বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতাল ষ্টোরের মালামাল চুরি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র!

খুলনা অফিস
  ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮:৫৫
ছবি যাযাদি

খুলনা শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের ষ্টোর রুম থেকে মালামাল চুরি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র, এমনই অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালের কতিপয় কর্মকর্তা, কর্মচারী, নার্স এই চক্রের সাথে জড়িত। তবে অভিযুক্তরা সকলেই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন তাদের বিরুদ্ধে একটি মহল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ২১ মে হাসপাতালের পরিচালক ১২ ক্যাটাগরি অসংখ্য মালামাল ষ্টোরে কম/বেশি রয়েছে, তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়ে স্টোর কিপারকে চিঠি দেন এবং ঘটনা তদন্তে কমিটি হয়। তবে তদন্তের এই ঘটনা আলোর মুখ দেখেনি।

সূত্র জানায়, খুলনা শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের ষ্টোর রুম থেকে অতিরিক্ত ৪০০ লিটার স্পিরিট পায় ইনভেন্টরি কমিটি। তখন কমিটির কাছে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি স্টোর কিপার মাসুদ পারভেজ।

এঘটনায় ২০২২ সালের ১১ মে ইনডোর কমিটি লিখিতভাবে হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ শেখ আবু শাহীনকে অবহিত করেন। একই বছর ২১ মে স্টোর কিপারকে লিখিতভাবে কৈফয়েত তলব করেন পরিচালক। তবে ২৪ মে তারিখে স্টোর কিপারের প্রদত্ত জবাব সন্তোষজনক হয়নি। তাই ২০২২ সালের ৭ জুন ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি স্টোরে কর্মরত কর্মচারীদের স্বাক্ষ ও প্রমাণের ভিত্তিতে জানতে পারে, পূর্ববতী বছরের ক্রয়কৃত ২৪০০ লিটার স্পিরিট বিভিন্ন বিভাগে সরবরাহকালে মাপে কম দিয়ে ৪০০ লিটার অসৎ উদ্দেশ্যে জমা রাখে।

সূত্র আরও জানায়, অতিরিক্ত ৪০০ লিটার স্পিরিট পরবর্তী বছরের কার্যাদেশে কৌশলে অন্তর্ভূক্তি করা হয়। এছাড়া ‘‘প্রকৃতপক্ষে উক্ত ৪০০ লিটার স্পিরিট ঠিকাদার সরবরাহ করেছে দেখিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ও ষ্টোর কিপার যোগসাজসে এই ৪০০ লিটার স্পিরিট যার মূল্য ৬/৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার ফন্দি আটেঁন। তবে তাদের এই অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হয়নি। তবে ঘটনাটি অজ্ঞাত কারণে ধামাচাপা পড়ে। ফলে তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। হাসপাতালে জোর গুঞ্জন ওঠে আরএমও ডাঃ প্রকাশ চন্দ্র দেবনাথ এবং পরিচালক ডাঃ শেখ আবু শাহীন অর্থের বিনিময়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেন।

সূত্র জানিয়েছে, হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স তহমিনা খাতুন পরিচালকের নিকটজন। সঙ্গত কারণে হাসপাতালের মালামাল চুরির সাথে জড়িত থাকলেও সর্বদা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন তিনি।

সিনিয়র স্টাফ নার্স তহমিনা খাতুন যায়যায়দিনকে বলেন, পরিচালক সাহেব অত্যন্ত ভালো মানুষ। তিনি আমার নিকটজন নন। আমার বিরুদ্ধে একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করছে। ইতোপূর্বে তার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ এনেছিলেন ওই মহল। তিনি আক্ষেপ করে জানান, দীর্ঘদিন ধরে তাকে বিএনপি-জামায়াত আখ্যা দিয়ে ইনচার্জের দায়িত্ব থেকে সরাতে মহল বিশেষ লিপ্ত আছে।

এঘটনায় স্টোর কিপার মাসুদ পারভেজ যায়যাযদিনকে বলেন, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। মূলত: করোনা মহামারীতে ওই ৪০০ লিটার স্পিরিট অনুদান হিসেবে একটি ফার্ম হাসপাতালকে দেন। যার কারণে তদন্ত কমিটি এঘটনায় নেতিবাচক প্রতিবেদন দেয়নি। অথচ সূত্র জানিয়েছে, তালিকাভূক্ত ঠিকাদার রাইসা এন্টারপ্রাইজের মালিক রাবেয়া বেগম হলেও ঠিকাদার মোজাম্মেল অনুদানে স্পিরিট দিয়েছেন বলে দেখানো হয়।

আরএমও ডাঃ প্রকাশ চন্দ্র দেবনাথ জানান, তখন ষ্টোরে বাড়তি স্পিরিট ছিল। স্পিরিটের মতোন অনেক পণ্য গণনার সময় কম-বেশি হয়ে থাকে। যা পরবর্তীতে আমরাই সমন্বয় করে নেই। এখানে অর্থ লোপাট বা অন্য কোন বিষয় নেই।

পরিচালক ডাঃ শেখ আবু শাহীন বলেন, তখন অতিরিক্ত ৪০০ লিটার স্পিরিট পায় ইনভেন্টরি কমিটি, এটা সত্য। তবে প্রাপ্ত স্পিরিট বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করার অভিযোগটি সঠিক নয়। এছাড়া সিনিয়র স্টাফ নার্স তহমিনা খাতুন চুরি করে পার পেয়ে যায় তথ্যটিও সঠিক নয়। তার বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্টাল মামলা হয়েছে। মোটকথা তার সন্মান হানি করতেই ভুল তথ্য সরবরাহ করে বিভ্রান্তি করার অপচেষ্টা চলছে।

যাযাদি/এসএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে