মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

পাট চাষ করে লোকসানের মুখে পড়েছে কৃষকরা, দাম বাড়ানোর দাবি

ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
  ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৪০
ছবি : যায়যায়দিন

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় চলতি মৌসুমে পাটের চাষ করে লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকরা। বাজারে পাটের যে দর, তাতে লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। গত মৌসুমেও পাটের দাম পাননি, এবারও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। পাট বিক্রি করে খরচের টাকা উঠছে না। এতে প্রতিবিঘা পাট চাষে লোকসান হচ্ছে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা। তাই সরকারের কাছে পাটের দাম বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন চাষিরা। ভেড়ামারা উপজেলায় এ বছর ৩১৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ কম হয়েছে।

ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ভেড়ামারা উপজেলায় ৪ হাজার ২ শত ৯০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেন। এ বছর ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ভেড়ামারা উপজেলায় ৩৯ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এ বছর ৩১৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ কম হয়েছে। ফলনের লক্ষ্যমাত্রা প্রতি বিঘায় ৮ মণ ধরা হলেও ফলন হচ্ছে ৫ মণ থেকে ৬ মণ।

জানা গেছে, পাট চাষে আগের তুলনায় এবার খরচ বেড়েছে। মজুরির ব্যয়, সার, কীটনাশক ও বীজসহ চাষাবাদের খরচ বেড়েছে। সব মিলিয়ে প্রতি বিঘা পাটের উৎপাদন খরচ প্রায় ১৪ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় পাট উৎপাদন হচ্ছে ৫ থেকে ৬ মণ। এক মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১০০টাকা থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায়। এতে প্রতি বিঘা পাট চাষে লোকসান হচ্ছে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা।

লোকসানে পড়া পাট চাষিরা বলেন, সার, বিষ, মজুরির ব্যয়, জমি লিজ খরচসহ সবকিছুর দাম বাড়ে। কিন্তু পাটের দাম বাড়ে না। পাট চাষের খরচ বেড়েছে, ফলনও তুলনামূলক কম। এতে লোকসানে পড়েছেন পাট চাষিরা।

কৃষক মসলেম উদ্দিন বলেন, আমার ৩ বিঘা জমিতে পাটের বীজ, সার, কীটনাশক, মজুরির ব্যয়, লিজ খরচ ও পুকুর ভাড়া দিয়ে মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। পাট উৎপাদন হয়েছে ১৬ মণ। ২ হাজার ২০০ শত টাকা দরে ১৬ মণ পাট বিক্রি করে ৩৫ হাজার ২ শত টাকা হয়েছে। আমার ৪ হাজার ৮শত টাকা লোকসান। পাট চাষের খরচ বেড়েছে, কিন্তু দাম বাড়েনি। এজন্য আমার মতো সব পাট চাষির লোকসান হচ্ছে। পাটের দাম বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছি। যে ফসলে লোকসান, সেই ফসল উৎপাদন বন্ধ করে দেবে কৃষক। পাট চাষে লাভবান না হওয়ায়, চাষিরা পাট চাষ কমিয়ে দিয়েছে। পাটের দাম না বাড়লে আমিও আর পাট চাষ করবো না।

পাট চাষি ছানোয়ার হোসেন বলেন, পাট চাষ করে আমাদের পোষাচ্ছে না। গত বছর লোকসান হয়েছে, এবারও লোকসানে পড়েছি। পাটের দাম খুব কম। আমার মতো প্রায় সব পাট চাষির লোকসান হচ্ছে। বাজারে ২১০০ থেকে ২৩০০ টাকা মণ পাট বিক্রি হচ্ছে। এবার পাটের চাহিদাও কম। ব্যবসায়ীরা পাটের প্রতি তেমন আগ্রহী না। পাট চাষিদের প্রতি সরকার নজর দিক, দাম বৃদ্ধি করে দিক। লোকসানের ঝুঁকি নিয়ে আগামীতে অনেকেই পাট চাষ করা বন্ধ করে দেবে। কারণ, গত বছরে লোকসানে পড়া অনেক কৃষক এবার পাট চাষ করেনি। দাম না বাড়লে, আমিও আগামীতে পাট চাষ করবো না।

পাট ব্যবসায়ী তাহের উদ্দিন বলেন, পাট চাষি ও ব্যবসায়ীরা ভালো নেই। পুরাতন পাট গোডাউনে ভরা। অনেক ব্যবসায়ী বিগত মৌসুমের পাট বিক্রি করতে পারেনি। এজন্য এ বছর ঝুঁকি নিচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে ২০০০ থেকে ২৩০০ টাকা মণ পাট কেনা-বেচা চলছে। পাট চাষি ও ব্যবসায়ীরা উভয়েই বিপাকে পড়েছে। কৃষকদের লোকসান হচ্ছে, খরচের টাকাও তুলতে পারছে না তারা। চাষিরা লোকসানে পড়ে পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহমুদা সুলতানা বলেন, গত বছর দাম না পাওয়ায় চাষিরা পাট চাষে আগ্রহ কমেছে। সরকার ধান, চাল, গম, ভুট্টা, চিনি ও সার ছয়টি পণ্য মোড়কীকরণে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। এখন পাটজাত পণ্যের চাহিদা রয়েছে। কৃষক যেন ভালো দাম পান, এ জন্য সরকার বিদেশে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং পাটের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য নতুন আইন করেছে। এ বছর তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং খরার কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাট চাষ কম হয়েছে। পাট চাষের বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে নতুন জাতের বীজ, সার, প্রণোদনা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করা হচ্ছে। আমরা কৃষকদের পাশে থেকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছি।

কুষ্টিয়া জেলা মুখ্য পাট পরিদর্শক সোহরাব উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, গত বছরে পাট চাষিরা লোকসানে পড়েছিলেন। এ কারণে পাট চাষ কমেছে। এ ছাড়াও খরার কারণে অনেকে পাট চাষ করেনি। পাট উৎপাদনে খরচ বেশি হচ্ছে চাষিদের। পাটের দাম বাড়ানো উচিত। একই সঙ্গে পাট রপ্তানি ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে হবে। চলতি মৌসুমে প্রতিমণ পাটের দাম ২১০০-২৩০০ টাকা। পুরাতন পাট ব্যবসায়ীরা বিক্রি করতে পারেননি। চাষিদের মতো ব্যবসায়ীরা লোকসানের ঝুঁকিতে রয়েছে। এজন্য পাট ক্রয়ে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কম। এবার পাট চাষিদের লোকসান হচ্ছে, দাম অনেক কম।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে