মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

ফুলবাড়ীতে মাছের সুটকীর স্বাদের সিঁধেল তৈরির ঐতিহ্য আজও বিরাজমান

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
  ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১:২৪
ছবি : যায়যায়দিন

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার জনপদে স্বাদে ভরা মাছের সিঁধেল তৈরি ও তা সংরক্ষণেরর ঐতিহ্য আজও বিরাজমান রয়েছে। এখানকার মানুষেরা বর্ষা মৌসূমে নদী-নালা খাল-বিল থেকে মাছ সংগ্রহ করে তা রোদে শুকিয়ে সিঁধেল নামের অমৃত স্বাদের তরকারি আজও তৈরি করছেন।

অন্যান্য বারের মতো এবারও বর্ষা মৌসূমে এখানকার সিঁধেল প্রেমী মানুষেরা নদী-নালা ও খাল-বিলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করেন। তারা শিকারকৃত মাছ রোদে শুকিয়ে সুটকী করে তা কাঠের তৈরি ধান ভানা গ্রাম্য হাত যন্ত্র (উড়–ন-গাইন) এর সাহায্যে গুড়ো করে সিঁধেল তৈরি করছেন।

জানা গেছে, বর্ষা শেষ হওয়ার পর কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার নদী-নালা ও খাল-বিলে পানি কমে যায়। এই সুবাদে এখানকার মানুষরা মাছ শিকারের যন্ত্র হাত জাল, ফাঁসি জাল, চটকা জাল দিয়ে মাছ শিকার করেন।

অনেকে আবার পানি কম থাকা খাল-বিলের পানি সেচে ওই স্থান থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করেন। শিকারকৃত মাছ গুলো তারা গৃহিণীদের মাধ্যমে কাটা-বাছানোর পর তা রোদে শুকিয়ে সুটকী করেন। এই শুকনো সুটকী গুলো গ্রাম্য ধান ভানা কাঠের যন্ত্র (উড়–ন-গাইন) এর সাহায্যে গুড়ো করে সিঁধেল তৈরি করেন।

পুটি মাছের সুটকী থেকে সব চেয়ে সিঁধেল ভালো হয়। সিঁধেল তৈরিতে উপাদান হিসেবে আরও ব্যবহার করা হয় কচুর ডাটা, শরিষার তেল ও হলুদ। এগুলো একসঙ্গে মিশিয়ে আলু ভর্তার মতো করে সিঁধেল তৈরি করা হয়। আলু ভর্তা স্বাদৃশ্য সিঁেধল গুলো মুটো করে দীর্ঘদিন সংরক্ষণে রাখার জন্য তা রোদে কয়েকদিন শুকানো হয়।

এ উপজেলার ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পাড়া, নাগদাহ ও কিষামত প্রাণকৃষ্ণ ও বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্ব-পশ্চিম ধনিরাম গ্রামের গৃহিণীরা সিঁধেল তৈরি ব্যস্ত সময় পাড় করছেন।

নাগদাহ গ্রামের সিঁধেল প্রেমী নাজমুল হুদা জানান, বর্ষা মৌসূম আসলেই আমরা খাল-বিল থেকে মাছ শিকার করে সু-স্বাদু সিঁধেল তৈরি করে থাকি। এবার তিনি তার বাড়ির পাশের খাল-বিল থেকে মাছ শিকার করে প্রায় ৫ কেজি পুটি মাছের সুটকী থেকে সিঁধেল তৈরি করতে তার স্ত্রীকে সহযোগিতা করেছেন।

স্থানীয় চেয়ারম্যান পাড়ার গৃহিণী আরেফীন মোস্তারী জানান, এবার বর্ষা মৌসূমে বাজার থেকে কিনে নেয়া ৫ কেজি পুটি মাছ থেকে তিনি কয়েকটি সিঁধেলের মুটো তৈরি করেছেন। এগুলো সিঁধেল রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করেছেন। সিঁধেল অমৃত স্বাদের মতো তরকারি হওয়ায় তিনি সিঁধেল দিয়ে পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাড়িতে আসা মেহমানদের সন্তুষ্ট করছেন।

কিষামত প্রাণকৃষ্ণ গ্রামের সবুজ মিয়া জানান, স্বাদের তরকারি সিঁধেল তৈরির ঐতিহ্য তার গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে বিরাজ করছে। এবার নদী-নালা, খাল-বিল থেকে শিকার করা প্রায় ২০ কেজি পুটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ থেকে তার পরিবারের লোকজন এক সপ্তাহের ব্যবধানে কয়েকটি সিঁধেলের মুটো তৈরি করেছেন।

চন্দ্রখানা গ্রামের খায়রুল হাসান জানান, সিঁধেল এমন একটি ঐতিহ্যের তরকারি যা দেখলে খাওয়ার জন্য জিহবায় পানি আসে। এই সিঁধেলের ঐতিহ্য ফুলবাড়ীতে যুগযুগ ধরে বিরাজমান। এটার ঐতিহ্য এ গ্রামে বিরাজ করবে বলেও জানান তিনি।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে