মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

ভোলায় বেড়েছে নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর, মৃত্যু ৪

হাসপাতালে ঔষধ ও বেডসহ নানান সংকট
স্টাফ রিপোর্টার, ভোলা
  ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯:৪০
ছবি : যায়যায়দিন

হঠাৎ করেই বেড়েছে ভোলায় নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা। প্রতিদিনই সদর হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে অর্ধ শতাধিকেরও বেশি শিশু। আর রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। এদিকে রোগীর চাপ বেরে যাওয়ায় হাসপাতালটিতে দেখা দিয়েছেন ঔষধ, ক্যানোলা, নেবুলাইজার মাক্স ও স্যালাইন সংকট।

এছাড়াও ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হওয়ায় এক বেডে গাদাগাদি করে ২/৩ জন করে রোগী চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। বেড না পেয়ে বেশি ভাগই হাসপাতালের মেজেতে বসেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে শিশুদের।

শুক্রবার (৬ সেম্পেম্বর) বিকেলে ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গত কয়েকদিন ধরেই ভোলায় নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বেডের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বেড না পেয়ে বেশি ভাগ শিশুই হাসপাতালের মেজে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যারা বেড পাচ্ছেন তারা এক বেডে ২/৩ জন শিশু গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এতে করে নানা সমস্যায় পরতে হচ্ছেন রোগী ও তাদের স্বজনদের।

ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের জংশন গ্রামের নাজমা বেগম ও ধনিয়া ইউনিয়নের নাদিয়া সুলতানা জানান, তাদের সন্তানদের নিউমোনিয়া হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। কিন্তু বেড সংকট থাকায় এক বেডে ২/৩ জন করে শিশু রেখে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এতে করে এক বেডে ২/৩ জন বাচ্চা থাকলে বাচ্চার মারা কিভাবে থাকে। বেডে আমরা মায়েরা একটু বসতেও পারি না। অনেক কষ্টে বাচ্চাদের চিকিৎসা করােেনার জন্য থাকতে হচ্ছে বলে জানান তারা।

ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে মেজে ও বেডে চিকিৎসা নেওয়া শিশুদের স্বজন নুর জাহান বেগম, সবিতা রানী ও মো: জসিম উদ্দিনসহ একাধিকরা জানান, দিনে একবার একজন ডাক্তার আসেন বেড ও মেজেতে ভর্তি হওয়ায় শিশু রোগীদের দেখতে। তাও আবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত। এছাড়াও নার্সরা ঠিকমত আসেন না আমাদের সন্তানদের সমস্যা দেখতে। তাদের অনেক ডাকাডাকি করলে তারপর আসেন।আবার অনেক সময় নার্সদের বেশি ডাকা-ডাকি করলে রাগা-রাগি করেন। বাধ্য হয়ে বেশি ভাগ সময়ই বাচ্চাদের নার্সদের কাছে নিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়।

দৌলতখান পৌর এলাকা থেকে ভোলা সদর হাসপাতালে আসা শিশুর রোগীর মা লাইজু বেগম ও লালমোহন উপজেলার চর উম্মেদ ইউনিয়ন থেকে আসা শিশু রোগীর মা আসমা আক্তার জানান, তাদের ৬ মাস ও ৫ মাসের বাচ্চাদের নিউমোনিয়া হওয়ায় ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্তু কোন বেড না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে হাসপাতালের মেজেতে বিছানা পেতে শিশু সন্তানের চিকিৎসা করাচ্ছেন। তাদের মত শত শত মা হাসপাতালে বেড না পেয়ে মেজেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে প্রচন্ড গরমে তাদের ও সন্তানদের সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু কিছুই করার নেই বলে নিরুপায় হয়ে এখন এভাবে সন্তানকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

তারা আরো জানান, হাসপাতালে ডাক্তার ঔষধ, ক্যানোলা, নেবুলাইজার মাক্স লিখে দিয়েছে। আর নার্সরা বলছে সেগুলো হাসপাতালে নেই বাহির থেকে কিনে আনতে। তাই টাকা দিয়ে বাহিরের ফার্মেসি থেকে কিনতে হয়েছে।

ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার নবজাতক ও শিশু চিকিৎসক ডা: আবদুল মজিদ শাকিল জানান, আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট থাকায় দৈনিক একজন করে চিকিৎসক শিশু রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। বেশি পরিমান শিশু রোগী থাকায় অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসা দিতে গিয়ে। তারপরও আমরা ধর্যসহকারে শিশুদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি।

হাসপাতালটির নার্স সুপার ভাইজার নাছিমা বেগম জানান, তাদের নার্সের সংকট রয়েছে। তাই রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। তারপরও প্রয়োজনীয় সেবা তারা দিয়ে যাচ্ছেন। তবে একটি শিশুর চিকিৎসা সেবা দেওয়ার সময় অন্য শিশুদের মায়েরা ডাকাডাকি করেন। ওই সময় তো চিকিৎসা সেবা শেষ না করে আসা সম্ভব নয়। এজন্য রোগীর স্বজনদের আমাদের প্রতি অনেক অভিযোগ থাকে।

ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্তাবধায়ক ডা: মো: ইমতিয়াজ বেলাল হাসপাতালে ঔষধ, ক্যানোলা, নেবুলাইজার মাক্স ও স্যালাইন সংকটের কথা স্বীকার করে জানান, হঠাৎ নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত এটি সমাধান করা চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়াও চিকিৎসক ও নার্স সংকটের কথা কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে ।

তবে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে গত ১৫ দিনে ৭৫০ জন শিশু ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা গেছেন ৪ জন শিশু।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে