা মাদ্রাসায় গিয়ে বিগত বছরের মাদ্রাসার হিসেব চেয়েছিলাম। সম্প্রতি পাঁচ লক্ষ টাকার বরাদ্দের হিসাব চেয়েছিলাম। এবং সভাপতি বলেছিলো মঙ্গলবারের মধ্যে হিসেব দিবে কিন্তু দেয়নি। সর্বশেষ নিয়োগপ্রাপ্ত ৩জন কত টাকার বিনিময়ে চাকরি পেয়েছে এটা জিগ্যেস করেছিলাম। তবে কাউকে হুমকি ধামকি বা লাঞ্চিত করা হয়নি।

মাদ্রাসার সুপার মাওলানা রফিকুল ইসলাম জানান, স্থানীয়দের অভিযোগ সর্বশেষ তিনজন শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে ঘুষ লেনদেন হয়েছে। আমার জানামতে এই মাদ্রাসায় নিয়োগ সম্পূর্ণ বিধি মোতাবেক হয়েছে এবং কোন ধরনের অর্থনৈতিক লেনদেন হয়নি। স্থানীয়রা নিয়োগপ্রাপ্তদের কাছে জোর করে টাকা দেওয়ার স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করছিলেন। এ বিষয়ে মাদ্রাসার বর্তমান সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়ের কাছে মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে একটা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। মাদ্রাসার সংশ্লিষ্ট সকলে জিগ্যেস করেছিলাম তারা জানালো নিয়ম কানুন মেনেই নিয়োগ হয়েছিল। মাদ্রাসায় গিয়ে ঝামেলা না করে অভিযোগকারীরা আমার কাছে একটা লিখিত দিতে পারতো। মাদ্রাসায় গিয়ে ঝামেলা করা ঠিক হয়নি। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

যাযাদি/ এসএম